দেশ

আলোর ফেরিওয়ালারা


দীপশুভ্র সান্যাল: জলপাইগুড়ি:চিন্তন নিউজ:৩০শে অক্টোবর:–রাজস্থান থেকে খেতি বাড়ি ছেড়ে সামান্য বাড়তি রোজগারের আশায় গোটা দেশের বিভিন্ন শহরে ঘুরে বেড়ায় রাজস্থানের বানঞ্জারারা। প্রতিবছর দীপাবলির আগে বিভিন্ন শহরে ঘুরে ঘুরে আলো বিক্রি করে তারা। জলপাইগুড়ি শহরের বিভিন্ন মোড়ের সাথে শহরের প্রাণকেন্দ্র কদমতলা মোড় আলোর পসরা সাজিয়ে রাত ১১ টায় এই বঞ্জারাদের দৌলতের আলোর বেলুনে কদমতলা মোড় যেন দীপাবলীর সাজে সেজে উঠেছিল। ঘর ফিরতি পথচারীরা কেউ বাইক কেউ গাড়ি থামিয়ে দাম দর করে তাদের কাছ থেকে কিনলেন বেলুন আলো অনেকে আবার বেলুন হাতে তাদের দিয়ে মোবাইল ক্যামেরা ক্যামেরাবন্দি করলেন নিজের ছবি।

রাজস্থানের দেউসা জেলার একটি ছোট্ট গ্রাম কোলটা থেকে গত একমাস আগে তারা দিল্লি থেকে রঙিন আলোর সমন্বিত সাদা বেলুন কিনে দেশের কোন এক অজানা শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এবছর তারা এসেছেন জলপাইগুড়িতে। এক মাসে যা রোজগার হবে তা নিয়েই ঘরে ফিরে যাবেন তারা। ডিবিসি মোড়ে দাঁড়িয়ে এই দলের সাথে আসা রঘুরাম জানালেন বছরের অন্য সময় তারা মূলত কৃষি কাজের সাথে যুক্ত থাকেন আর এই একমাস দেশের বিভিন্ন শহরে ঘুরে ঘুরে এই আলো বিক্রি করেন তারা। করোনার কারণে গতবছর ঘরেই ছিলেন তারা এ বছর আবার বেরিয়েছেন অজানা অচেনা শহরে আলো বিক্রি করে বাড়তি রোজগারের আশায়।

দলের আরেক সদস্য রাজারাম জানালেন স্টেশনের পাশে এক ফালটি জমিতে এক মাসের জন্য ঘর বেঁধেছেন তারা স্ত্রী ছেলে-মেয়ে নিয়ে ১৬ জনের দল শিলিগুড়ি হয়ে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে লোকাল ট্রেনে এসেছেন জলপাইগুড়ি শহরে। এবছর ভালো বেলুন বিক্রি হলে সেই পয়সা দিয়ে দেশে ফিরে জীর্ণ হয়ে যাওয়া বাড়ি সংস্কারের কাজে হাত দেবেন তিনি। ছাউনি দিয়ে জল পড়ে এভাবেই গত এক বছর শীত বর্ষায় কষ্ট করে পরিবার-পরিজন নিয়ে এই ঘরেই রাত কাটিয়েছেন তারা।

গতবছর করোনার কারণে দেশ ছেড়ে অজানা শহরে আলো বিক্রি করতে আসা হয়নি এবার এসেছেন এই শহরে,আলো কিনছেন শহরের বহু মানুষ এবার একটু বাড়তি রোজগার হবে তাদের। সঙ্গে থাকা তার স্ত্রী জানালেন দেশের বিভিন্ন শহরে ঘুরে ঘুরে এই আলো বিক্রি করেন তারা এবছর এসেছেন জলপাইগুড়িতে আগামী বছর হয়তো যাবেন অন্য কোন শহরে দেশের এত শহর ঘুরেছেন সব নাম মনে থাকে না তবে কেউ বললে শোনা শোনা মনে হয়। গতবছরের আগের বছর যেমন গেছিলেন উলুবেরিয়া শহরে‌ এবছর অন্যদল গিয়েছে সেখানে। আগামীতে তারা চলে যাবেন অন্য শহরে, সেখানে গিয়ে অস্থায়ী আস্তানা বাঁধবেন। এভাবেই ঘুরে ঘুরে পরিবার-পরিজন নিয়ে বছরের এক মাস এই বেলুন আলো বিক্রি করেন তারা। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের হাতে আলো তুলে দিয়ে তাদের মুখের হাসিই সামান্য রোজগারের সাথে বাড়তি পাওনা বাঁচার প্রেরণা যোগায় তাদের।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।