রাজ্য

সুবিনয় হেমব্রমের সাঁওতালি কবিতা পোস্ট করে সোশ্যাল মিডিয়ায় সাড়া ফেললেন সুবোধ সরকার


মল্লিকা গাঙ্গুলী, চিন্তন নিউজ, ২৪ জুন: সাঁওতাল কবি সুবিনয় হেমব্রম নামটা মাত্র ৪৮ ঘন্টায় সমগ্র ফেসবুক ব্যবহারকারী বাঙালীর কাছে বহুল প্রচারে আনলেন আর কেউ না, তিনি বর্তমান সরকারের স্বনামখ্যাত বিদ্বজ্জন কবি সুবোধ সরকার। দু দিক থেকেই আজ সুবিনয় হেমব্রমের এই কবিতা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

প্রথমতঃ যে আদিবাসী প্রেম নিয়ে এতদিন সরকারের নানান নাট্যকলা, তার পর্দা ফাঁস হতে শুরু করেছে। এই আদিবাসী কবির কবিতার প্রত্যেকটি চরণে, প্রতিটি শব্দবন্ধে সরকার তথা নেত্রীর প্রতি কটাক্ষ স্পষ্ট। কবিতায় কোনো দল বা সরকারের নাম নাই ঠিকই, কিন্তু যখন সুবিনয় লেখেন, “এসব বলছি মানে আমি খাঁটি হেমব্রম নই” বা “আমার চেয়ে আপনি বেশী হেমব্রম, বেশী সংখ্যালঘু বেশী অসহায়” তখন বলিষ্ঠ তীক্ষ্মতায় আদিবাসী সমাজের প্রতি বঞ্চনা প্রকট হয়ে ওঠে!

এই হেমব্রম কবিকেই সরকারের মদতপুষ্ট বিদ্বজ্জনের “সৎ সাহসী” মন্তব্য নিঃসেন্দেহে সরকারের প্রতি অনাস্থার আরও একটা দিক স্পষ্ট করে। যে কবি সুবোধ সরকারকে শাসক দলের মিটিং মিছিলের প্রথম সারির বিশিষ্টজন বলে মানুষ চেনে, সেই শাসকপুষ্ট কবি তার ফেসবুক পোস্টে এমন একটি কবিতা এবং অখ্যাত কবির প্রশস্তি রচনা করে বিতর্কের ঝড় তুলেছেন, এটা আশ্চর্যের বিষয়। সুবিনয় হেমব্রমের কবিতা পোস্ট করে তাঁর নিজস্ব মন্তব্য টি যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ! সুবোধ সরকার স্পষ্ট ভাষায় লিখেছেন, এই সাঁওতাল কবির কবিতাকে তিনি তাঁর পড়া বিভিন্ন ভাষার কবিতার শীর্ষে স্থান দিয়েছেন।

সৎ ও সাহসী লেখার বাঙালী ঐতিহ্যকে স্মরণ করে বিখ্যাত মেক্সিকো কবি অক্টাভিও পাজকে কোট করে লিখেছেন “হিরে বসালেই কবিতা হয় না, কান্না লুকিয়ে উঠে দাঁড়াতে হয়”- এর সঙ্গে নিজে বলেছেন সুবিনয় হেমব্রম কে তিনি চেনেন না, তবু “আমি আপনাকে কান্না লুকিয়ে কুর্নিশ জানাই”- আর এখানেই হাজার বিতর্ক শত শত প্রশ্নের ঝড়! কবি সুবোধ সরকার কোন্ কান্না (অসহায়তা) লুকিয়ে হেমব্রম কে কুর্নিশ জানাতে চান? তিনি কি সুবিনয়ের কবিতার “আপনি” কে স্পষ্ট করে দিতে চান? এই কবিতার মোড়কে সুবোধ সরকারের প্রতিবাদে কোন নতুন বার্তা ধ্বনিত?

যদিও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সুবোধ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করেও তা করা যায় নি, রাজ্যের প্রথম সারির বিদ্বজ্জনের সরকার তথা নেত্রীর প্রতি বিরোধী মনোভাব আপাত প্রচ্ছন্ন থাকলেও সংস্কৃতি সম্পন্ন চেতন মানব মনেও প্রতিবাদী ঘূর্ণি ঘুরপাক খাচ্ছে তা সম্প্রতি নানা ঘটনায় টের পাওয়া যাচ্ছে। সুবোধ সরকারের এই পোস্ট একদিকে সংখ্যালঘু অনগ্রসর জনজাতি শ্রেণীর প্রতি শাসকের অন্তঃসার শূন্য লোকদেখানো উন্নয়নের প্রতিবাদ; অপরদিকে বর্তমান সময়ের সবথেকে উপরতলার বিদ্বজ্জন তকমা আঁটা কবি সাহিত্যিকের নিজস্ব বিরুদ্ধ অভিমত সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচার নিশ্চিত ভাবেই পশ্চিম বাংলার রাজ্য রাজনীতির পালাবদলের ইঙ্গিতবাহী।।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।