মল্লিকা গাঙ্গুলী, চিন্তন নিউজ, ২১ মে: সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক বা এক্সিট পোল ভারতে বামপন্থীদের বিপর্যয়ের যে চিত্রই তুলে ধরুক না কেন, ভারতে তরুন প্রজন্মের হাত ধরে বামপন্থীদের ঘুরে দাঁড়ানোর নতুন ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছে – এই অভিমত সম্প্রতি প্রকাশ করেছে চিনের প্রভাবশালী পত্রিকা “সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট” যেটি চিনের কোনো সরকারি বা কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র নয়; বরং বহুজাতিক চীনা শিল্প গোষ্ঠী ‘আলিবাবা’ কর্তৃক প্রকাশিত একটি বহুল প্রচলিত চীনা পত্রিকা। এই পত্রিকা তাদের আন্তজার্তিক এডিশনে – This week in Asia- বিভাগে “ভারতের কমিউনিজম: মৃত না তরুণদের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়ানোর অপেক্ষায়” শীর্ষক প্রবন্ধে ভারতীয় কমিউনিজমের অতীত ও বর্তমান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে মন্তব্য করেছে, ভারতে বিজেপির মত চরম দিক্ষণপন্থী শক্তির মোকাবিলা করতে নতুন শক্তি হিসেবে উঠে দাঁড়াতে সক্ষম একমাত্র বামপন্থীরাই।
ভারতের বামপন্থার অতীত পর্যালোচনা করে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে ২০১৪ থেকে বামপন্থীদের ধ্বসের নানা কারন যেমন তারা বিশ্লেষন করেছেন তেমনিই এই পাঁচ বছরে নতুন করে ভারতের বামপন্থা যে বাঁক নিয়েছে সেটিও নিখুঁত ভাবে তুলে ধরেছেন। নিবন্ধে বলা হয়েছে- একদল তরুণ সমর্থক চরম দক্ষিনপন্থার বিকল্প হিসেবে বামপন্থাকেই বেছে নিয়েছে। কানাইয়া কুমার, জিগ্নেশ মেবানি, শেহেলা রশিদরা আজ ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির অত্যন্ত জনপ্রিয় মুখ। নতুন এই প্রিয় মুখ গুলিকে সি পি আই এম এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি সগর্বে নীল আকাশের লাল তারা বলে আখ্যায়িত করেছেন। এই নব নেতৃত্ব কৃষক আন্দোলন, দলিত সমস্যা, সাধারণ মানুষের বক্তব্য কে গুরুত্ব দিয়ে বিশেষ করে ছাত্র আন্দোলন ও কৃষক আন্দোলনকে হাতিয়ার করে পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, ত্রিপুরা ছাড়িয়ে এই প্রথম রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা কর্নাটকে বামপন্থী শক্তিকে সুসংহত করতে চেষ্টা করছে। কমিউনিস্ট গণসংগঠন সারা ভারত কিষান সভার নেতা বিজু কৃষ্ণন এই পত্রিকাকে জানিয়েছেন, মোদীর কৃষক বিরোধী নীতিই ক্ষুদ্র ও ধনী কৃষকদের এক মঞ্চে এনেছে। সিপিআই(এম এল) লিবারেশন পার্টির ছাত্র সংগঠনের প্রাক্তন নেত্রী শেহেলা রশিদ বলেছেন, জিগ্নেশ মেবানীর মত তরুণ দলিত নেতার হাত ধরেই বাম শক্তি নতুন করে উঠে দাঁড়াবে। নির্দল প্রার্থী হয়ে গুজরাতের মত রাজ্যে বিধানসভায় জিতে মেবানী বুঝিয়ে দিয়েছেন বর্তমান যুব সমাজ বামপন্থাকে চায়!
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে জনপ্রিয় তরুণ নেতাদের দলের সামনের সারিতে আনাটা নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক। নতুন বামশক্তির মূল নীতি “শতফুল বিকশিত হোক” চরম প্রতিক্রিয়াশীল দক্ষিণ পন্থীদের মোকাবিলার জন্য নতুন প্রজন্ম নতুন চেতনায় নবীন বামশক্তির বিকাশের দ্বারা ভারতবর্ষকে সমাজতন্ত্রের দিশা দেখাবে বলেই মনে করে পৃথিবী খ্যাত “সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট” পত্রিকা।