প্রতিবেদন: মধুমিতা ঘোষ: চিন্তন নিউজ: ১২/০৫/২০২৪:- ২০২৪ এর সংবাদ শিরোনামে নজর কাড়া খবরের আলোচনায় আবার আদানি। তবে এ আর নতুন কথা কি! ২০১৪ থেকে তো ক্ষমতাসীন মোদি সরকারের হাত ধরে ছল-চাতুর্যে একে একে ধাপে ধাপে বন্দর, সড়ক, বিমানবন্দরের মত সরকারি রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোকে করায়ত্ত করবার পর আবার আমজনতার বিরুদ্ধ সমালোচনাকে একপ্রকার বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রেলের মতো কেন্দ্রীয় লাভজনক সংস্থায় এক অদ্ভুত কৌশলে ঢুকে পড়লেন।
এবার আমরা সাধারণ মানুষরা বুঝতে চেষ্টা করি কি সেই কৌশল। এখন সাধারন মানুষ ট্রেনের টিকিট করে থাকেন ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ক্যাটারিং এন্ড ট্যুরিজম কর্পোরেশন বা আই আর সি টি সি এই সরকারি অনলাইন অ্যাপের মাধ্যমে, যাদের সিংহভাগ শেয়ার সরকারের আর বাকি কিছু শেয়ার এলআইসি বা অন্য কোন সরকার পোষিত কোম্পানির ও আমাদের মত কিছু সাধারণ মানুষের ও। ভারতীয় রেলে এই আই আর সি টি সি র পরিষেবা এতদিন ছিল সাধারণ মানুষের বিরাট ভরসা স্থল, কারণ মানুষ সাধারণত ব্যক্তিগত মালিকানার পরিষেবার থেকে সরকারি পরিষেবায় বেশি নির্ভরশীল। ২০২৩ এর মাত্র তিন মাসেই এই আই আর সি টি সি সংস্থা শুধু রেলওয়ে টিকিট বিক্রি করেই কমবেশি ৩০০ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল। পেশাদারিত্বের সাথে বিপুল লভ্যাংশ নিয়মিত সরকারকে তুলে দেওয়ায় এই টিকিট বিক্রি সংস্থাটি মিনি রত্ন কোম্পানি বলে ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে আই আর সিটিসি ছাড়াও paytm মেক মাই ট্রিপ, ট্রেন ম্যান প্রভৃতি অথরাইজড বেসরকারি অ্যাপের মাধ্যমেও প্রয়োজনবোধে সরকারি নির্দিষ্ট টিকিটের দামের থেকে কিছু বেশি দাম দিয়ে রেলের টিকিট কিনতে পারা যায়।
সম্প্রতি আদানির শেয়ারবাজারে দেওয়া এক তথ্য অনুযায়ী জানা যায় যে আদানির কোম্পানি এসিপিএল কিনে নিচ্ছে ” ট্রেন ম্যান” অ্যাপ। রেলের টিকিট বিক্রির অ্যাপটির বর্তমান নিয়ন্ত্রণকর্তা নিশ্চিতভাবেই এবার থেকে হবেন গৌতম আদানি, অর্থাৎ মালিক। তথ্যটি বাজারে আসতেই বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এবং মিন্ট এর সাথে আরো অনেকেই রে রে করে বিরুদ্ধাচরণ শুরু করলেই সরকারি টিকিট বুকিং সংস্থা আই আর সিটিসি সরকারি মদতে মধ্যস্থতা কারীর ভূমিকায় নেমে পড়ল। তাদের মতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় রেলের টিকিট বুকিং এর ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ যে সুবিধা পেত তাই পাবে কারণ ট্রেন ম্যান বুকিং অ্যাপ এই সরকারি টিকিট বুকিং অ্যাপ থেকেই টিকিট কিনে বিক্রি করবে, অর্থাৎ ভারতীয় রেল আদানির হাতে যাচ্ছে না।
কিন্তু আসল ইতিহাস তো আরো দুই এক বছর আগে করোনার সময় থেকে শুরু। ওই সময় ভারতীয় রেলের মত লাভজনক কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা এক কথায় শিশু এবং বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে ভাড়ার হারে ছাড় বন্ধ করে দেয় এবং বেশ কিছু ক্ষেত্রে প্লেনের মতো ফ্লেক্সি ফেয়ার সিস্টেম চালু করে যাতে কোন নির্দিষ্ট ভাড়া থাকে না, যখন যেমন যেদিন যেমন সুবিধা, সেই মতো ভাড়া ধার্য করা যায়। অতএব এই সিদ্ধান্তে আসাই যায় যে আদানি ট্রেনম্যান রেলওয়ে টিকিট বুকিং অ্যাপের মালিক হলেই ক্রমান্বয়ে ভারতীয় রেল কে পুরোপুরি হস্তগত করবেন যার প্রথম ধাপ এই একটি অ্যাপ কেনার মাধ্যমে ই নিশ্চিত করা যায়। অনতিবিলম্বেই আগামী দিনে (এখনই হয়তো তার কিছুটা শুরু বোঝা যায়) সরকারি মিনি রত্ন কোম্পানি টিকিট বুকিং এর ক্ষেত্রে সব টিকিট এই অ্যাপকেই বিক্রি করে নিশ্চিত লাভের অংশ নিজের ঘরে তুলবে আর রেলে যাতায়াতকারী সাধারণ মানুষের অসহায় বিপুল চাহিদার সুযোগ নিয়ে যথেচ্ছ মূল্য হাঁকিয়ে মোদি সরকারের তোষণকারী মদতপুষ্ট আদানি নামক বেনিয়ারা আরো পরিপুষ্ট হতেই থাকবে।
গরিবের কল্যাণে মোদি সরকারের ২০১৪ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত এই দশ বছর বিভিন্ন কাজে আদানি আম্বানিদের হাতে একে একে বন্দর সড়ক বিমানবন্দর ও ভারতীয় রেলকে তুলে দেবার যে এক গভীর চক্রান্ত এবং সাধারণ মানুষকে ভাওতা দিয়ে পকেট কেটেই বিশেষ কয়েকজনের পকেট ভরানো সেই সত্য এখন সবাই বুঝতে শুরু করেছে।