কাকলি চ্যাটার্জি: চিন্তন নিউজ: ৬ই মে:– লকডাউনের ৪২ দিন অতিক্রান্ত, লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক কাজ হারিয়ে রাজপথে, মাথার ওপর নেই ছাদ, পকেটে নেই দিন গুজরানের রসদ। কোনো রাজ্যসরকার উদ্যোগী হয়েছে তাঁদের ফিরিয়ে আনার আবার কোনো রাজ্য চাইছে যে যেখানে আটকে আছে সেখানেই থাকুক অথবা নিজেদের খরচে এবং গরজে ফিরে আসুক রাজ্য।
রেলদপ্তর এই বিপুল ব্যয়ভার গ্ৰহণের বিপক্ষে। উল্লেখযোগ্য হল এই শ্রমিকদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কেউ এরকম খবর এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায় নি কিন্তু বিজেপির আই টি সেল প্রচারে নেমেছে এঁদের হাত ধরেই নাকি সংক্রমণ আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। শুধুমাত্র ভাতে মেরেই ক্ষান্ত নয়, নির্বিঘ্নে ঘর পৌঁছনোর পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে এই প্রচার। কোথাও কোথাও নির্বিচারে লাঠিচার্জ করা হয়েছে এই অভুক্ত শ্রমিকদের ওপর।
পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য, তাঁদের আর্থিক, সামাজিক সুরক্ষার দিকে লক্ষ্য রেখে তৈরী হয়েছিল ‘আন্তঃরাজ্য পরিযায়ী শ্রমিক আইন ১৯৭৯ ‘ যে রাজ্য থেকে শ্রমিকরা যাচ্ছেন এবং যে রাজ্যে যাচ্ছেন কাজের নিরিখে উভয় রাজ্যের কাছেই নথিভুক্ত থাকত তাঁদের তথ্য। ছিল ন্যুনতম মজুরি নিশ্চিত করার অধিকার, ছিল ধর্মঘটের অধিকার, খাতায় কলমে ছিল আটঘন্টা কাজের অধিকার, ছিল স্বাস্থ্য নিরাপত্তা।
এখন দেশের ৪৪ টি শ্রম আইন তুলে দিয়ে ৪ টি শ্রম কোড আইন আনতে চলেছে কেন্দ্র। যেখানে পরিযায়ী শ্রমিকদের যেটুকু সামাজিক সুরক্ষা রক্ষিত হ’ত তা তুলে দেওয়া হল। যাঁদের কষ্টের শ্রমে পুঁজিবাদের ইমারত গড়ে ওঠে, সংগঠিত ও অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমশক্তির নির্ণায়ক যাঁরা খর্ব করা হল তাঁদের অধিকার।
এমনিতেই শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে বারংবার, অনেক রাজ্য ই অগ্ৰাহ্য করত এই আইন। যখন শ্রমিক সংগঠনগুলো এই আইনের প্রয়োগ আরও মজবুত করতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে তখন কোভিড১৯ কে হাতিয়ার করে শ্রমিকের এই চরম দুর্দিনে আরও গভীর অন্ধকারে তাদের ভবিষ্যত নিমজ্জিত করতে বদ্ধপরিকর কেন্দ্রের অমানবিক সরকার। অদ্ভুত এক সন্ধিক্ষণ যখন কোনোভাবেই কোথাও সংঘটিত করা সম্ভব নয় জোরদার প্রতিবাদ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অবশ্যই এই শ্রমিক বিরোধী কোড বিল বাতিলের দাবিতে শুরু হবে শ্রমিকের আপোষহীন সংগ্ৰাম।