কলমের খোঁচা

স্মৃতির অতলে হুগলির বিপ্লবী ঘোষ পরিবার


রত্না দাস: চিন্তন নিউজ:১৬ই আগস্ট:- আমাদের বাংলায় ছিল এমন এক পরিবার যে পরিবারের তিন ভাই ছিল বিরাট বিপ্লবী। তাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি? একটু স্মরণ করে নেওয়া যাক ‘ঘোষ ‘ পরিবারের অবদানের কথা::—-
চাপেকর পরিবারের তিন ভাইয়ের স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান সম্পর্কে আমরা সকলেই জানি কিন্তু বাংলায় এমন একটি পরিবার ছিল যেখানে তিন ভাই ছিলেন বিরাট বিপ্লবী।

যামিনীজীবন ঘোষ মহাশয়ের পুত্রদের মধ্যে জ্যোতিজীবন ঘোষ, নির্মলজীবন ঘোষ, নবজীবন ঘোষ তিন ভাই ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামী। এই ঘোষ পরিবারের আদি বাড়ি ছিল হুগলি জেলার ধামাসিন এলাকায়।

নির্মলজীবন ঘোষের জন্ম হয়১৯১৬ সালের ৫ই জানুয়ারি । মেদিনীপুর কলেজের আই.এ ক্লাসের ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলের যোগ দেন ।অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায় অত্যাচারী জেলাশাসক বার্জকে গুলি করে হত্যা করার ব্যাপারে তিনি জড়িত ছিলেন। এই ষড়যন্ত্র ও হত্যার অভিযোগে অভিযোগে বিচারের প্রাণদণ্ড হয়। মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে ১৯৩৪সালের ২৬শে অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১৮ বছর ৯ মাস ২১ দিন। বার্জ হত্যা মামলায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ দেন মৃগেন দত্ত এবং অনাথ বন্ধু পাঁজা। এই ঘটনার পর ব্রজকিশোর চক্রবর্তী, প্রাণ কৃষ্ণ রায়, নির্মলজীবন ঘোষ, নন্দ দুলাল সিং, কামাখ্যা ঘোষ , সুকুমার সেন ও সনাতন রায়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মামলা হয়। বিচারে রামকৃষ্ণ ও নির্মল জীবনের ফাঁসি হয। নন্দদুলাল, কামাখ্যা ঘোষ, সুকুমার সেন এবং সনাতন রায়ের যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর দন্ড হয়।

নির্মলজীবনের দাদা জ্যোতিজীবন ঘোষ আরেকজন একজন বড় বিপ্লবী ছিলেন। জ্যোতিজীবন ঘোষ এর কোন ছবি পাওয়া যায় নি।। মেদিনীপুর কলিজিয়েট স্কুলে ১৯৩১ সালের ৭ ই এপ্রিল জ্যোতিজীবন ঘোষ ও বিমল দাশগুপ্ত জেলাশাসক পেডিকে হত্যা করেন। তাদের আরেক ভাই ছিল নবজীবন ঘোষ। তার সঠিক জন্ম তারিখ ও সাল পাওয়া যায়নি। তার ডাকনাম ছিল শালিখ। এই ঘোষ পরিবারকে অনেক সরকারি অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। তাদের জ্যেষ্ঠভ্রাতা বিনয়জীবন ঘোষ ছিলেন মেদিনীপুর কলেজে ইতিহাসের অধ্যাপক। ম্যাজিস্ট্রেট হত্যাকাণ্ডের পরে ১৯৩৩ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে।

বিপ্লবী আন্দোলনে যুক্ত এই সন্দেহে নবজীবনকে মেদিনীপুর থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে আবার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। মেদিনীপুরের গোপালগঞ্জ থানায় বন্দী অবস্থায় তার উপর অকথ্য অত্যাচার করা হয।এই অমানুষিক অত্যাচারের ফলে তার মৃত্যু হয ১৯৩৬সালের ২২শে সেপ্টেম্বর। এই মৃত্যুকে পুলিশ আত্মহত্যা বলে মিথ্যা প্রচার করে।নবজীবন ঘোষের জেল হেফাজতে মৃত্যু ও মেদিনীপুর জেলা জুড়ে অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরব হন স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেসময় রাজবন্দী হত্যা এবং মানবধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ইন্ডিয়ান সিভিল লিবার্টি ইউনিয়ন তদন্তের দাবি জানায। এই সংগঠনের সভাপতি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

বাঙালির সর্বভারতীয় ইতিহাসে, আন্তর্জাতিক ইতিহাসে অনেক পাণ্ডিত্য। কিন্তু নিজের জাতির ইতিহাস খুব কমসংখ্যক বাঙালিই জানে। দেশ আজ স্বাধীন। সময় এসেছে নিজের জাতির আত্মত্যাগ আর বলিদান এর ইতিহাস জানার।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।