কাকলি চ্যাটার্জি: চিন্তন নিউজ:২৪শে মে:- লকডাউনের আড়ালে শ্রম আইনের বদল, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর বেসরকারিকরণ এবং কৃষিক্ষেত্রে অবাধ কর্পোরেট পুঁজি ঢোকার পথ প্রশস্ত করল কেন্দ্রের জনবিরোধী সরকার। ট্রেড ইউনিয়নগুলো শর্ত মেনে প্রতীকী কর্মসূচি চালিয়ে গেলেও ব্যাপক অংশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সক্রিয়ভাবে লাগাতারশ্খ বিক্ষোভ কর্মসূচি নেওয়ার সুযোগ না থাকায় বাড়তি সুবিধা পেয়ে গেছে প্রধানমন্ত্রী এবং তার দপ্তর। মোদির সাম্প্রতিক ভাষণে পরিষ্কার উঠে এসেছে তাঁর পরিকল্পনা, অনৈতিক শ্রমিক বিরোধী চিন্তাভাবনা।
একইরকমভাবে আপ ক্যাব সংস্থা ওলা, উবের, ফিউচার গোষ্ঠী দেদার কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে। হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছেন সিদ্ধান্ত। ছাঁটাই করার আগে নিয়ম মেনে নোটিশ পাঠানো সম্পূর্ণভাবে অগ্ৰাহ্য করে ম্যানেজার হোয়াটস অ্যাপ কল করে পদত্যাগের পরামর্শ দিচ্ছেন। কেউ অস্বীকার করলে সরাসরি ছাঁটাইয়ের হুমকি। সেক্ষেত্রে মিলবে না কোনো পাওনাগন্ডা এবং অভিজ্ঞতার স্বীকৃতিপত্র, যেটা না পেলে ভবিষ্যতে চাকরি পাওয়া আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। কেননা বর্তমান সময়ে পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলে বেসরকারি ক্ষেত্রে চাকরির দরজা বন্ধ। ইন্ডিয়াবুলস ২০০০ জন কর্মীকে ছাঁটাই করেছে। ফিউচার গোষ্ঠীর বিগবাজারে চলছে কর্মী সংকোচন। দুমাসের মাইনে বাকী, কর্মীরা পথে নেমে বিভিন্ন বিগবাজারের সামনে প্রতিবাদ জানালেও প্রশাসন উদাসীন। একাধিক ব্যাক অফিসের ওয়ার্ক ফ্রম হোম চললেও যাঁরা সেই সুবিধা নিতে অপারগ কর্মস্থলের দূরত্বের কারণে তাঁদের অফিসে এসে কাজ করার কথা বলা হচ্ছে। আবার কিছু কর্মী যাঁরা অফিসে থেকে কাজ করছিলেন তাঁদের ও বাড়ি ফিরে গিয়ে বাড়ি থেকে রোজ অফিসে এসে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। আসা যাওয়ার কোনোরকম আর্থিক দায়ভার কোম্পানিগুলো নিতে নারাজ। সীমিত পরিবহন ব্যবস্থায় ওলা,উবেরের সাহায্যে প্রত্যহ অফিস যাওয়া আসা পনেরো বিশ হাজার বা তারও কম স্যালারি পাওয়া
কর্মীদের পক্ষে কীভাবে সম্ভব??নয়ডা বা আমেদাবাদের বিভিন্ন সংস্থা কর্মীদের একাংশকে বেতনহীন ছুটিতে পাঠাচ্ছে কিংবা বাধ্য করাচ্ছে পদত্যাগ করতে। কোনও কোনও সংস্থার কর্মীরা পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছেন এবং অনলাইনে আইনের সাহায্য নিতে চলেছেন।
লকডাউন চলাকালীন কাজে আসতে না পারলেও ছাঁটাই করা যাবে না কেন্দ্র ও রাজ্যের এই নির্দেশ কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ব্যাঙ্কগুলো ঠিকা কর্মীদের ছাঁটাই চালিয়ে যাচ্ছে, কাজে না আসতে পারলে বেতন ও মিলছে না। কর্মী না থাকার কারণে ই কর্ণার, এ টি এমের সুবিধাও মিলছে না অধিকাংশ জায়গায়। রাজ্যে করোনার আগেই কাজ হারিয়েছেন কুড়ি হাজার কর্মী। ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের পুনর্নিয়োগ এবং নতুন করে ছাঁটাই না করা ও বকেয়া বেতনের দাবিতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ব্যাংক কন্ট্রাকচুয়াল অ্যান্ড কন্ট্রাক্ট ওয়ার্কমেন্স ইউনিয়ন।স্থায়ী কর্মীরাও এঁদের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় সাহায্য দিয়ে যাচ্ছেন।
কিন্তু মোদির সর্বশেষ বক্তব্যে কিংবা মল্লিকা সীতরামনের সাংবাদিক সম্মেলনে কোথাও বেতন কিংবা ছাঁটাই বন্ধে কোনো মন্তব্যই নেই। বরঞ্চ বকেয়া বেতন না দেওয়ার পক্ষেই পরোক্ষে সওয়াল করেছেন। স্পষ্টতই শ্রমিকদের রক্ষাকবচ শ্রম আইন তুলে দেওয়ার পথেই হাঁটছে কেন্দ্রের সরকার।