জেলা

উন্নত চেতনার পরিচয় দিলেন জলপাইগুড়ির চা শ্রমিকরা:


দীপশুভ্র সান্যাল: জলপাইগুড়ি:চিন্তন নিউজ:১৬ই অক্টোবর:- কভিড পরিস্থিতি মাথায় রেখে গত বছরের মতো এবছরও বাতিল হলো জলপাইগুড়ি ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগানের আদিবাসী নৃত্য প্রতিযোগিতা ও বিজয়া দশমী উপলক্ষে আয়োজিত মেলা। এই আদিবাসী নৃত্যের প্রতিযোগিতা ও মেলায় প্রতিবছর আশপাশের চা বাগান থেকে বহু মানুষ ভীড় জমান, অতিমারি করোনার কারণে গত বছর থেকে বন্ধ মেলা। এবছর দু-একটি দোকান বসলেও নেই জনসমাগম এবছরও বাতিল হল আদিবাসী নৃত্যের প্রতিযোগিতা।

অপরদিকে উলট পুরাণ জলপাইগুড়ি বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়ীতে গত কয়েক বছরের ভীড়ের রেকর্ড ভেঙে এবছর নজিরবিহীন জনসমাগম ঘটলো জলপাইগুড়ি বৈকন্ঠপুর এস্টেটের রাজবাড়ীতে। বিজয়া দশমীর ভাসান কে কেন্দ্র করে গত কয়েক বছর ধরে মূলত কম বয়সী ছেলে মেয়েরা ভীড় জমান বিসর্জনের দিন। রাজবাড়ীর প্রথাগত রীতি মেনে দেবী মূর্তির বিসর্জনের আগে শূন্যে গুলি করে ঐতিহ্যবাহী জলপাইগুড়ি বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়ীর প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে নিরঞ্জনের ঘাটে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর একে একে দেবী প্রতিমার শরীর থেকে অলংকার খুলে নিয়ে বিসর্জনের ঘাটে দিকে প্রতিমা নিয়ে রওনা দেন রাজপরিবারের সদস্য ও পূজার সাথে যুক্ত মূলত জলপাইগুড়ি বৈকুন্ঠপুর এস্টেটের পুরনো কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দারা। এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অর্থাৎ রাজবাড়ীর ঠাকুরদালান থেকে প্রতিমা বের করে প্রথমে অস্ত্র খুলে নেওয়া তার পরবর্তীতে প্রতিমার শরীর থেকে অলংকার খুলে নেওয়া ও তার মাঝে রীতি মেনে ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে নিরঞ্জনের ঘাটে বিরাট আকারের প্রতিমা নিয়ে যেতে প্রায় তিন ঘন্টা সময় ব্যয়িত হয়। আর এই দীর্ঘ সময় ধরে চলে ঢাকের তালে নৃত্য।

করোণা অতিমারির প্রকোপের আগে প্রতিবছর রাজবাড়ীর প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় বিভিন্ন বয়সী দর্শনার্থীরা ভিড় জমাতেন এই গোটা প্রক্রিয়া চাক্ষুষ করতে।এবছর অতি মারির কারণে মাঝবয়সী থেকে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা রাজবাড়ীতে না আসলেও কমবয়সীদের ছেলে মেয়েদের ভিড় ছাপিয়ে গেল জলপাইগুড়ি শহর ও জেলার যেকোনো পুজোমণ্ডপে গত চারদিন এর মোট দর্শনার্থীর সংখ্যাকে। সপ্তমীর রাতে শহরে দর্শনার্থীদের ভীড় খুব একটা চোখে পড়েনি জলপাইগুড়ি শহরে, কিন্তু অষ্টমী, নবমী রাত পর্যন্ত ভিড়ে ঠাসা ছিল জলপাইগুড়ি শহর ও শহরতলীর প্রতিটি পূজা মন্ডপ। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা ছিল শারদীয় উৎসবের ভীড়ে বাড়বে করোণা। কলকাতার বিভিন্ন পূজা মন্ডপে মানুষের ভীড় দেখে প্রশাসন বাধ্য হয়েছেন ভীড় নিয়ন্ত্রণে যাতায়াত ব্যবস্থা বন্ধ করতে।

উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা গুলোর তুলনায় গত দু’বছরে জলপাইগুড়ি জেলা ও বিশেষত জলপাইগুড়ি শহরে করোনার গ্রাফ ছিল ঊর্ধ্বগামী গতবছর রাজ্যের অন্যান্য জেলায় কভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলেও কিছুতেই বাগে আনা যাচ্ছিল না জলপাইগুড়ি জেলার করোনা অতিমারির ভয়াবহতাকে। গত বছর জলপাইগুড়ি শহরের পরিস্থিতি এমন জায়গায় দাঁড়ায় করোনার প্রায় শেষ লগ্নে জলপাইগুড়ি শহরে প্রশাসনিক নির্দেশে জলপাইগুড়ি মিউনিসিপ্যালিটি এলাকায় লকডাউন ঘোষণা করতে হয়। আশ্চর্যের বিষয় হলো সবকিছু ভুলে এবছর জলপাইগুড়ি শহর দেখলো কভিড অতিমাড়ির আতঙ্ককে জয় করে পুজো প্যান্ডেলে দর্শনার্থীদের লাগামছাড়া ভিড় ও উচ্ছাস। এর পাশাপাশি শারদ উৎসবের শেষ লগ্নে জলপাইগুড়ি বৈকুন্ঠপুর এস্টেটের প্রতিমা নিরঞ্জনের ঘাটে পুলিশ প্রশাসনের সমস্ত কর্তা ব্যক্তি এস পি ডি এস পি, আই সি র উপস্থিতিতে কভিড বিধি সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করে উদ্দাম নৃত্য। মূলত শহরের শিক্ষিত ঘরের ছেলে মেয়েরাই রাজবাড়ীর যখন প্রতিমা নিরঞ্জনের ঘাটে ধুলো উড়িয়ে উদ্দাম নৃত্যে মাতলেন তখন শহরে করোনার গ্রাফ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।

গতকালও জলপাইগুড়িতে সরকারি হিসেবে ১০ জন নতুন করে কভিড আক্রান্ত হয়েছেন। সেখানে অর্ধ শিক্ষিত,স্বল্প শিক্ষিত চা শ্রমিকরা তাদের প্রথাগত কর্মসূচি আদিবাসী নৃত্য ও বিজয়া দশমীকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত মেলা বাতিল করে যেন আরেকবার উন্নত চেতনার পরিচয় দিলেন। যেখানে উৎসবের আনন্দে জলপাইগুড়ি বৈকুন্ঠপুর রাজ এস্টেটে ফস্কা গেল করোনা সংক্রান্ত প্রশাসনিক বিধি নিষেধ, সেখানে চা শ্রমিকরা উৎসব বাতিল করে যেন বার্তা দিলেন নিজে বাঁচুন অন্যকে বাঁচান।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।