চিন্তন নিউজ: ২১শে এপ্রিল:- বোসপাড়া লেন থেকে বেরুলেন নির্মল কুমার বসু।
দেকলেন, , একটা ছোটখাট চেহারার , বেশ চাঁদ পানা মুকের ছেলে তরবরিয়ে আসচে।নির্মল জানলেন চাইলেন; কোতায় যাচ্চো গো?
ছেলেটির উত্তর; রাধা সিনেমার পাশে।
বুঝে নিলেন নির্মল কুমার।
ও বুয়েচি, তা কিসের হজমি কিনবে গো?
অবাক ছেলেটির উত্তর; আমসত্ত্বের।
নির্মল; তা মিষ্টি ,না, ঝাল টা কিনবে?
ছেলেটা ভাবল তাঁর উপন্যাসের খিটকমল মার্কা বুড়ো টা খাবারদাবাড়ের ব্যাপারটা জানে তো বেশ।একটু মজা করেই জানতে চাইল;
তা দাদু আপনার কোনটা লাগে ভালো?
নির্মলের উত্তর; বাপুকে কিন্তু ওই নোয়াখালীতে বসে আমি ঘোতনের মিষ্টি আমসত্ত্ব খাইয়েচি।
ছেলেটি ভেবে বসল, উত্তর কলকাতা তো, এ তো আর তাঁদের মুদিয়ালি নয়, পাড়ায় পাড়ায় টেনিদা।
নির্মল তখন বলে উঠলেন; বুইলে হে ছোকরা, তোমাদের বয়সে ওই ফানুস কিন্তু উড়িয়েছি ওই রামকান্ত বোস লেনের গুদাম বাড়ির পাশের মাঠ থেকে।একন আবার তোমাদের দেকতে এসে তোমার ‘ ফানুস’ টা পড়লুম
ওড়ানোর বদলে পড়া।
দুজনেই খেয়াল করে নি।হাঁটতে হাঁটতে দুজনেই বড়ো রাস্তার উপরে।একটা মদের দোকানের উপরের ঝুল বারান্দা থেকে বেশ একজন গোলগাল বৃদ্ধা ডাকলেন বয়সস্থ মানুষটিকে।
বলি অ নিম্মলদা, শিশিরবাবু এয়েচেন।আসবেন নাকি?
অ প্রভা, আগে বল দিকি নি, কেতকী কেন অমন আদো আদো করে সুচিত্রার লিপি ডায়লগ দিল?
বড়বাবুর নিকি শিকতে পড়তে কি পেরেচে আমার কেতি?
তা বটে , তা বটে বলে নির্মল মার্কস আর বাপু যদি তাঁদের মতো ফিরে আসেন এই কলকেতা শহরে, কি কতা কইবেন তাঁরা, এই মজার তজ্জা শিশিরবাবুর হঙ্গে করতে প্রভার দুয়োর পানে যাওয়ার আগে ডাকলেন;
এসো স্মরণজিৎ!!
তা স্মরণজিৎ কারো আবদার ঠেলতে পারে নি কো।গুটি গুটি পায়ে লম্বা টিকটিকে বুড়োটার পেচন পেচন সিঁড়ি দে উটতে নাগলো সে।
টিপিকাল সুতানুটি ঘরানার সিঁড়ি অবশ্য নয়।গিরীশ অ্যাভিনিউ আর আহিরীটোলা– কোনটা বেশি বনেদিয়ানার হকদার? সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতেই মনে প্রশ্নটা জেগেছিল স্মরণজিৎয়ের।
ভাবনাটা কি করে উপরের এই বুড়োটা টের পেয়ে গেল?আরে এই বুড়ো টাকে তো খিটকমল মার্কা দেখতে নয়- মনে মনে ভাবে স্মরণজিৎ।
তোমার সেই হর ঢোল লেনের শোভার মায়ের বাড়ির মতো সব বাড়ি ই হবে– তা ধরে নিলে কেন হে ছোকড়া?-
বৃদ্ধের গলার আওয়াজে একটু কনফিউজড স্মরণজিৎ।অনেকটা ‘ জলসাঘর’ র বিশ্বম্বর রায়ের প্যাটার্নের অ্যাকসেন্ট না? বুড়ো নয়, স্মরণজিৎ য়ের কাছে তখন বরুয়া গলার গিলে করা পাঞ্জাবি আর চুনোট ধুতি পরা মানুষটি ,’ বৃদ্ধ’ ।
শোনো ভায়া, কন্ঠস্বরে মডুলেশন আসবে, তা বলে গলা ভাঙবে না।ফলস ভয়েস বেরুবে না গলা দিয়ে–
বৃদ্ধের কথা শুনে স্মরণজিৎয়ের সঙ্গী বৃদ্ধটি বলে উঠলেন; তা শিশিরবাবু , একবার ‘ সীতা’ র ডায়লগ টা শুনিয়েই দিন না ছোকরাকে।
না বাপু ,নির্মলবাবু।এখন ‘ সীতা’ বলে চ্যাঁচালে আমাকে সোজা কলুটোলার মুল্লী ধরে ধরে নিয়ে যাবে– বলে হাসতে লাগলেন তিনি।
স্মরণজিৎ তো একটু বেশি ই ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেছে।ভাবছে, একি রে বাবা, অনীক দত্তের পরের সিনেমার শুটিংয়েই চলে এসেছি নাকি?ভাবনাটা গোত্তা মারতেই দেখে ধাক্কা খেয়েছে ল্যাপটপের কোনা দিয়ে।কাল রাতে লিখতে লিখতে ঘুমের জাদুতে অবশ হয়ে পড়বার সময় ল্যাপটপ টা স্যাট ডাউন করতে ভুলে গিয়েছিল স্মরণজিৎ চক্রবর্তী।
![](https://chintannews.com/wp-content/uploads/2020/04/SAVE_20200331_143920-960x642.jpeg)