দেশ

চেয়ারম্যান স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী, তবুও ‘পি এম কেয়ারস’ সরকারি নয়!


কাকলি চ্যাটার্জি:- চিন্তন নিউজ:২রা জুন:- করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় প্রথম পর্যায়ের লকডাউনের শুরুতে ২৮ শে মার্চ প্রধানমন্ত্রী একটি তহবিল গঠন করেন ‘পি এম কেয়ার্স’। চেয়ারম্যান স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী। সি পি আই (এম) এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি সহ বিরোধীরা দাবি করেছিলেন এটা আদপেই কোনো সরকারি তহবিল নয়। দেশের পতাকা এবং অশোকস্তম্ভ ব্যবহার করে লোকচক্ষুকে আড়াল করে সোস্যাল সাইটে বিজ্ঞাপন দিয়ে ফান্ড ভরানো হয়েছে যা সম্পূর্ণভাবে অনৈতিক ও বেআইনি। মে মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত তহবিলে জমা টাকার পরিমাণ ১০ হাজার কোটি। এখনও জমা পড়ছে কিন্তু সেটা পৌঁছনোর দায় নেই সরকারি কোষাগারে।

জনগণের টাকা কিন্তু তাদের জানার কোনো অধিকার নেই কত টাকা খরচ হল, অবশিষ্ট টাকার পরিমাণ কত কিংবা আদৌ কোনো টাকা খরচ হয়েছে কী না। যেহেতু এটা প্রধানমন্ত্রীর সরকারি তহবিল নয় সুতরাং তাঁর দায় নেই কোনো তথ্য জানানোর। কেন্দ্রীয় বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মীদের বাধ্য করা হয়েছে একদিনের বেতন দিতে। এছাড়াও সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্ট জন দান করেছেন এই তহবিলে।

আর এক অন্য জীবন যন্ত্রণার ছবি আসামে। বেসরকারি মাইক্রোফিনান্স কোম্পানির থেকে ঋণ নিয়ে জালে জড়িয়ে পড়েছেন অজস্র মানুষ। পশ্চিমবঙ্গ‌ও এর বাইরে নয়। গ্ৰামে গঞ্জে লোকমুখে এই ঋণকে বলে ‘বউ বন্ধকী ঋণ।’ কোনো পুরুষের নামে ঋণ মঞ্জুর হয় না, বাড়ির মহিলারাই কেবলমাত্র এই ঋণ পাওয়ার অধিকারী। না, মহিলাদের সম্মান জানানোর জন্য নয় যাতে সময়মতো ঋণ শোধ করতে না পারলে অপমান, লাঞ্ছনা করার সুযোগ মেলে, যাতে মহিলারা আত্মসম্মান রক্ষার্থে নিজে না খেয়ে অথবা গহনা বিক্রি করেও ধার শোধ করতে বাধ্য হন। ২০ থেকে ২৫% সুদে টাকা ধার নিয়ে সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে কিস্তি দিতে না পারলেই শুরু হয় ভয়ভীতি প্রদর্শন। বন্ধন ব্যাংক এরকমই একটি মাইক্রোফিনান্স কোম্পানি যার শাখা এখন গ্ৰামে গঞ্জে, পাড়ায় পাড়ায়, শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে। এছাড়াও আছে এইচ ডি এফ সি, নর্থ ইস্ট মাইক্রো লোন প্রভৃতি।

আসামের বদরপুর, করিমগঞ্জ, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, দিনাজপুর ছাড়াও অন্য জেলায় অভ্যন্তরেও আজীবন ঋণের জালে বাঁধা পড়ে আছে অসংখ্য পরিবার। মোদী মুখে যতই বলুন কোনো ঋণ মকুব আদতে হবে না। এটা দাতা ও গ্ৰহীতা উভয়েই জানেন। গরীব মানুষগুলো সরকারি নিয়মের বেড়াজালে স্বল্প সুদে ঋণ না পেয়ে বাধ্য হন এই বেসরকারি ব্যাংকগুলোর দরজায় আসতে।

বন্ধন ব্যাংক অডিটবিহীন পি এম কেয়ার্স ফান্ডে দান করছে কয়েক কোটি টাকা। কিন্তু গরীব মানুষের কাছে চাপ দিচ্ছে কিস্তি আদায়ের জন্য। ঠিক যেমন দেশের সরকারি ব্যাংকগুলো কর্পোরেটদের বিপুল অংকের টাকা ঋণ দেয় আবার তা ছাড়ও দেয়। কোটি কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পালিয়ে গেলেও বিচার হয় না কোনো। কিন্তু লকডাউনে ব্যবসা, চাষাবাদ, কাজকর্ম সব বন্ধ থাকলেও এমনকি খাওয়া বন্ধ থাকলেও কোনো অবস্থাতেই মকুব হবেনা ঋণ। বিভিন্ন স্থানে বামপন্থীরা সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ঋণ মকুবের দাবিতে বিক্ষোভ আন্দোলন ধরনা সংঘটিত করছে কিন্তু সেই বলে না চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী!


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।