দেবু রায়: নিজস্ব প্রতিবেদন:-চিন্তন নিউজ:-১৩ই নভেম্বর:-ভুয়া খবর, কুৎসাও বিষাক্ত সাম্প্রদায়িক প্রচার দক্ষিণপন্থী রাজনীতির মূল উপাদান । এসব উপাদান গুলি সংঘ পরিবার প্রাক স্বাধীনতা ও তার পরবর্তী কালে নিজেদের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে কাজে লাগিয়েছে । কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের হাত ধরে সংঘ পরিবার এইসব উপাদানগুলি প্রচার প্রসার ঘটাতে ভারতের সব কটি রাজনৈতিক শক্তিকে পেছনে ফেলে কর্পোরেট পুঁজির সহযোগিতায় কাঠামো দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছে। এই কাঠামোর কৃত্রিম জনমত ভারতের পরিণত গণতন্ত্রকে এক চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করিয়েছে l কর্পোরেট পুঁজির ঢালাও সহযোগিতায় সংঘ পরিবার ভারতের বিশ্বের সর্ববৃহৎ সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম গুলিতে নিজেদের প্রোপাগান্ডা চালানোর জন্য লক্ষ্য কোটি টাকার নামে-বেনামে বিজ্ঞাপন দেয়। অন্য কোনো রাজনৈতিক শক্তির পক্ষে এত বিপুল পরিমাণ ব্যয় বহন করা প্রায় অসম্ভব l
কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের এই ধারণা ভুল প্রমাণিত করল thequant.com নামে একটি সর্বভারতীয় নিউজ পোর্টাল। সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস চলতি বছরের আগস্ট মাসে সকলকে তাক লাগিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ ফেসবুকে বিজ্ঞাপন ব্যয় বহন কারী রাজনৈতিক দল হিসেবে উঠে এলো। দলের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস এক মাসে ৭৭ টি বিজ্ঞাপন দিয়ে ১১ লক্ষ ১৭ হাজার টাকা ব্যয় করে সারা ভারতে প্রথম স্থানে নাম উঠে এসেছে l ফেসবুক অ্যাড লাইব্রেরীর তথ্য অনুযায়ী তৃণমূল কংগ্রেস ২০১৯ এর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আগস্ট দুই হাজার কুড়ি পর্যন্ত অফিশিয়াল পেজ এর মোট বিজ্ঞাপন এর পরিমান ৪৯ লক্ষ টাকা। দলের রাজনৈতিক পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শ অনুযায়ী ইয়ুথ ইন পলিটিক্স, বাংলার গর্ব মমতা, বাংলার যুব শক্তি ও জেলা তৃণমূল কংগ্রেস, রাজ্যের মন্ত্রী দের ফেসবুক পেজ থেকে দলের প্রচার চলে। বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী এত বৃহৎ পরিমাণ বিজ্ঞাপন ব্যয় মাত্র পশ্চিমবঙ্গ কেন্দ্রিক পেজগুলো থেকে ব্যয় যা সংঘ পরিবারকেও তাক লাগিয়ে দেয়, যা তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে সম্ভব। পরিমাণটা কয়েকশো কোটি ছাড়িয়ে যাবে l
অন্য একটি হিসেবে রাজ্য কেন্দ্রিক ফেসবুক বিজ্ঞাপন এর হিসেব দেখা যাচ্ছে যে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস চলতি বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বর তিন মাসে পাঁচ খানা পেজ থেকে মোট ৬০ লক্ষ টাকার বিজ্ঞাপন দিয়েছে l রাজ্য বিজেপি তাদের আইটি সেল এর বিভিন্ন চারটি পেজ থেকে চলতি বছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত পঁয়ত্রিশ লক্ষ টাকার বিজ্ঞাপন দিয়েছে l নির্মমতা, মোদিপাড়া, দা ফ্রাস্ট্রেটেড বেঙ্গলি এগুলো বিজেপি আইটি সেলের পেজ l
ভাবছেন এই সময়ে বামেদের পরিচালিত ফেসবুক পেজ এর খরচ কত? তাহলে জেনে রাখুন পরিমাণটা শূণ্য।
এই বিজ্ঞাপন ব্যয় গুলি হয়েছে তীব্র অর্থনৈতিক সংকট ও করোনা মহামারী, আম্ফান ঝড় ভয়ংকর বিভীষিকার মধ্যে যা মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ছিল। ঠিক সেই সময় রাজ্যের শাসক দল ও কেন্দ্রের শাসকদলের বিজ্ঞাপনী ব্যয় মানুষের যন্ত্রণার ওপর এক নির্মম উপহাস ও বিদ্রুপ। মানুষের অর্থনৈতিক সংকোচন হলেও রাজনৈতিক দলগুলি কে সাহায্য করার জন্য কর্পোরেট পুঁজি ভালোমতো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে নিজেদের প্রয়োজনে । এই বিপুল পরিমান ব্যয় যদি ত্রাণ হিসেবে ওই সময় মানুষের কাছে পৌঁছানো যেত। মানুষ কিছুটা রেহাই পেতেন । দক্ষিণপন্থী দলগুলোর শ্রেণি দৃষ্টিভঙ্গিতে সম্ভবপর নয়। ঠিক সেই সময় বামপন্থীরা রাজ্যে সীমিত ক্ষমতায় শ্রমজীবী ক্যান্টিন, শ্রমজীবী বাজার ও আম্ফান ঝড়ের সময়, উত্তরবঙ্গ বন্যার কমিউনিটি কিচেন এর মাধ্যমে জনকল্যাণমূলক কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল । মতাদর্শের পার্থক্য এখানেই ।