রাজ্য

সুন্দরবন সেই তিমিরেই


রঘুনাথ ভট্টাচার্য, চিন্তন নিউজ, ৯ জুলাই: উনিশটি ব্লক নিয়ে সুন্দরবন এলাকায় জনসংখ্যা কমবেশি ৪৫ লক্ষ। মাকড়সার জালের মতো ছোট বড় নদী জড়িয়ে আছে গোটা এলাকা জুড়ে, ব-দ্বীপের প্রাণ এরা। কিন্তু এরাই সমুদ্রের জল বয়ে নিয়ে আসে জনপদের অন্দরে। দস্যু জলের করাল গ্রাসে দিন রাত্রির মত চলে ব-দ্বীপের ভাঙ্গা গড়া। এর সঙ্গে লড়াই করে বাঁধ। তাই, এই বাঁধ হল সুন্দরবনের প্রাণের প্রহরী। বাঁধকে রক্ষা করা, ভাঙ্গন থেকে বাঁচিয়ে রাখা এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দায়িত্ব। নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এই কর্মকাণ্ড চলার কথা। কিন্তু বাস্তবে সেরকমটা আদৌ হচ্ছে না।

আয়লার দুর্যোগে সারা এলাকায় প্রায় ৭৮০ কিমি বাঁধ নষ্ট হয়েছিল এক দশকেরও বেশী আগে। এর মধ্যে নদী দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে। বাঁধের কাজ সেই তিমিরেই।

বাঁধের সালতামামি :
মে, ২০১১ – নতুন আশার ফুল ফুটলো।
জুন, ২০১১ – নতুন রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত “জমি অধিগ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বাঁধ তৈরি হবে। জমিদাতাদের পরিবার পিছু একজন করে সরকারি চাকরি পাবেন।”- ঘোষনা হল। সুন্দরবন এলাকার মানুষ উৎসাহিত হল।
ফেব্রুয়ারি, ২০১২ – এলাকায় জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী আবার বললেন বাঁধ হবেই।
মে, ২০১৫ – তৎকালীন সেচমন্ত্রী পাথরপ্রতিমা, সাগর, নামখানা ইত্যাদি এলাকা পরিদর্শনের সময়ে সাংবাদিকদের জানান, “এবার থেকে প্রতি বর্ষার আগে বাঁধের কাজ হবে।”
২০১৯ – বর্ষা দরজায় কড়া নাড়ছে। সরকারি হিসেবে ৭৫ (আনুমানিক) কিমি বাঁধ হয়েছে এ পর্যন্ত।

কেন্দ্র- রাজ্য চাপান উতোর চলেছে যথারীতি। বিধায়করা সরকারি হিসেবের হদিশ পাচ্ছেন না। বলছেন, “কোথায় হয়েছে বাঁধ?” প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী কান্তি গাঙ্গুলি জানালেন, “সার্বিকভাবে বাঁধের যা অবস্থা তাতে পুরো সুন্দরবন বিপন্ন।”

মোট বাঁধ ৩০০০ কিমি। তারমধ্যে ৭৮০ কিমির মত সম্পুর্ণ ধ্বংস হয়ে যায় আয়লার প্রকোপে। কেন্দ্রীয় সরকারের টাস্ক ফোর্স এর চাহিদা অনুযায়ী ৬০০০ কোটি টাকার প্রকল্প পাঠায় রাজ্য। ১০% দেবে রাজ্য, বাকী ৯০% দেবে কেন্দ্র, ‘জাতীয় বিপর্যয়ের পুনর্গঠনের নিয়ম’ অনুয়ায়ী। কিন্তু কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেয়, ‘ রাজ্যকে ২৫% দিতে হবে ‘।

এহ বাহ্য। আয়লার পর পর সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল নিয়ে দিল্লির কাছে দরবারে যেতে চেয়েছিল বামফ্রন্ট। তৃণমূল রাজী না হওয়ায় ফলপ্রসূ হয় নি। তাঁরা তখন কেন্দ্রে শরিক। পরিবর্তে এলাকার দু’জন বিধায়ক কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠিতে টাকা দিতে নিষেধ করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্র ৬৫৮ কোটি টাকা
দিয়েছে বলে জানা যায়।

সুন্দরবনের বিপন্ন জনতার এত হিসাবপত্রে উৎসাহ নেই। তাঁরা উদ্বিগ্ন চোখে তাকিয়ে আছে মাথার উপরে খোলা আকাশের দিকে : প্রকৃতির রূদ্ররোষ আবার কখন তাদের ভাসিয়ে নিয়ে যায়।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।