কলমের খোঁচা

টপ্পাচার্য ‘কালী মির্জা’ — পঙ্কজ পাঠক


নিজস্ব প্রতিবেদন: চিন্তন নিউজ: ২০শে এপ্রিল:– বাংলাদেশে টপ্পা গান প্রচলনে পুরোধাপুরুষ বলতে যাঁর নাম প্রথমেই মনে আসে তিনি হ’লেন নিধুবাবু। কিন্তু আরও একজন বাংলা ও হিন্দুস্থানী দুধরণের টপ্পা রীতির সংগীতচর্চা করেছেন, তাঁর নাম কালী মির্জা। নিধুবাবুর থেকে আট-নয় বছরের ছোট হলেও কালী মির্জাই টপ্পারীতির শিল্পী ও রচয়িতা হিসেবে নিধুবাবুর তুলনায় কিছুটা আগের।

বারাণসি, লখনৌ, দিল্লিতে দশ-এগারো বছর থেকে কালী মির্জা নিজের গ্রাম হুগলি জেলার গুপ্তিপাড়ায় ফেরেন। তিনি বারাণসির শোরি মিঞা – মিঞা গাম্মু – শাদে খাঁর মতো টপ্পা বিশারদদের ঘরানার টপ্পা শিখেছিলেন।তাঁর আসল নাম কালীদাস চট্টোপাধ্যায়। ফারসি ভাষায় ‘মিরজ’ শব্দের মানে রাজপুত্র। অভিজাত ও সম্ভ্রান্ত এমন অর্থেও এই শব্দটি শব্দটি ব্যবহার করা হয়। মির্জা তাঁর পাওয়া উপাধি নয়। তিনি দেখতে খুব সুন্দর ছিলেন। কালীদাস চট্টোপাধ্যায় থেকে কালী মির্জা হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন দরবারি সম্ভ্রান্ত বেশভূষা, আদবকায়দা ও শৌখিনতার জন্য।

তিনি জীবনের বেশি অংশটাই গুপ্তিপাড়ায় গান শিখিয়েছেন, শিষ্যদের মধ্যে নিজের টপ্পা রীতির বিশেষত্বকে সঞ্চারিত করে নিজস্ব ঘরানার সৃষ্টি করেছিলেন। জীবনের শেষ কয়েক বছর কলকাতায় ছিলেন। তিনি যুগপুরুষ রামমোহন রায়কে গান শিখিয়েছিলেন। তিনি অনেক বড় সঙ্গীত বিশারদ ছিলেন বলেই রামমোহন রায় তাঁকে সঙ্গীতগুরু করেছিলেন। অথচ বাংলাদেশের এই আদি টপ্পাচার্যের নাম বিস্মৃতির অতলেই রয়ে গেছে।

কালী মির্জা ছিলেন শাস্ত্রজ্ঞ ও বেদান্তের পন্ডিত। তিনি বর্ধমানেও প্রতাপচাঁদের সভাগায়ক হিসেবে কিছুদিন ছিলেন। পরে পাথুরিয়াঘাটার গোপীমোহন ঠাকুরের সভাগায়ক হন। এই সময়টা তাঁর জীবনের বিশেষ গৌরবের। কলকাতার সঙ্গীতসমাজ তাঁকে মর্যাদায় আসনে বসান। কমলাকান্তের জন্ম কালনায়, সেখানে তিনি বর্ধমানে আসার আগে পর্যন্ত থেকেছেন। গুপ্তিপাড়া থেকে কালনার দূরত্ব বেশি নয়। তাই তিনি কালী মির্জার কাছে টপ্পা গান শিখেছিলেন এমন ধারণা অমূলক নয়। কালী মির্জা যখন বর্ধমান রাজসভার সভাগায়ক ছিলেন তখন কমলাকান্তও সভাপন্ডিত ছিলেন।

এত বড় প্রতিভার অবদান নিয়ে আমাদের আলোচনা করা দরকার। ভুলে যাওয়া এই মানুষটিকে আবার চিনিয়ে দেওয়া দরকার সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে।

ছবি: গুপ্তিপাড়ার বিন্ধ্যবাসিনী মন্দির, এখানেই প্রথম অবিভক্ত বাংলায় বারোয়ারি পুজো হয়েছিল। গুপ্তিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন কালী মির্জা।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।