রঘুনাথ ভট্টাচার্য: চিন্তন নিউজ:২রা জর্জ ফ্লয়েড ! আপনাকে যারা খুন করল তাদের আপনার দেশবাসী তথা সারা বিশ্বের সচেতন জনতা ক্ষমা করবে না। যে জনরোষ পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের এক অপদার্থ উদ্বায়ু শীর্ষ প্রশাসককে বাঙ্কারে পাঠিয়েছে, সে তো আসলে জনজাগরণ! সেই জাগ্রত চেতনাই অধুনা অবহেলিত মানবতার দেশে জনতার অধিকার পুনরুদ্ধার করবে। এ বিশ্বের আপামর বামপন্থী মানুষের দৃঢ় বিশ্বাস।
মিঃ ফ্লয়েড আপনার আত্মবলিদান যে জন – সচেতনতা সৃষ্টি করলো তাই অত্যাচারীর উদ্যত হাত ভেঙে দেবে , গুড়িয়ে দেবে। তাই প্রতিক্রিয়ার ধ্বজাধারী ট্রাম্ফ সপরিবারে বাঙ্কারে ঢোকার আগে বামপন্থী মঞ্চ ‘ আ্যন্টিফার ‘ উদ্দেশ্যে বিষোদ্গার করে এই সংগঠনকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে ঘোষণা করার হুমকি দিয়ে গেছেন। হুমকি দিয়েছেন সাধারণ ভাবে দেশের মিডিয়ার বিরুদ্ধেও অভিযোগ মিডিয়া হিংসা ছড়াচ্ছে।মিডিয়ার বক্তব্য, তাঁদের রিপোর্ট বিষ্ফোরিত জনক্রোধেরই প্রকৃত প্রতিচ্ছবি। জনতার গর্জন – ‘ট্রাম্প নিপাত যাক্।’
খবরে প্রকাশ, মিনিয়াপোলিসে অন্যতম প্রতিবাদী জর্জ ফ্লয়েডকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়। বলপ্রয়োগ করে শ্বাসরুদ্ধ করে তাকে মারা হয় পুলিশ হেফাজতে। সেই বিক্ষোভের শুরু। অতি দ্রুত তা প্রায় সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। উল্লেখ্য হল, বিক্ষোভ দানা বাঁধে সম্পদ ও ক্ষমতাশালীদের সম্পত্তি ঘিরে। পুলিশের টিয়ার গ্যাস ইত্যাদিকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা অবরোধ করে ক্ষমতার কেন্দ্র ‘ হোয়াইট হাউস ‘। দোর্দন্ড প্রতাপ
বিশ্বকাপানো রাষ্ট্রপতি সপরিবারে ঢুকে পড়েন
বাঙ্কারে ( অভিজ্ঞ জন বলতে পারবেন এর আগে কোনো মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে নিজের নাগরিকদের ভয়ে বাঙ্কারে লুকাতে হয়েছিল কি না)এর পরেই বিক্ষোভের ব্যাপকতা আরও বৃদ্ধি পায়। এপর্যন্ত প্রাণ গেছে ৫ জনের। ৪০ শহরে
কারফিউ জারি করা হয়েছে। কয়েক হাজার মানুষ গ্রেফতার হয়েছেন।
ওয়াশিংটন, নিউ ইয়র্কে ভাঙচুর ও আগুন লাগানো অব্যাহত। হোয়াইট হাউস ঘিরে রেখেছে ন্যাশনাল গার্ড ও সেনাবাহিনী। তা সত্ত্বেও ভবনের চারিধারে আগুন জ্বলতে দেখা যাচ্ছে।এপি-য়ের খবর শুক্রবার বিক্ষোভকারীরা
হোয়াইট হাউসের এলাকায় ঢুকে পড়তে পারত। বিখ্যাত ভবন গুলির কাঁচ ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে, ওয়াশিংটন মূর্তির সামনে জ্বলেছে আগুণ। নিউ ইয়র্কে দোতলা সমান উঁচু আগুন দীর্ঘক্ষণ ধরে জ্বলছে।
