খেলাধূলা

যশস্বীর যশলাভ।


সূপর্ণা রায়:চিন্তন নিউজ:৩রা ফেব্রুয়ারি:–বিশ্বকাপের ট্রফি তার হাতে উঠেনি। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা তা নিয়ে উল্লাস করেছেন।। চোখের সামনে সেই দৃশ্য দেখার দুঃখ কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছে টুর্নামেন্টের সেরার ট্রফি হাতে ওঠায়।। পূর্ণ হয়েছে দেশের জার্সিতে সেরা হওয়ার স্বপ্ন। যে স্বপ্নের অঙ্কুরোদগম উত্তর প্রদেশের অখ্যাত সুরিয়ান গ্রাম।।

ভাদোহি শহর থেকে মাত্র ১৭ কিলোমিটার দূরে সুরিয়ান গ্রাম।। ভাদোহি হাতে বোনা কার্পেটের জন্য বিশ্বজোড়া খ্যাতি।।সেই খ্যাতি ছাপিয়ে শহরজুড়ে একটাই নাম ঘুরে বেড়াচ্ছে।। যশশ্বী জয়সওয়াল।। সদ্যসমাপ্ত অনুর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটার।। কার্পেটে কিনতে আসা দূর দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষ জন একবার ঘুরে যাচ্ছেন যশশ্বীর বাড়ি।।বাবা ভুপেন্দ্রর সামান্য হার্ডওয়্যার এর দোকান।। প্রচন্ড টানাটানির সংসার।। এই সময় যশশ্বীর আগমন সংসারে।। যে মানুষটার ধ্যান জ্ঞান স্বপ্নে টাকার চিন্তা, সংসার এর হাল ফেরানো জন্য, তিনি ছেলের নাম রাখলেন যশশ্বী।। অর্থের আগে তাঁর খ্যাতির কথা মনে এসেছিল। ভূপেনদ্র এটা কি ছিল স্বপ্ন না দূরদর্শিতা? ১৮ বসন্ত পরে দুটোই মনে হচ্ছে সত্যি।।

ছোটবেলা থেকেই ছেলের ইচ্ছে ক্রিকেটার হবে। সংসারে প্রচন্ড অভাব তারপর গ্রামে তেমন পরিকাঠামো নেই।। অনেক বাবাই এমন অবস্থা যে ছেলেকে নিরস্ত করতেন কিন্তু ভূপেন্দ্র গুরুত্ব দিয়েছিলেন ছেলের ইচ্ছে কে। তিনি বুঝতে পারছিলেন আগুন আছে ছেলের মধ্যে।।সেই আগুনকে উসকাতে পারলে যেমন ছেলের নাম সার্থক হবে তেমন সংসারে সোনা ফলবে।। আর যদি স্বপ্ন সফল না হয় তবে হারাবার কিছু নেই অতএব ছেলের ইচ্ছে কেই মত দিলেন।।

ছেলে পাড়ি দিল মুম্বাই সেখানে থাকেন তার কাকা সন্তোষ।। কিন্তু সন্তোষ বাবুর নিজের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই উপার্জন অত্যন্ত কম।। তার পক্ষে বাড়তি আর একজনের দায়িত্ব পালন করা অসম্ভব। কিন্তু তিনি যশশ্বীকে ফেরান নি।। মুসলিম ইনস্টিটিউট ক্লাবের কর্তাদের অনুরোধ করে তাঁবুতে থাকার বন্দোবস্ত করে দিয়েছিলেন।। এবার যশশ্বীর লড়াই শুরু।।নিয়ম করে আজাদ ময়দানে যান।এই সেই ময়দানে যেখান থেকে ভারতীয় ক্রিকেটের নক্ষত্ররা উঠে এসেছেন।। যশশ্বী সকালে একমনে প্র্যাকটিস করেন আর বিকেলে একটি ডেয়ারি শপে চাকরি।। কিন্তু ভাগ্য মন্দ।। ঠিক সময়ে আসতে না পারায় কাজটি গেল। ক্রিকেট প্র্যাকটিস করার পর ক্লান্ত শরীরে ঠিকমতো খরিদ্দার সামলাতেও পারছিল না।। মালিক এমন কর্মচারী রাখতে নারাজ।

সহায়সম্বল হীন অন্ধকারাচ্ছন্ন তাঁবুতে থেকে আলোর সন্ধানের এক অসম লড়াই।। প্র্যাকটিস করে বিকেলে পানিপুরি বিক্রি করা শুরু করেন।। সকালে যেসব সঙ্গীরা তার সাথে প্র্যাকটিস করে বিকেলে তারাই পানিপুরি খেতে আসে যশশ্বীর কাছে।। শুরু হল টিকাটিপ্নূনি।। চোয়াল শক্ত করে সব হজম করে যাচ্ছিল যশশ্বী।।সব লড়াই ব্যর্থ হয়ে যেত যদি না সে জোয়ালা সিং এর নজরে আসত।। ক্রিকেট পাগল মানুষটি সান্তাক্রজে নিজের আকাডেমিতে যশশ্বীকে তৈরি করতে থাকেন।। বাকিটা তো ইতিহাস।

স্কুল ক্রিকেট থেকে মুম্বায়ের রাজ্য দল।।সব জায়গায় রেকর্ড তৈরি করে জুনিয়র জাতীয় দলে প্রবেশ।। সেখানেও কথা বলেছে যশশ্বীর ব্যাট। সঙ্গে বোলিং টাও মন্দ না।। সে কারণেই আইপিএল এ তার দল উঠে আড়াই কোটি টাকা। টাকা পেয়ে মাথা ঘুরে যায়নি তার।।নিজেকে মুম্বাইয়া ঘরানার ছাঁচে ঢেলেছেন।। নিজের উইকেটটি অতি মুল্যবান।। কোচেদের এই পরামর্শ মাথায় রেখেছেন সর্বক্ষণ।। বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অপারাজিত শতরানের পর তাঁকে নিয়ে উচ্ছাস চরমে উঠে। কিন্তু তাঁকে টলানো যায়নি।। ফাইনালে অষ্ট আশি রানের ঝকঝকে ইনিংস।। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রানের মালিক।। সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে তাঁর নাছোড়বান্দা মনোভাব।।। ওইটুকু একটা দল বছরের ছেলে প্রায় বিনা পুঁজিতে ,বিনা ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স এ মা বাবা ঘরবাড়ি ছেড়েছিলেন।। এখন ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স স্ফীত হয়েছে ঠিকই। তবে শুধু অর্থ নয় যশশ্বীর সবচেয়ে বড় লাভ যশলাভ।।যে পুঁজি যে ভর করে একদিন হয়তো ঢুকে পড়বেন সিনিয়র টিম ইন্ডিয়ায়।।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।