কাকলি চ্যাটার্জি: চিন্তন নিউজ: ২রা আগস্ট:– অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার বন্দর নগরী বিশাখাপত্তনমে রাজধানী স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করলে রাজ্যের কৃষকরা আদালতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন বলে খবর। রাজ্য সরকার বিশাখাপত্তনমে নিরাপত্তা পরিকাঠামো তদন্ত করার জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “বন্দর নগরীতে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের দিন মুখ্যমন্ত্রী রাজধানীর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন।”
অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্যপাল বিশ্বভূষণ হরিচন্দন রাজ্যের জন্য তিনটি রাজধানী শহর গঠনের সাথে সম্পর্কযুক্ত দুটি বিল অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ওয়াইএস জগন্মোহন রেড্ডি প্রশাসনিক ভবন অমরাবতী থেকে বিশাখাপত্তনমে স্থানান্তরিত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। গতকাল রাজ্য সরকার বিশাখাপত্তনমে নিরাপত্তা কাঠামো উন্নয়ন সম্পর্কিত একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে যার নেতৃত্বে আছেন বন্দরনগরীর পুলিশ সুপার আর কে মিনা। তাঁর নেতৃত্বে আটজন সিনিয়র অফিসার থাকবেন। বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার এর আহ্বায়ক হবেন। বন্দরনগরী রাজধানীতে রূপান্তরিত হওয়ার জন্য সুরক্ষা ও পুলিশিব্যবস্থা জোরদার করা সমীচীন। এ ব্যাপারে ঐ কমিটির মতামত বিবেচনা করা হবে। রাজধানী শহরে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনীর প্রয়োজনীয়তাও খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল গৌতম সাওয়াং নির্দেশ দিয়েছেন যে কমিটি দুই সপ্তাহের মধ্যে তার মতামত দাখিল করবে।
দুটি বিলের বিজ্ঞপ্তি জারির পরই অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার বিকেন্দ্রীকরণ বিল ২০২০ এবং এপি রাজধানী অঞ্চল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিল ২০২০ —- গত শুক্রবার সন্ধ্যায় এগুলোকে আইন হিসাবে ঘোষণা করে নগর উন্নয়ন দপ্তর ও পৌরমন্ত্রী বটসা সত্যনারায়ণ ঘোষণা করেন যে মুখ্যমন্ত্রী জগন্মোহন রেড্ডি শীঘ্রই বিশাখাপত্তনমে প্রশাসনিক রাজধানীর ভিত্তি স্থাপন করবেন। মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক অফিসার জানান, মুখ্যমন্ত্রী সম্ভবত ১৫ আগস্ট এই শুভকাজটি করবেন। বন্দরনগরীতে পালিত হবে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান। এই ভিত্তি প্রস্তরের আনুষ্ঠানিক ব্যাবস্থাপনার জন্য সি এম তাঁর দপ্তরের কর্মীদের নির্দেশ দেন। সরকারী অফিসের স্থানান্তর শীঘ্রই ধাপে ধাপে শুরু হবে এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছু হলে রাজ্য সচিবালয় ও অন্যান্য প্রশাসনিক দপ্তরগুলো ২৫ অক্টোবরের মধ্যে বিশাখাপত্তনমে স্থানান্তরিত হবে বলে ঐ অফিসার জানান।
চন্দ্রবাবু নাইডুর শাসনকালে রাজধানীর উন্নয়নের জন্য প্রায় ৩৪০০০ একর জমি অমরাবতীর কৃষকরা সরকারকে দিয়েছিলেন, প্রশাসনিক কার্যালয় বিশাখাপত্তনমে স্থানান্তরিতকরণ রুখতে। রাজধানীর স্থানান্তরে রাজ্যপালের অনুমোদনের বিরোধিতা করে কোভিড১৯ এর রীতি মোতাবেক দৈহিক দূরত্ব বজায় রেখে তুল্লুর, মান্দাদম, ভেঙ্কটায়াপ্লাম ও ভেলাগাপৌদিতে কয়েকশো কৃষক নিজ নিজ গ্ৰামে বিক্ষোভ দেখান। অমরাবতী প্রতিরক্ষা সমিতি যৌথ অ্যাকশন কমিটির নেতা শিব রেড্ডি বলেন, “আমরা পুরোপুরি ছিন্নভিন্ন। অমরাবতী তে রাজধানী হবে এই আশায় হাজার হাজার কৃষকের যে ত্যাগ স্বীকার তা নিয়ে রাজ্য সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই। আমরা এখন বিচার বিভাগের দিকে তাকিয়ে আছি।” কৃষকরা এখন রাজধানী আইনের প্রয়োগ স্থগিত করার জন্য মঙ্গলবার হাইকোর্টে একটি আবেদন করার পরিকল্পনা করছেন। সপ্তাহের শুরুর দিকে তাদিকোন্ডার তেলেগু দেশম পার্টির প্রাক্তন বিধায়ক শ্রাবণকুমারের দায়ের করা একটি আবেদন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন, যা ৬ আগস্ট শুনানি হবে। ভেঙ্কটায়াপ্লামের কৃষক অনিল করুমঞ্চি বলেন “আমরা জানতে চেয়েছি যে ভিত্তিতে রাজ্য সরকার তিনটি রাজধানী গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জি এন রাওয়ের তথাকথিত বিশেষজ্ঞ কমিটি কেবলমাত্র রাজধানী শহর আলাদা করার জন্য নয়,রাজ্যের চূড়ান্ত উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দেওয়ার জন্যও গঠিত হয়েছিল। আমরা এ বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদী লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত।”
–