কলমের খোঁচা

দেশের সংস্কৃতি এবং বর্তমান অবস্থা


কিংশুক ভট্টাচার্য: চিন্তন নিউজ:৪ঠা এপ্রিল:–জন্মসূত্রে উচ্চ বর্ণজাত হিন্দুরা এতোদিন গর্বিত হ’তেন, এই ভেবে যে এমন এক সংস্কৃতির উত্তরসূরি যা কিনা বিশ্বমানবতার অসীম ভালবাসা আর মানুষজাতির মঙ্গলকামনা করে নিজেকে উৎসর্গ করার কথা বলে। গর্বিত ছিলেন, একথা ভেবে যে এই সংস্কৃতিই দেখিয়েছে মানবের মঙ্গলার্থে সমুদ্রমন্থনের দূর্বিষহ ঘর্ষণের কথা জেনেও শেষনাগ নিজেকে মন্থন রজ্জু হিসেবে আর মৈনাক নিজেকে মন্থন দন্ড হিসেবে ব‍্যবহারে সম্মত হয়েছিলেন। তাঁদের হয়তো আত্মশ্লাঘা ছিল, যে তীব্র হলাহল কন্ঠে ধারনকারি নীলকন্ঠের সংস্কৃতির বাহক। কেউ কেউ অহঙ্কার করতেন এমন এক সংস্কৃতির উত্তরসূরি হিসেবে ,যে শেখায় নিজের বিপদের কথা ভুলেও এক ব্রাহ্মণের প্রার্থনা পূরনে নিজের কবজকূন্ডল দান করেছিলেন নির্দ্বিধায় সেই কর্ণ তাঁদের পূর্বসূরি। শ্রীরামচন্দ্রের সাথে জেনে বুঝেও নিজের মৃত‍্যুর উপায় বলে দিতে পারেন যে রাবণ তাঁর সংস্কৃতি ভারতীয় সংস্কৃতি।

কিন্তু আজ দেশজুড়ে এই দেশের সম্প্রীতির ঐতিহ্যর বিপ্রতীপ, পাশাপাশি ভালোবেসে সব সম্প্রদায়ের মানুষের বেঁধে বেঁধে থাকার পরিবেশ লূন্ঠিত। সাধারণ সচেতন শিক্ষিত ভারতবাসী লজ্জিত। এই কাজে এই দেশে এই মুহুর্তে হিন্দু ধর্মজাতরাই মূল কারন। না এরা হিন্দু নয়। হিন্দুত্বের পতাকা হাতে একদল দুস্কৃতি দু’পায়ে নিষ্পেষণ করে চলেছে।

একদিকে সভ‍্যতা শিক্ষায় এগিয়ে থাকার দাবিদার ইউরোপীয় সমাজ নিজেদের আধিপত‍্যবাদের স্থায়িত্বের স্বার্থে এই অসম্প্রীতির বীজ বুনেছিল এই সমস্ত অধিগৃহীত ভূখন্ডে। আর বর্তমানে ঐ সভ‍্য সমাজের মাথা মার্কিনী দুনিয়া নিজের আধিপত‍্য বিস্তারের প্রয়োজনে লূন্ঠনের প্রয়োজনে মুসলিম দুনিয়াজুড়ে ওদের অপকর্মে ক্ষুব্ধ মুসলিম সমাজের একটা অংশ। তীব্র মৌলবাদী ভাবনায় আবৃত। এই সুযোগে ধান্দার কারবারি কিছু মৌলবী নিরাপদ দূরত্ব থেকে মানুষের যুগ সঞ্চিত ভাবাবেগকে ব‍্যবহার করছে আধুনিকতার বিরুদ্ধে ইউরোপীয় মার্কিনী শোষকের বিরুদ্ধতার নাম করে। মধ‍্যযুগীয় যে কুসংস্কারের বিরোধিতা করে ইসলামের জন্ম সেই অতীতের কুসংস্কার হয়ে উঠেছে আধুনিকতার প্রতিদ্বন্দ্বী, গ্রাস করেছে ইসলামের মুলসুরকে। আবর্জনা আর কুসংস্কারে সম্পৃক্ত করছে মহান ইসলামের ভাবনাকে কিছু ধান্দার ব‍্যবসায়ী মৌলবী মোল্লা।

অপরদিকে সঙ্ঘং শরণম গচ্ছামির সংস্কৃতির পীঠস্থান এই ভারতবর্ষে সঙ্ঘবদ্ধতাকেই আক্রমণ করে চৌচির করে দেবার উদ‍্যোগ দেখা যাচ্ছে। এই ভূখন্ডে যুগ যুগ ধরে বিশ্বসংস্কৃতিকে আত্মস্থ করার ঐতিহ্য আজ একদল স্বঘোষিত দেশপ্রেমিক কর্পোরেট দালালের হাতে লাঞ্ছিত। সচেতন দেশবাসী লজ্জিত হতাশ আরও এই কারনে যে সেই ঐতিহ্যের বাহক হয়ে আজ ঐতিহ‍্য হত‍্যা দেখছেন নিশ্চুপে। এ লজ্জা রাখার জায়গা কোথায়? কষ্ট এখানেই এর সমর্থনে যাঁরা কথা বলছেন তাঁরা নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থানের কথা ভুলে প্রচারে অন্ধ হয়ে সমর্থনে গলা ফাটাচ্ছেন।

আজ বোধহয় এই আলোচনা অবাঞ্ছিত নয়। ফ‍্যাসিবাদ এইদেশে এই বিশেষ অবস্থায় আরো বেশী করে মুখোশ খুলে ঊন্মত্তর মতো নৃত‍্যরত। এবং বামপন্থাকে আক্রমণ করে চলেছে, কুৎসা আর মিথ‍্যের ধারাবাহিক প্রচার সংগঠিত করে চলেছে। এবং সুচারুভাবে মানুষের স্বাভাবিক চিন্তা জগৎকে ক্রমাগতভাবে আচ্ছন্ন করে চলেছে।আসলে ফ্যাসিবাদ একটি পুঁজিবাদী রাষ্ট্রীয় ঝোঁক; কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলের পাতি দলীয় এজেন্ডা নয়।

যারা ভাবছেন বিজেপি-কে কেন্দ্র থেকে হটিয়ে দিতে পারলেই ভারত থেকে ফ্যাসিবাদি ঝোঁক বিদায় নেবে, লেনিনের এই কথা ক’টি তাদের জন্য।
“একটি গণ-প্রজাতন্ত্র হল পুঁজিবাদের সম্ভাব্য সেরা রাজনৈতিক খোলস এবং সুতরাং, একবার পুঁজিবাদ এই সেরা খোলসের দখল নিয়ে নিলে, সে তার ক্ষমতাকে এতটাই সুরক্ষিত ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে, এতটাই মজবুত ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে যে, বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের মধ্যেকার কোনও ব্যক্তি, সংস্থা বা রাজনৈতিক দলের পরিবর্তন তাকে নাড়াতে পারে না।” — (লেনিন)


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।