পাপিয়া মজুমদার: চিন্তন নিউজ:২৭শে জানুয়ারি:– “ফিরিয়ে দাও চাকরি “। “কোথায় গেল চাকুরী ফিরিয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি”?? এই দাবি নিয়ে গণ অবস্থান থেকে ৫১ দিনের সন্ধ্যায় সরগরম চাকুরি চ্যুত ১০৩২৩ শিক্ষক শিক্ষিকাদের বিশাল মিছিলে, এই মিছিল আগরতলার রাজপথ কাঁপালো।
গণতন্ত্র দিবসে যখন দেশের রাজধানী দিল্লিতে কৃষকদের বিক্ষোভ প্রদর্শন ট্রাক্টর র্যালি করে দিল্লির রাজপথ লালকেল্লাসহ চারদিকে আকাশ বাতাস ভারী হয়েছে। এমনই দিনে সন্ধ্যায় আগরতলা শহরে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ১০৩২৩ মঞ্চের ডাকে বিক্ষোভ মিছিলে।মশাল নিয়ে মিছিল করে চাকুরী ফিরিয়ে দেওয়া কিংবা বিকল্প রোজগারের ব্যবস্থার দাবি নিয়ে ধর্ণারত চাকুরীচ্যুতরা।
এরইমধ্যে ৮৪ জন চাকুরীচ্যুত আন্দোলনকারী মৃত্যু বরণ করেছেন। কেউ কেউ আত্মঘাতী হয়েছেন। আবার কেউ অভাবের তাড়নায় স্ত্রী সন্তান সহ আত্মঘাতী হয়েছেন, কেউ স্বামীর চিতায় ঝাঁপিয়ে সহমরণের চেষ্টা করেছেন। যে হৃদয় বিদারক ঘটনা পুরো দেশবাসীকে নাড়িয়ে দিয়েছে।
ক্রমাগত এই ১০৩২৩ এর চাকুরী চ্যুতদের মৃত্যু মিছিল চলছে ত্রিপুরার বুকে। গত সোমবারে ও এক শিক্ষকের মৃত্যুর জেরে শিক্ষা দপ্তর ঘেরাও অভিযান হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের কয়েক জন শিক্ষা দপ্তরে ঢুকে পড়েন। তাদের প্রশ্ন -তাদের চাকুরী ফিরিয়ে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আজ কেন রাজ্যের বিজেপি আই পি এফ টি জোট নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন??
বিগত বাম সরকারের আমলে এই ১০৩২৩ জন শিক্ষক শিক্ষিকা চাকুরী পেয়েছিলেন। সে সময় প্রধান বিরোধী দল চাকুরী বিধি লঙ্ঘন এর দাবি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হলে,আদালতও সেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ত্রুটি আছে বলে মান্যতা দেয়। যার ফলশ্রুতিতে তাদের চাকুরীর অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। বাম জমানায় এদের কোনো না কোনো ভাবে টিকিয়ে রাখা হ’লেও নুতন জোট সরকার এসে সম্পূর্ণভাবে এদের পথে বসিয়ে দেয়। বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিজেপি এদের চাকুরী ফিরিয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি দেয় ও সরকার গঠন করে। সরকার গঠনের দু’বছর অতিক্রান্ত হবার পর ও তাদের চাকুরী কিংবা বিকল্প রোজগারের কোনও ব্যবস্থা করেননি। বরং একের পর এক মৃত্যুর অভিমুখে ঠেলে দিয়েছেন।
আজ ২৭ জানুয়ারির ভোর ত্রিপুরার ইতিহাসে গণতন্ত্রের আরেক কালোদিন উঠে এলো। আন্দোলনের ৫২ তম দিনে সূর্যোদয়ের পূর্বে শীতে জবুথবু মুহূর্তে সরকার বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করে গণ অবস্থান মঞ্চ ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষক শিক্ষিকাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। ত্রিপুরার ইতিহাসে এমন এক কালোদিন, যা অমানবিক সরকারের বর্বরোচিত আচরণের নজির হয়ে রয়ে গেলো।