দেশ বিদেশ

পেগাসাস স্পাইওয়‍্যার ; এক বিশ্বজোড়া নজরদারির জাল।।


চৈতালি নন্দী: চিন্তন নিউজ:২০শে জুলাই:—সম্প্রতি ব্রিটিশ  দৈনিক’দ‍্য গার্ডিয়ান’ সহ ১৬ টি সংবাদপত্রের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর কেলেঙ্কারি, যার জাল ছড়িয়ে আছে পৃথিবী জুড়ে। বিভিন্ন দেশের সরকার এই পেগাসাস নামক সফ্টওয়্যার কিনে মোবাইল ফোনের মাধ‍্যমে নজরদারি চালাচ্ছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব‍্যাক্তিদের উপর। এই সফ্টওয়্যারটির নির্মাতা ইজরায়েলের এনএসও নামক একটা প্রযুক্তি সংস্থা। তারা জানিয়েছে কোনো দেশের সরকার ছাড়া তারা এই প্রযুক্তি বিক্রি করেনা।
কোনো ব‍্যাক্তির মোবাইলে এই সফ্টওয়্যার বা স্পাইওয়‍্যারটি ইন্সটল করলে তার যা কিছু তথ‍্য কেড়ে নিতে পারে মূহুর্তে। কথা শোনা হোক বা ই মেল, হোয়াটস এ্যাপ অথবা এসএমএস কিম্বা মাইক্রোফোন, কল রেকর্ড , ক‍্যামেরা বা ছবি , সেই ব‍্যাক্তির যাবতীয় তথ‍্য চলে যাবে ঐ সফ্টওয়্যারটির দখলে। তা ফোন অফ করা থাকলেও। প্রকৃতপক্ষে এটি একটি চূড়ান্ত নজরদারির সরঞ্জাম যা বিভিন্ন দেশের সরকার কিনেছে বলে সংবাদে প্রকাশ।
জানা গেছে এখনও পর্যন্ত ৫০ টি দেশে ব‍্যাবহার করা হয়েছে মানবাধিকার হরণকারী এই স্পাইং প্রযুক্তিটি। তার মধ‍্যে রয়েছে ভারত সহ আমেরিকা, ইউনাইটেড কিংডম, মালয়েশিয়া, আরব আমিরশাহী, মেক্সিকো, মোঙ্গলিয়া এবং আরও অনেক দেশ।

ভারতে এই নজরদারির নিশানায় রয়েছে মূলত বিরোধী নেতা, সাংবাদিক, সমাজকর্মী, শিল্পপতি, আমলা, আইনজীবী সহ বর্তমান সরকারের দুই মন্ত্রীও। এই নজরদারির তথ‍্য সামনে আসতেই প্রবল অস্বস্তি ও চরম আক্রমণের মুখে পড়ে মোদী সরকার। কারণ বর্তমানে দেশ পরিচালনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব‍্যর্থতার কারণে তারা যথেষ্ট ব‍্যাকফুটে রয়েছে। যদিও খুব স্বাভাবিক ভাবেই সব অভিযোগ তারা অস্বীকার করে বলে সরকার বেআইনি কিছু করেনি। কত্তৃত্ববাদী মোদী সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব‍্যাক্তিদের উপর লাগাতার নজরদারি চালিয়ে তাদের লড়াইয়ের ব্লুপ্রিন্টগুলো হস্তগত করা, এবং তাদের অস্ত্রগুলোকে ভোঁতা করে দেওয়া। এই প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে যে কোনো ব‍্যাক্তিকে ফাঁসিয়ে দেওয়া সহজ হবে। স্তব্ধ করে দেওয়া যাবে যাবতীয় বিরোধী স্বর, হরণ করা যাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা,  যা আমাদের মৌলিক অধিকার। এই প্রযুক্তিটির ব‍্যাপ্তি দেখে বর্তমানে আমাদের ভোটিং মেশিন ইভিএম এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ জাগে। ইতিমধ্যেই তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেছে। এই স্ক‍্যামওয়‍্যারটি গণতন্ত্রের ধারণার মূলে কুঠারাঘাত করেছে।
এমন বিপজ্জনক ও মানবাধিকার হরণকারী একটি প্রযুক্তি প্রস্তুতকারী সংস্থাটির বিরুদ্ধে অবিলম্বে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ জরুরি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলিকেও এগিয়ে আসতে হবে এটির উপর নিষেধাজ্ঞার সমর্থনে। এগিয়ে আসতে হবে প্রথম বিশ্বের কত্তৃত্ববাদী দেশগুলিকে।  এখনও পর্যন্ত যেটুকু খবর পাওয়া গেছে তা হিমশৈলের চূড়ো মাত্র, এর শিকড় আরও গভীরে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।