দেশ

করোনা পরিস্থিতিকে সামনে রেখে শ্রমিকদের অধিকার হরণের কাজ শুরু করে দিল হিমাচল সরকার


পাপিয়া দাস মজুমদার, দিল্লী: চিন্তন নিউজ:১১ই জুন:- হিমাচল সরকার কারখানা গুলিতে যে শ্রমিক আইনের পরিবর্তন করে নুতন অধিনিয়ম কার্যকরী করেছে, এতে মজদুর দের উপর যে প্রভাব পড়তে যাচ্ছে তাই নিয়ে সিটু সভায় বক্তব্য রাখলেন অ্যাডভোকেট বিজয় শর্মা ।
তিনি বললেন কেন্দ্রীয় সরকার অনেক দিন ধরেই শ্রম আইনকে খর্ব করতে চাইছে। কিন্তু মজদুরদের সংঘটিত বিরোধকে দেখে তা খর্ব করতে পারছিলো না। কিন্তু আজ প্রায় তিন মাস ধরে করোনা ভাইরাস এর কারণে লকডাউন শুরু হয়েছে, তখন থেকে এই শ্রম আইনকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়ে গেছে। প্রথমে মধ্যপ্রদেশ এরপর একে একে উত্তর প্রদেশ, গুজরাট,আসাম,পাঞ্জাব আর এখন হিমাচল প্রদেশে এই নুতন পরিবর্তিত আইনে লাগু হতে যাচ্ছে। হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীও এই তিন মুখ্য শ্রম আইনকে বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই তিন শ্রম অধিনিয়ম হলো – ১) ফ্যাক্ট্ররিস(Factories).
2) ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিস পুট (Industrial Dispute)
3) কন্ট্রাক্ট লেবার( Contract labour)

1) ফ্যাক্ট্রিস (Factories) – ফ্যাক্টরি এক্টে যে পরিবর্তন গুলি এসেছে, ও তারফলে মজদুর দের উপর যে প্রভাব পড়তে যাচ্ছে, তার রূপরেখা অনেকটা এইরকম ঃ-
ফ্যাক্টরি গুলিতে ৮ ঘন্টার স্থলে ১২ ঘন্টা ডিউটি করতে হবে। আর ১৬ ঘন্টা অব্দি ওভার টাইম ডিউটি করানো হবে।
আজ থেকে ১৫০ বছর আগে যখন মজদুর আন্দোলনের শুরু হয়েছিল, তখন এই মজদুর দের মূখ্য দাবি ছিল তাদের ১৬ ঘন্টার কাজ কমিয়ে ৮ ঘন্টার করা হোক। আর এই দাবী আদায়ে সফলও হয়েছিলো অনেক আন্দোলনের বিনিময়ে।

আজকে পুনরায় সেই মজদুরদের ১৫০ বছর পেছনে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়ে গেছে।
ফ্যাক্টরিতে তপ্ত আগুনের কাছে দাঁড়িয়ে একটানা ১৬ ঘন্টা কাজ করা একদিকে অসম্ভব ও অমানবিক নিষ্ঠুরতার পরিচয়ও বটে।
দ্বিতীয়ত যে কারখানা গুলিতে ৪০ কিংবা ৪০ এর নীচে মজদুর রয়েছে, সেখানে কারখানার শ্রম অধিনিয়ম কার্যকরী হবে না।
যদি উদ্যোগীদের বাৎসরিক গড় হিসাব প্রত্যক্ষ করা যায়, তবে দেখা যাবে ২০১৫-১৬ তে হিমাচল প্রদেশে মোট ২২৫৯ কারখানার রেজিষ্ট্রেশন হয়েছে। যেখানে ১৫০০ কারখানায় ৪০ এর কম মজদুর কাজ করে। এছাড়াও ছোটো ছোটো প্রচুর সংখ্যক কারখানা রয়েছে, যেগুলোর রেজিষ্ট্রেশন হয়নি। আর এ হেনো কারখানা গুলিতে কাজ করছে প্রচুর সংখ্যক মজদুর। আর এইসব কারখানা গুলিতে শ্রমিক আইন কার্যকরী না থাকার কারণে সমস্ত রকম নিরাপত্তার সুযোগ সুবিধা হতে বঞ্চিত হচ্ছেন। এইসব কারখানা তে কাজ করার সময় কোনও শ্রমিকের মৃত্যু হলে ও কোনও প্রকার সুবিধা পাবে না। একে এক এক্সিডেন্টাল কারণ বলে চালিয়ে দেবে কর্তৃপক্ষ।

২) ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিস পুট এক্ট(Industrial Dispute Act.)- এর সংশোধন করে যে নুতন নিয়ম লাগু হয়েছে তা হলো – যে সব ইন্ডাস্ট্রিতে ৩০০ ও ৩০০ এর বেশী শ্রমিক রয়েছে, ঐসব কোম্পানি তাদের শ্রমিক ছাঁটাই করার পূর্বে রাজ্য সরকারের কোনো অনুমতি নেবার প্রয়োজন পড়বে না। যা এই সংশোধনের পূর্বে রাজ্য সরকারের অনুমতি নিতে হতো। ও সঠিক কারণ দেখাতে হতো এই ছাটাইয়ের কিংবা কারখানা বন্ধের। এখন নুতন সংশোধনীতে যা আর রইলো না।হিমাচল প্রদেশে ৯০ শতাংশ ইন্ডাস্ট্রি এর আওতায় পড়েছে। যার ফলে শ্রমিকদের ছাটাইকরণের আর কোনও বাধা রইলো না মালিক শ্রেণির। এর ফলে শ্রমিক আন্দোলনের নেতাদের ছাঁটাই করে শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধতাকে বিচ্ছিন্ন করে দেবার প্রয়াস নেওয়া হচ্ছে। যার ফলে মজদুর দের জন্যই শুধুমাত্র নয়,মজদুর আন্দোলনের জন্য এবং লোক তন্ত্রের জন্য ও ভীষণ মারাত্মক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

৩) কন্টাক্ট লেবারএক্ট (Contact Labour Act.):- এই আইনকেও পরিবর্তন করে যা করা হচ্ছে তা হলো, যেসব কারখানাতে ৪০ কিংবা ৪০ জনের কম শ্রমিক কাজ করে সেখানে ঠিকা শ্রমিক আইন কার্যকরী হবে না এখন থেকে। এইসব কারখানা গুলিতে দুই রকমের শ্রমিক রয়েছে। কিছু নিয়মিত ও বাকি ঠিকা শ্রমিক। এইসব ঠিকা শ্রমিকদের নিয়োগের দায়িত্ব ছিলো লাইসেন্স প্রাপ্ত কন্ট্রাক্টরদের হাতে। আর সেইসব কন্ট্রাক্টর দের মাধ্যমে ঐসব শ্রমিকদের নাম ঠিকানা পরিচয় পত্র নিয়ে নাম নথিভুক্ত করে ওদের সুরক্ষার বন্দোবস্ত করা হতো।

বর্তমানে এই আইনের পরিবর্তন করে ওই কন্ট্রাক্ট ঠিকাপ্রথা বিলুপ্ত করে বিনা লাইসেন্সেই মজদুর সংগ্রহ করার ছাড়পত্র মিলে যায় ওইসব কোম্পানি গুলির। যারফলে যে কোনো কারোর মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে গিয়ে শ্রমিক দের বিভিন্ন প্রকার লোভাতুর বিষয় সামনে রেখে শিশু শ্রমিক থেকে শুরু করে যে কোনও শ্রমিক দের এইসব কারখানায় ঠিকা শ্রমিকের যোগান দিতে পারবে।এইসব শ্রমিক আইনের পরিবর্তন এর কারণ নিয়ে সরকারের কাছে প্রশ্ন করা হলে, সরকার প্রশ্নোত্তরে বলে করোনার কারণে যে অর্থ ব্যবস্থার ঘাটতি দেখা দিয়েছে, তাকে ফেরাতে এই সংশোধন।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এ হেনো অর্থ ব্যবস্থা ঘাটতির পেছনে মজদুরদের কী দোষ ছিল? ওরা তো আর উড়োজাহাজে আর বিদেশে ঘুরতে যায় নি,আর বিদেশ থেকে ভাইরাস এনে দেশের অর্থ ব্যবস্থাকে নামিয়ে দেয়নি। তথাপি শ্রমিক মজদুর রা এর শাস্তি ভোগ করবে কেন? অ্যাডভোকেট বিজয় শর্মা বলেন , এই আইন পরিবর্তন করে সরকার বুঝিয়ে দিয়েছেন যে,এই সরকার শ্রমিক বিরোধী ও স্বৈরাচারী।।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।