বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

ব্যাপারটা ভাইরাস আতঙ্কটা ভাইরাল (পর্ব ২)


শ্যামল চ্যাটার্জি:চিন্তন নিউজ:২৭শে মে:- এবার আসা যাক আমাদের মূল আলোচ্য বিষয়, করোনায়। নভেল করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯-এ। ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ দিয়ে এই ভাইরাস দেখলে মনে হবে এরা মাথায় মুকুট পরে আছে। ল্যাটিন ভাষায় একে বলে ‘করোনাম’ (Coronam)। গুগলে সার্চ করে আমরা ইতিমধ্যে সেই ছবি দেখে নিয়েছি। যে খোঁচাগুলি দেখছি সেগুলি আসলে স্পাইক গ্লাইকোপ্রোটিন (spike glycoproteins)। এদের মূল কাজ হল মানুষের শরীরে বন্ধু প্রোটিনকে খুঁজে নেওয়া। বাহক কোষের প্রোটিনের সঙ্গে জুটি বেঁধে এরা কোষের মধ্যে ঢুকে পড়া।
CDC (Center of Disease Control and Prevention) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী সেগুলি হল:
১. 229E (আলফা করোনা ভাইরাস)
২. NL63 (আলফা করোনা ভাইরাস)
৩. OC43 (আলফা করোনা ভাইরাস)
৪. HKU1 (বিটা করোনা ভাইরাস)
৫. MERS-CoV (বিটা করোনা ভাইরাস): ২০১২ সালে সৌদি আরবে প্রথমবার এই ভাইরাসের নাম শিরোনামে উঠে এসেছিল। যারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করলে MERS-CoV ঢুকে পড়তে পারে অন্যের শরীরে।
৬. SARS-CoV: ২০০৩ সালে এশিয়ায় এই ভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করেছিল। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপেও ছড়িয়ে পড়েছিল এই মারণ ভাইরাস। বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। তবে ২০০৪ সালের পর এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আর কোনও রিপোর্ট সামনে আসেনি।
৭. SARS-CoV-2: এই ভাইরাসই করোনা ভাইরাস নামে পরিচিত। করোনার CO, ভাইরাসের VI এবং ডিজিসের D নিয়ে হয়েছে COVID-19। ২০১৯ সালে ভাইরাসটি প্রথম ধরা পড়ায় 19। এটি প্রথম চিনের ইউহানে আবির্ভূত হয়।
এই ভাইরাসে যে আতঙ্ক তা হলো মৃত্যু ভয়। WHO এটাকে বিশ্ব মহামারী বলছে। ফলে কিছু খতিয়ে না দেখে বিশ্বাসটা দৃঢ় করেছি। **
আমাদের মনে রাখতে হবে মারণক্ষমতা এবং সংক্রামক ক্ষমতা দুটো আলাদা জিনিস। সাধারণত যে ভাইরাসের মারণক্ষমতা অত্যন্ত বেশি সেই ভাইরাস বিরাট একটা সংক্রামক হয় না, অপরপক্ষে যে ভাইরাস অতিরিক্ত সংক্রামক তাতে আবার খুব বেশি মানুষ মারা যায় না। যেমন ২০০৩-এর সার্স ভাইরাসে মৃত্যুর হার অনেক বেশি ছিল। বেশি মানুষ সংক্রামিত হননি। উল্টোদিকে এই ভাইরাস বিশ্বব্যাপী সকলকে সংক্রামিত করার ক্ষমতা রাখে।
এবার দেখা যাক সংক্রামক আর মারণক্ষমতা ব্যাপারটা কী?
একজন সংক্রামিত ব্যক্তির থেকে কত জন সংক্রামিত হতে পারে। R0 (R naught) দ্বারা সূচিত হয়। WHO এর দাবি অনুযায়ী Covid-19 এর সংক্রমণ ক্ষমতা (R০) ১.৪ থেকে ২.৫ এর মধ্যে এবং মারণ ক্ষমতা বা Fatality Rate (FR) ৩.৪%। ব্যাপারটা যেহেতু অঙ্কের। তাহলে অঙ্ক দিয়েই ব্যাপারটা একটু খতিয়ে দেখা যাক। Covid-19 এর Fatality Rate এর হিসাবে বেশ গড়বড় আছে। কারণ এখানে কেবলমাত্র টেস্টে প্রাপ্ত আক্রান্তের সংখ্যাটাই ধরা হচ্ছে। কোনও লক্ষণ প্রকাশ নেই অথচ Covid-19 এ আক্রান্ত এমন বহু সংখ্যক মানুষকে বাদ দিয়ে গণনা করে Fatality Rate বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছে।
আমাদের এটা মাথায় রাখতে হবে যে WHO-ও কিন্তু এই ষড়যন্ত্রের একজন। হিসেবের গড়বড়টা কোথায় তার তত্ত্বতলাশ করা যাক। আকাশ একটা সুন্দর হিসেব দিয়ে এটা বুঝিয়ে ছিল। সেটাই খুব অল্প পরিবর্তন করে দিচ্ছি।
১০.০৫.২০২০ তারিখ পর্যন্ত ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা 62939 এবং মৃতের সংখ্যা 2,109। অর্থাৎ আনুপাতিক হিসাবে মৃতের হার ৩.৩৫% যা সম্পূর্ণ ভুল।
সহজ হিসাবে আসা যাক। ০১.০৫.২০২০ তারিখ পর্যন্ত ভারতে ৯,০২,৬৫৪ টি টেস্ট করে ৩৫,০৪৩ টি আক্রান্ত পাওয়া গেছে। সুতরাং প্রাপ্ত টেস্ট-কেস আনুপাতিক হার (ETCR=Effective Test-Case Ratio) = (আক্রান্ত / টেস্ট সংখ্যা) = ৩.৮৮%। অর্থাৎ ভারতে ১০০ জনের টেস্ট করা হলে প্রায় ৪ জন আক্রান্ত পাওয়া যাবে।
ভারতের মোট জনসংখ্যা ১৩৮,৭২,৯৭,৪৫২ জন। এবার যদি সব ভারতবাসীর লালারস করা হলে আক্রান্তের সংখ্যা (CTC=Calculated Test-Case)=(মোট জনসংখ্যা × ৩.৮৮%)= ৫,৩৮,৫৭,৯১৭ পাওয়া যাবে। অতএব গাণিতিক হিসাবে প্রাপ্ত আক্রান্তের সংখ্যার(CTC) নিরিখে ০১.০৫.২০২০ তারিখ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১,১৫৪ ধরে এর অনুপাত করলে, Fatality Rate(FR) = (মৃতের সংখ্যা / প্রাপ্ত আক্রান্তের সংখ্যা) =০.০০২% পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ ১লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হলে মৃত্যুর সম্ভাবনা মাত্র ২ জনের।
(চলবে)


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।