জেলা

ন্যায্য প্রতিবাদ ও দাবিতে পিছু হটতে বাধ্য হলো রাজ্য সরকার।


মিঠুন ভট্টাচার্য: চিন্তন নিউজ:১৭ই মে:- সারা রাজ্যের বহু পুরসভা এবং কর্পোরেশনের সঙ্গে শিলিগুড়ি করপোরেশনের মেয়াদ আজ শেষ হ’তে যাচ্ছে এবং এটাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল অতি নাটকিয়তা। যেখানে সারা রাজ্যে যে যে পুরসভায় যাঁরা মেয়র অথবা চেয়ারম্যান আছেন তাদেরকেই প্রশাসক মন্ডলীর চেয়ারম্যান করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেখানে একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল শিলিগুড়ি পৌরনিগম।

রাজ্যে পালাবদলের পর বহু চেষ্টা করেও শিলিগুড়িতে কোন রকম দাঁত ফোঁটাতে পারেনি রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। অন্যান্য জায়গাতে দল ভাঙিয়ে ক্ষমতা দখল করতে সফল হলেও শিলিগুড়িতে শাসক দল দল ভাঙ্গানোর চেষ্টা করে বিফল হয়ে পুরো পাঁচ বছর বিরোধী আসনেই বসেই সন্তুষ্ট থেকেছে , কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে যখন পৌরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হ’তে যাচ্ছে সেই সময় শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য নগরোন্নয়ন মন্ত্রীকে চিঠি লিখে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানান , এবং এখান থেকেই শুরু হয় জটিলতা এবং নাটকীয়তা , বাতিক্রমি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় শিলিগুড়ি পৌরনিগমের ক্ষেত্রে , মেয়র ডেপুটি মেয়র , মেয়র পারিষদদের সঙ্গে তৃণমূলের শিলিগুড়ির প্রথম সারির পাঁচ তৃণমূলী কাউন্সিলরকে অন্তর্ভুক্ত এবং অশোক ভট্টাচার্য কে চেয়ারম্যান করে নির্দেশ নামা পাঠানো হয় , নির্দেশ নামা হাতে পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মেয়র এবং সিপিআইএম দলের পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব খারিজ করে দিয়ে অভিযোগ করা হয় রাজ্যের এই অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত তারা কিছুতেই মেনে নেবেন না। এবং অশোক ভট্টাচার্য জানিয়ে দেন, এই অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নেওয়া সিদ্ধান্তে উনি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন না। তারপর গত দু’দিনে শিলিগুড়িতে শুরু হয় নানান জল্পনা , জনমানষে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলে তৃণমূল কংগ্রেস তার ভুল বুঝতে পারে এবং সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে গতকাল নতুন নির্দেশ নামা পাঠায় যেখানে অশোক ভট্টাচার্য চেয়ারম্যান এবং ডেপুটি মেয়র সহ মেয়র পারিষদরা বোর্ড সদস্য হিসেবে মনোনীত হন।

এ প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গের এক মন্ত্রী প্রেস বিবৃতিতে জানিয়েছেন এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নেওয়া সিদ্ধান্ত এ ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে চান না , তবে অশোক ভট্টাচার্যকে আক্রমণ করে উনি বলেছেন উন্নয়নের ক্ষেত্রে দল দেখে রং দেখে রাজনীতি করা নয় সকলকে একসাথে নিয়েই চলার পরামর্শ দিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি যেটা পালন না করে অশোক ভট্টাচার্য পালিয়ে বাঁচতে চাইছেন।

যদিও এই অভিযোগ পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়ে দার্জিলিং জেলার প্রাক্তন যুবনেতা তথা পৌর বোর্ডের বিদায়ী শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ শ্রী শংকর ঘোষ জানিয়েছেন পালিয়ে যাওয়ার কোন প্রশ্নই নেই বামপন্থীরা পালিয়ে নয় স্পর্ধায় বাঁচে, শংকর বাবু আরো জানিয়েছেন আসলে তৃণমূল কংগ্রেস জন্মলগ্ন থেকেই দ্বিচারিতা ও স্বৈরাচারীতার রাজনীতি শিখে বড় হয়েছে , মমতা ব্যানার্জি ক্ষমতায় আসার জন্য লাশের রাজনীতি করে দলটাকে বড় করেছে , সারা রাজ্যে খুন-ধর্ষণ , জালিয়াতি – চুরি এগুলোকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস , ২০১১ তে রাজ্যে পালাবদল হওয়ার পরে বহু চেষ্টা করেও তৃণমূল কংগ্রেস শিলিগুড়িতে দাঁত ফোঁটাতে পারেনি। এর কৃতিত্ব শিলিগুড়ির মানুষের , শিলিগুড়ি মানুষ রাজ্যের অন্যান্য জায়গার মতন শিলিগুড়িকে অশান্ত উত্তপ্ত হ’তে দিতে চায়নি যার জন্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনে বামপন্থীদেরকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন , যেটাকে অসম্মান করার প্রক্রিয়া বারবার চালিয়ে গিয়েছেন শিলিগুড়ির এক মন্ত্রীসহ মুখ্যমন্ত্রী নিজে।

পৌরবোর্ডে প্রশাসক বসানো নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যেভাবে টালবাহানা করেছে শিলিগুড়ির মানুষ এটাকে ভালোভাবে নেয়নি , জনমানষে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও ধিক্কার তৈরি হওয়ার পরে তৃণমূল কংগ্রেস পিছু হটেছে , ক্ষমতা থাকলে ওরা ওদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতেন না। নির্লজ্জতার চরম সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস , শিলিগুড়ির মানুষ যেভাবে বিগত ৫ বছর বহু অপমান বহু লাঞ্ছনা ও প্রবঞ্চনা কে সহ্য করেও বামপন্থীদের পাশে ছিলেন, আগামী দিনেও নির্বাচনে শান্ত ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখার জন্য মানুষ বামপন্থী ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির সাথেই থাকবে বলে জানিয়েছেন শংকর বাবু।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।