দেশ

রাষ্ট্রীয় শিক্ষা নীতি ২০২০___শিক্ষা বিরোধী, বিজ্ঞান বিরোধী, জনবিরোধী। …..


সীমা বিশ্বাস: আসখম,চিন্তন নিউজ:৩০শে অক্টোবর:– রাষ্ট্রীয় শিক্ষা নীতি ২০২০ এ আধুনিকতার প্রলেপ আছে, বহু চমৎকারিত্ব নুতন নীতি আছে কিন্তু এই নুতন নীতি পশ্চাৎপদ, বিজ্ঞানবিরোধী। শিক্ষাকে লাভজনক ব্যবসা হিসেবে গণ্য করা কর্পোরেট গোষ্ঠী তথা ঐশ্বর্য শালী শ্রেণীর  স্বার্থেই নুতন শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ গত সেপ্টেম্বরে অসমের তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ পায় যে ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করার জন্য অন্যান্য বিষয়ের ন্যায় জ্যোতিষ শাস্ত্রকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

মর্যাদা পুর্ণ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এই কান্ডে স্তম্ভিত হয় অসমের যুক্তিবাদী এবং বৈজ্ঞানিক মানসিকতা সম্পন্ন বহু লোক, শিক্ষাবিদ বিজ্ঞানী এবং সচেতন অংশের শিক্ষা প্রেমীরা প্রতিবাদ জানায়। সামাজিক মাধ্যমে শিক্ষানুষ্ঠানের বহু সংখ্যক ছাত্রছাত্রী প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে এবং প্রতিবাদ সাব্যস্ত করে। আধুনিক মন তথা প্রগতিশীল চিন্তা এবং যুক্তিবাদী অংশের কোনো লোক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের এই অদ্ভূত এবং বিজ্ঞান বিরোধী সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি। তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের অবিবেচক সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করে ইলোরা বিজ্ঞান মঞ্চ এবং ভারতের ছাত্র ফেডারেশন (SFI) এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি তুলে। রাজ্যের শিক্ষা মহলে প্রতিক্রিয়া হয়। জ্যোতিষ শাস্ত্রের পরিবর্তে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা, অধ্যয়ন এবং গবেষণাতে সরকার গুরুত্ব দেওয়া উচিত।চতুর্দিক থেকে প্রতিবাদ হতে থাকায় তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ জ্যোতিষ শাস্ত্রের পাঠক্রম বাদ  দিতে বাধ্য হন। তবে এটা ঠিক যে আশংকা থেকেই যায় যে সম্পুর্ন অবৈজ্ঞানিক জ্যোতিষ শাস্ত্রেকে বিশ্ব বিদ্যালয় পাঠক্রমে অন্তর্ভূক্তির অপচেষ্টা পুনরায় চলতে পারে।বিশ্ব-ব্রক্ষ্মান্ডের সামগ্ৰিক কর্মকাণ্ড ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জ্যোতিষ বিদরা অজ্ঞ অথবা অন্ধ। জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রকাশ্যে নিয়ে আসা নুতন নুতন তথ্য, নুতন নুতন আবিস্কারের চর্চা জ্যোতিষ শাস্ত্রে নিষিদ্ধ।

তবে এটা ঠিক যে তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এটা স্বাধীন সিদ্ধান্ত বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা কখনো হতে পারে না। প্রকৃততে জ্যোতিষ শাস্ত্রকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমে অন্তর্ভূক্তির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার উদগ্ৰীব। ইতিমধ্যে ইন্দিরা গান্ধী মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য খোলাখুলি মত প্রকাশ করেন যে রাষ্ট্রীয় শিক্ষা নীতির আঁধারেই বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যোতিষ শাস্ত্র প্রবর্তন করা হয়েছে। মুলত কেন্দ্রীয় সরকার নুতন শিক্ষা নীতির মাধ্যমে রাজ্য গুলোর অধিকার সংকুচিত করে অতিকেন্দ্রীক এক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনে গুরুত্ব আরোপ করেছে। শিক্ষার ব্যক্তিগতকরণ, বাণিজ্যিকিকরণ এবং সাম্প্রদায়িক কিকরণের পথ সম্পুর্ন উন্মুক্ত করা হয়েছে। গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার দুয়ার ধীরে ধীরে বন্ধ করে দিয়ে ছাত্র সমাজের মধ্যে সৃষ্টি করেছে বৈষম্য এবং ডিজিটাল বিভাজন। তদুপরি শিক্ষা পাঠ্যক্রমে সন্নিবিষ্ট করতে চাইছে অপবিজ্ঞান এবং অন্ধবিশ্বাস।

২০২০ তে ভারতীয় জ্ঞান পদ্ধতি বা সহজ ভাষায় পৌরাণিক তথা পরম্পরা গত শিক্ষাকে প্রয়োজনাধিক গুরুত্ব প্রদান এবং উৎসাহিত করা হয়েছে।বৈদিক বিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপন্ন করার নামে বৈজ্ঞানিক মানসিকতার পরিপন্থী বিষয় গুলো অন্তর্ভুক্ত করার প্রবণতা পরিস্ফুট হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে যে দেশের প্রতিষ্ঠিত সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাষ্ট অব ইন্ডিয়া ৫সেপ্টেম্বরে পরিবেশন করা খবরে প্রকাশ পায় যে মধ্যপ্রদেশ সরকারও মেডিক্যাল কলেজ গুলোতে আর এস এস এর প্রতিস্থাপক হেডগেয়ার, ভারতীয় জনসংঘর (বিজেপির অতীত সংস্করণ)প্রতিস্থাপক দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জীবনী সন্নিবিষ্ট করেছে।এম বি বি এস ডিগ্ৰী লাভ তথা সুচিকিৎসক হবার জন্যএইসব ব্যক্তিদের জীবন দর্শন, মতাদর্শ এবং জীবন চর্চা সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করা কী খুব প্রয়োজন? বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানের বিকাশ, চর্চা গবেষণা তথা সাফল্য গুলো বিশ্বজনীন সম্পদ। মানবজাতি অর্জন করা অভিজ্ঞতা, পর্যবেক্ষণ তথা বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্যে আহরণ করা প্রমাণসিদ্ধ জ্ঞান। বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্ধ বিশ্বাস বিরোধী সংগ্ৰামের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে পড়েছে নুতন শিক্ষা নীতিতে সন্নিবিষ্ট পশ্চাদমুখী তথা আধুনিক চিন্তাবিরোধী দিকগুলো। এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে। আজকে বিজ্ঞান সংগঠন, শিক্ষাবিদ সমাজকর্মী, ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে অপবিজ্ঞানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মুখর হতে হবে।



মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।