দীপশুভ্র সান্যাল:চিন্তন নিউজ:- ৫ জুলাই:-
ময়নাগুড়ির প্রাক্তন বিধায়ক বর্তমান পৌরসভার চেয়ারম্যানের শিক্ষকদের সম্পর্কে দায়িত্বজ্ঞানহীন কুরুচিকর বক্তব্যের বিরোধিতা করে স্মারকলিপি প্রদান করল এ বি পি টি এ। মঙ্গলবার দুপুরে জলপাইগুড়ির জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের কাছে ঘটনার বিবরণ জানিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করে প্রতিবাদ জানান প্রাথমিক শিক্ষকরা।
স্মারকলিপিতে এবিপিটিএ র নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেনএকাধিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর মারফত তারা জানতে পারছেন যে ময়নাগুড়ির পৌরসভার পৌরপতি অনন্ত দেব অধিকারী ময়নাগুড়ি উত্তর মন্ডলের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক এর অফিস উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে একটি সভায় শিক্ষক এবং শিক্ষা আধিকারিকদের সম্পর্কে অপমানজনক মন্তব্য করেন। এই মন্তব্যের সংগঠনগত ভাবে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ও এই বক্তব্যের নিন্দা করেন নেতৃবৃন্দ। এবিপি টিএ র জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক বিপ্লব ঝা বলেন সংগঠন গত ভাবে আমরা মনে করি যে শিক্ষক শিক্ষিকারা যথেষ্ট দায়িত্বের সাথে বিদ্যালয় পঠন-পাঠনের সাথে যুক্ত থাকে, দুই একটি ব্যতিক্রমী ঘটনাকে উদাহরণ করা নিশ্চিত ভাবেই উচিত নয় বলেই আমরা মনে করি। দুই বছর লকডাউন এর সময় কালে বিদ্যালয়ের পরিকাঠামোগত সমস্যা বৃদ্ধি পায়। রাজ্য সরকার এই বিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামো উন্নত করবার জন্য কিছু অর্থ বরাদ্দ করে যা গ্রামীণ বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে বিডিও অফিস মারফত এবং শহরের বিদ্যালয় গুলোর ক্ষেত্রে পৌরসভার মারফত তা ব্যয় করা হয়। বাস্তবে যেটা দেখা যাচ্ছে যে বেশিরভাগ স্কুলে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল তার চাইতে অনেক কম অর্থ ব্যয় করা হয়েছে, এক্ষেত্রে বিদ্যালয় বা এস আই দের কে কোনো ভাবেই তদারকির জন্য যুক্ত করা হয়নি এবং সঠিকভাবে কাজ সম্পূর্ণ করা হয়নি। এই নিয়ে বারংবার শিক্ষা দপ্তর সহ বিভিন্ন আধিকারিক দের সাথে আমরা আলোচনা করেছিলাম কিন্তু আজ অব্দি তার কোনো সুরাহা হয়নি। ছাত্র-ছাত্রীদের বেসরকারি স্কুলে যাওয়ার যে বক্তব্য উনি তুলে ধরেছেন তা খুবই নগন্য, যেটুকু প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে আমরা মনে করছি দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বিশেষ করে সরকারি বিদ্যালয় গুলোকে বন্ধ করে রাখা হয়েছিল গরমের ছুটি নাম করে প্রায় ৬০ দিন বিদ্যালয় বন্ধ রাখার মধ্যে দিয়ে অভিভাবকদের উৎসাহিত করা হয়েছে বেসরকারি স্কুলের শিশুদের ভর্তি করার জন্য। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে মিড ডে মিলে ব্যয় বরাদ্দ বৃদ্ধি করবার জন্য আমরা সংগঠন থেকে দীর্ঘদিন দাবি জানিয়ে এসেছি। আমরা মনে করি ছাত্র-ছাত্রী মাথাপিছু ৪.৯৭ পয়সা সরকার থেকে বরাদ্দ করা হয়েছে যা আজকের দিনে দ্রব্যমূল্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, আমরা সংগঠন থেকে দাবি করেছি যে অবিলম্বে ছাত্র-ছাত্রী মাথাপিছু মিড ডে মিলের ক্ষেত্রে ব্যয় বরাদ্দ ১৫ টাকা করা হোক, এই অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি না করলে শিশুদের পুষ্টিকর খাদ্য সরবারহ করা সম্ভম নয়। এ ছাড়া মিড ডে মিল সংক্রান্ত বেশ কিছু পরিকাঠামো গত সমস্যা রয়েছে। মিড ডে মিল পরিচালনার দায়িত্ব গ্রামীণ বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে বি ডি ও অফিসের এবং শহরের বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে পৌরসভার।
২০১৫ সালে জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ হলে শিক্ষক দিবস উদযাপনের অনুষ্ঠান চলাকালীন জলপাইগুড়ি শহরের সুপ্রতিষ্ঠিত প্রাচীন বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা দেশ বিদেশের ১০ টি পুরস্কার প্রাপ্ত জনপ্রিয় সংগীতের উপর নিত্য পরিবেশন করে। ওই সভাতে তৎকালীন বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারী এই নৃত্য সম্পর্কে সেই বিদ্যালয়ের শিক্ষিকাদের সহ উপস্থিত সকল শিক্ষক শিক্ষিকাদের উদ্দেশ্যে কুরুচিকর মন্তব্য করেন। তৎকালীন ডি পি এস সি এর সভাপতি শ্রী ধরতিমোহন রায়ের কাছে উক্ত ঘটনার প্রতি প্রতিবাদ জানানো হয় সকল শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকে, এবং তৎকালীন সভাপতির উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে অনন্ত দেব অধিকারী কে আগামী দিনে আর ডি পিএসসি সহ শিক্ষা দফতর পরিচালিত কোনো অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে না। এছাড়াও ময়নাগুড়িতে বিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার একটি সভায় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উদ্দেশ্যে কুরুচিকর মন্তব্য করেন। তা নিয়েও শিক্ষক শিক্ষিকাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। অনন্ত দেব অধিকারী পুনরায় ময়নাগুড়ির উত্তর মন্ডলের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক এর কার্যালয় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষা আধিকারিকদের সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্য করেন। আগামী দিনে যেসকল ব্যক্তিবর্গ শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ-শিক্ষার সাথে যুক্ত আধিকারিকদের কুরুচিকর ভাষায় আক্রমণ করছেন তাদেরকে শিক্ষা সংক্রান্ত কোন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাবার আগে বিবেচনা করবার আবেদন রাখছি।
কর্মসূচিতে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নীলাদ্রি অধিকারী, জয়দীপ মুখার্জি, প্রসুন কর, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী সহ এবিপিটিএর অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
![](https://chintannews.com/wp-content/uploads/2022/07/IMG-20220705-WA0032-1024x768.jpg)