দেশ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য

করোনার বিষয় আশয় (৯) এস ,মাতৃত্বের জয়গান গাই !


রঘুনাথ ভট্টাচার্য: চিন্তন নিউজ:১লা জুন:- জীবন যাপনের দৈনন্দিন বৈচিত্র আমাদের আবেগে আপ্লুত করে।কত ঘটনা রোজ ঘটে চলেছে আমাদের সময় ও জগৎ ঘিরে, তার কুল মেলা ভার। কবির ভাষায় , ” মধুর তোমার শেষ যে না পাই।”

করোনার ধ্বংসলীলা অব‍্যাহত। হাহাকার , বিলাপ, নির্নিমেষ বিপন্নতা সব নিয়ে বিক্ষিপ্ত চিন্তায় ব‍্যতিব‍্যস্ত;৪র্থ তালাবন্দির পর ৫ম-এর শিথিলতা কি আরো প্রাণের দাবি নিয়ে এসে হাজির হবে কাল থেকে ? গত ক্ষেপের
শেষ দিনটি খুব শুভ যায়নি তো!

হিসেবে দেখছি ভারতে সংক্রমণ পৃথিবীতে ২০৬ দেশের মধ‍্যে ৭ম-এ উঠে গেল তালা খোলার আগের দিন। মনে আশঙ্কা , তালা খোলা সেচ-খালের ‘লকগেট’খোলার মত না হয়ে যায় ! বিভিন্ন সরকারি কর্তৃপক্ষের চিন্তা-ভাবনাতেও
অনিশ্চয়তার ছাপ স্পষ্ট। গতকাল দেশে রেকর্ড
সংক্রমণ। অবশ‍্য পরীক্ষা কেন্দ্রগুলি সক্রিয় হবার সাথে সাথে সংক্রমণ সংখ্যা বৃদ্ধি তো এক রকম নির্দ্ধারিত ছিল। এখন আরও পরিষ্কার যে, বিপরীত চিন্তায় প্রভাবিত হয়ে তথ‍্য নিয়ে কারচুপির খেলা দেশের পক্ষে কতটা ক্ষতি হয়েছে। আর একটা বিষয়ও স্পষ্ট, করোনা – যুদ্ধে সরকার তার অবস্থান থেকে কিছুটা হলেও সরে আসতে চাইছে। করোনার স্বাভাবিক শক্তি মেনে নিয়ে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতার পথ ছেড়ে দিয়ে শুধু ‘ডিফেন্সিভ’ খেলা এবং ভ‍্যাক্সিন আবিস্কার পর্যন্ত অপেক্ষা করা। অবশ্য তা ছাড়া করারই বা কী আছে? কারন, কার্যতঃ দু’তিনটি দেশ বাদ দিয়ে আর সবাই( ভারত সহ ) তো প্রায় চার মাস পিছিয়ে।

এত সব বিষন্ন চিন্তার আঁধারের মধ‍্যে মাতৃত্বের এক ঝলক আলো স্থিরবিদ‍্যুৎ হয়ে রয়েছে গেল মনের ভাঁড়ারে। সদ‍্য মা হয়েছেন এক স্বাস্থ্যসেবিকা একটি সরকারি হাসপাতালে। ছেলের বয়স সাত/আট মাস। মাতৃদুগ্ধপোষ‍্য। বাড়িতে স্বামীর দায়িত্বে রেখে এসে চাকরি করতে এসেছেন। তাঁর নাইট ডিউটি। ওয়ার্ডে এক সদ‍্যপ্রসূতি এসেছেন তাঁর শিশুসহ। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখনো বুকের অমৃতধারা স্তব্ধ। শিশুটি আকুতি ভরে কেঁদে চলেছে। অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ওয়ার্ডে আরও আট’নয় জন সদ‍্য প্রসূতি ছিলেন। সাধারন নিয়ম অনুসারেই কর্তব্যরত সেবিকা অন‍্য মায়ের সাহায্য নিয়ে ধারাহীন মায়ের শিশুটিকে শান্ত করবেন।

কিন্তু করোনার ভয়ে সে কাজটা করা সে রাতে সম্ভব ছিল না। করোনার পরোক্ষ আহ্বানে সে দিন মা-সেবিকার মাতৃত্বের ফল্গুধারার দ্বার খুলে গেল। স্বামীকে বোঝালেন , তাঁর নিজের সন্তানের সুরক্ষার জন‍্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা
নিয়েই তিনি ঐ শিশুটিকে তিনি বাঁচাবেন, সে যেন দুশ্চিন্তা না করে। তারপরে এল সেই মুহূর্ত। তিনি শুস্ক মায়ের শিশুটিকে পরম স্নেহে কোলে তুলে নিলেন। সে রাতে ঐ হাসপাতালে মাতৃত্ব- বন্দনার যে ছবি আঁকা হয়ে রইল , তা কি করোনার তুলিতে ! করোনাই তো আমাদের সে রাতে ঐ মুহূর্তগুলি দান করে গেল ! সময় ঘূর্ণির মত। ক্ষণে ক্ষণে তার রং বদলায়। মানুষ সজাগ থাকলে দেখতে পাই।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।