বার্মিংহামে কনফেডারেশন্স স্মারক ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। রাজপথে বহু গাড়ী জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।পুলিশ প্রথমে টিয়ারগ্যাস ছুড়ে অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করে। পরলে পুলিশকেই হাঁটু মুড়ে বসে ক্ষমা চাইতে দেখা যায় ক্রুদ্ধ জনতার কাছে।
ফিলাডেলফিয়ায় পুলিশ-জনতাখন্ডযুদ্ধ,
নিউ ইয়র্কে ব্রুকলিনের দিকে মিছিল হয়েছে, ম্যানহাটান সেতু অবরুদ্ধ।ক্যালিফোর্নিয়ায় শহরের সমস্ত সরকারি ভবন বন্ধ। মিঃ ফ্লয়েড এর শহর হিউস্টন কার্যত বিক্ষোভকারীদের দখলে। সেখানে পুলিশপ্রধানকে বাহিনী সহ বিক্ষোভকারীদের মিছিলের সঙ্গে হাঁটতে বাধ্য করা হয়। মিচিগানের পুলিশশেরিফ প্রতিবাদ বিক্ষোভে যোগ দেন। ফ্লোরিডায়, সান্তাক্রুজে পুলিশ টুইট করে জানায় যে তারাও বিক্ষোভে সামিল।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্দেশ দিয়েছিলেন গুলি চালাতে, কুকুর লেলিয়ে দিয়ে ওদের সায়েস্তা করা হোক। তা কার্যকর হয়নি। পরিবর্তে ট্রাম্পের সম্পত্তি গুলিতে স্প্রেড দিয়ে লিখে দেওয়া হয়েছে ‘ ট্রাম্প নিপাত যাক।’ সারা দেশ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।এমনকি বহু বিশিষ্টজনেরা বিক্ষোভে যোগ দেন।লেডি গাগার মতো বিখ্যাত শিল্পীব্যক্তিত্ব বলেন,’ এক মূর্খ বর্ণবিদ্বেষী দখল করে আছে গুরুত্বপূর্ণ প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা।’নিহত জর্জের ভাই ট্রাম্পয়ের কথা বলতেঅস্বীকার করেন বলে খবর। তিনি নাকি বলেন ‘ তোমার কথা আমি শুনতে চাই না।’
এই প্রেক্ষাপটে নজর কাড়া ঘটনা হল ঘোষিত ফ্যাসিস্ট বিরোধী সংগঠন ‘ অ্যান্টিফ’য়ের ভূমিকা। কৃষ্ণাঙ্গ জনতার সংগঠনসমুহ সহ সমস্ত স্বৈরতন্ত্রের বিরোধী সংগঠনগুলোর মিলিত মঞ্চের দায়িত্ব সামাল দিয়ে যাচ্ছে বামপন্থী অ্যান্টিফ। একথা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রকাশ্যে বলে এই সংগঠনকে শাস্তি দেওয়ার হুঙ্কারও দেন বিক্ষোভের শুরুতে। সংশ্লিষ্ট সকলেই স্বীকার করেন যে এই বিক্ষোভের চিরস্থায়ী ছাপ থেকে যাবে আমেরিকার রাজনৈতিক ইতিহাসে।মনে রাখতে হবে, লাতিন আমেরিকার চিত্রও দোদুল্যমান। এই জনরোষের কেন্দ্র মাত্র একটি মৃত্যু নয়, তা ব্যাপক ও আরো গভীর বহুমুখী ব্যথাভরা অভিযোগের প্রতিফলন।
করোনায় বিধ্বস্ত সারা দেশ,এক লক্ষর বেশি লোক ইতিমধ্যে মৃত। প্রায় ১৮ লক্ষ লোক করোনা আক্রান্ত। লক্ষ লক্ষ লোক দারিদ্র্যপীড়িত। দীর্ঘ কর্মবিহীনতা। জাতিদ্বেষের বিষে নীল সারা সমাজ। সেই জমা ক্ষোভের বাঁধ ভেঙে পড়েছে আজকার এক মৃত্যু – আঘাতে।
সারা বিশ্বের চোখ এখন আমেরিকায় নিবদ্ধ। যেন বলছে, কোনো বিশ্ব সমস্যা সৃষ্টি হয়ে যাওয়াও অসম্ভব নয় বলেও অনেকে চিন্তিত।আকাশবাণী শোনা যায় –
‘ সাধু সাবধান ‘।