দেশ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য

জেএন‌ইউ ছাত্র সংসদের মসনদ রক্ষার ভার এবার বাংলার মেয়ে ঐশীর ওপর।


মল্লিকা গাঙ্গুলি:চিন্তন নিউজ:৭ই সেপ্টেম্বর:–দিল্লীর জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের মসনদ রক্ষার ভার এবার বাংলার মেয়ে ঐশীর।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিধানসভা বা লোকসভার মতোই কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের নির্বাচন ও যথেষ্ট তাৎপর্য বাহী। গতকাল 6 সেপ্টেম্বর হয়ে গেল রাজধানীর জে এন ইউ ইউনিভার্সিটির ছাত্র সংসদ নির্বাচন। এ বছর এই নির্বাচন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, কারন বামেদের আঁতুড়ঘর বলে খ্যাত জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ বরাবরই বামেদের হাতে। এ বছর বিজেপি ছাত্র সংগঠন এটি ছিনিয়ে নিতে মরিয়া; তার উপর এবার লড়াই টা আবার ত্রিমুখী। এবিভিপি অবশ্য জে এন ইউ সংসদ হাতে আনা সহজ নয় জেনেই প্রথম থেকেই তারা মারমুখী। মূল লড়াইটা এই সংসদের সভাপতি পদ নিয়ে। এবার সভাপতি পদের জন্য প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন বাম জোটের হয়ে ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনশিপের এম ফিল এর ছাত্রী বাঙালী কন্যা ঐশী, এবিভিপি এর মনীশ জানগিরি, এবং দলিত সংগঠন বিরসা আম্বেদকর ফুলে স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ) এর জিতেন্দ্র সুনা। এবিভিপি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল দুর্গাপুরের মেয়ে ঐশীর কাছে এবারের সভাপতি পদের প্রধান দুশ্চিন্তা এবিভিপি নয় বরং বিসিএসএ। কারন ওড়িষার নিয়মগিরির আদিবাসী ছাত্র জিতেন্দ্র যেভাবে আসাম থেকে কাশ্মীর এবং দলিত আদিবাসী মহিলাদের ক্ষমতায়নে জোর দিয়েছে তাতে অনেকেরই ধারনা তারা বাম ভোটে ভাগ বসাবে, আর বাম ভোট ভাগ হলে এবিভিপি যথেষ্ট সুবিধা হয়ে যাবে।
তবে হাল ছাড়ার পাত্রী নন ঐশী ও তার সাথীরা। নির্বাচনের ঠিক আগের দিন শেষ প্রহরে ঐশীর তীক্ষ্ম বক্তব্যে ছাত্র সমাজ চরম উৎসাহিত। তিনি বিজেপির সাম্প্রদায়িক ও অগণতান্ত্রিক নীতির বিরুদ্ধে সরাসরি প্রশ্ন তোলেন। মোদি সরকারের কাশ্মীর নীতি থেকে বিভিন্ন লাভজনক সংস্থার বেসরকারী করনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন যেভাবে দেশে পুঁজিবাদী ক্ষমতা বিস্তার চলছে কিছু দিনের মধ্যেই দেশের নাম “রিলায়েন্স জিও ইন্ডিয়া” হয়ে যাবে! তিনি ইউপিএ সরকারের ও সমালোচনা করতে ছাড়েন নি। ঐশী সংঘ ঘনিষ্ঠ জে এন ইউ উপাচার্যের প্রতি কটাক্ষ করে বলেন উনি রোমিলা থাপারের কাজের মূল্যায়ন করেন। ঐশীর ভাষায়- এরা মুখে আম্বেদকরের নাম করে আর তার মূর্তি ভেঙে সভারকারের মূর্তি বসায়। তিনি যখন বলেন বিজেপির হত্যা কান্ডের শিকার গৌরী লঙ্কেশ, কালবুর্গী,জুনাইদদের আমলা ভুলিনি ভুলব না! তখন ছাত্রছাত্রীরা হাত তালিতে ফেটে পড়ে। নির্বাচনের পূর্ব সন্ধ্যায় ঐশীর বক্তৃতার অগ্নিবর্ষনে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস উত্তাল হলে এবিভিপির বানর সেনারা প্রবল হৈ চৈ শুরু করে দেয়। বাম ও বিজেপি ছাত্রদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও শুরু হয়। নির্বাচনের পূর্ব সন্ধ্যায় এই উত্তেজনা পুলিশের তৎপরতায় বেশি দূর না গড়ালেও জে এন ইউ এর বাম শিবিরে এবং বিশ্ব বিদ্যালয় চত্বরে এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে।

অবশেষে গতকাল মোটামুটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ জে এন ইউ ছাত্র সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে, গননার কাজ চলছে। আর মাত্র কয়েক ঘন্টা… গেরুয়া সন্ত্রাস স্তব্ধ করতে জওহর লাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আকাশ লাল আবীরে রাঙিয়ে এবার ও রক্তিম অরুণোদয় হবে এই দৃপ্ত আশা ঐশীরা রাখে!!


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।