দেশ বিদেশ

১৯৭১ এ বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধে পাঁচ মুক্তি যোদ্ধার সমাধির সন্ধান মিলল ত্রিপুরায় ।


গোপা মুখার্জী : চিন্তন নিউজ :৬ই নভেম্বর:- ১৯৭১এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাস ব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে যে সমস্ত বীর যোদ্ধা শহীদ হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অনেকে আজও অবহেলিত, অপাংক্তেয়। নিজের দেশের মাটিতে ঠাঁই টুকু পর্যন্ত তাঁরা পাননি । শুধু বাংলাদেশ কেন , ভারতবর্ষ স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এরকমই চিত্র দেখা যায় ।যুগ যুগ ধরেই বহু সৈনিক তাঁদের আত্মবলিদানের যথাযোগ্য মর্যাদা, সম্মান টুকু পাননি ।

এরকমই কিছু সৈনিক যাঁরা পূর্ব পাকিস্তানের হাত থেকে নিজের দেশকে মুক্ত করার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন তাঁদের পাঁচ জনের সমাধির খোঁজ পাওয়া গেছে ত্রিপুরার ধর্মনগরের কাছে কদমতলা ব্লকের চল্লিশ দ্রোণ এলাকায় । প্রত্যক্ষদর্শী একষট্টি বছরের প্রবীণ শিক্ষক আব্দুল ছবুর তাঁর স্মৃতিচারণায় জানিয়েছেন যে তাঁর যখন বারো বছর বয়স সেই সময় তাঁর বাড়ির সামনের ক্যাম্পেই পরিচয় ঘটে মুক্তি যোদ্ধা ইমাদাদুল স্যারের সঙ্গে । তিনি বালক ছবুরকে স্নেহ করতেন, পড়া দেখিয়ে দিতেন ।বাংলাদেশের সাগরনান এলাকা থেকে দু’জন মুক্তি যোদ্ধার দেহ আনতে গিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের সেনার গুলির আঘাতে মৃত্যু ঘটেছিল লেফটেন্যান্ট কর্ণেল ইমাদাদুল হক স্যারের । শুধু তিনি নন আরও চারজন মুক্তি যোদ্ধার সমাধি খুঁজে পেয়েছেন আব্দুল ছবুর ।

সমাধি ফলকের লেখা অনুযায়ী এঁরা সবাই ছিলেন 8 বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর বেঙ্গল রেজিমেন্ট । একজন হ’লেন কুমিল্লা জেলার গোয়ালপাড়ার সিপাহী মাকমেদ আল,১৯৭১ সালের ১২ অক্টোবর তিনি শহীদ হন । দ্বিতীয় জন কুমিল্লা জেলার বিজয়নগর গ্রামের জওয়ান মহম্মদ জামালউদ্দিন , শহীদ হন ১৯৭১ এর ১৭ই অক্টোবর । তৃতীয় জন কুমিল্লার লেফটেন্যান্ট কর্ণেল ইমাদাদুল হক । তিনি শহীদ হন ১৯৭১ এর ১১ই অক্টোবর । আরও দু’জন মুক্তি যোদ্ধার নামধাম জানা যায়নি কারণ কালের করাল গ্রাসে তাঁদের সমাধিফলক নষ্ট হয়ে গিয়েছে ।

আশার কথা, দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মহম্মদ ইমরান সম্প্রতি ত্রিপুরা সফরে এসে ত্রিপুরার সহকারী হাইকমিশনারের সাথে কথা বলেছেন ত্রিপুরার কোথায় মুক্তি যোদ্ধাদের সমাধি রয়েছে সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার জন্য ।

উল্লেখ্য, ২০০৭ এর ৯ ডিসেম্বর ভারত এবং বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ত্রিপুরার ধলাই জেলার আমবাসা থেকে মুক্তি যুদ্ধের শহীদ হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাঁর দেশে । শিক্ষক ছবুরের তাই প্রত্যাশা, ২০২১ এর মার্চে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হওয়ার আগেই এই পাঁচ শহীদের দেহাবশেষ পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে যেন তাঁদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয় ।এই সম্মান টুকু যেন তাঁরা পান ।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।