রঘুনাথ ভট্টাচার্য:চিন্তন নিউজ: ৪ঠা এপ্রিল:- একথা আগেই জানা গিয়েছিল যে, কোভিড-১৯ করোনা গোত্রীয় সার্স বা মার্স-য়ের সমতূল্য হ’লেও এর প্রক্রিয়া কিঞ্চিৎ ভিন্ন ও অন্ততঃ ১০ গুণ বেশী মারাত্মক (হু)। কোভিড-১৯ মূলতঃ শ্বাস প্রক্রিয়া আক্রমণ করে ও দ্রুত নিউমোনিয়ায় রূপান্তরিত হয়ে মৃত্যুর আঘাত হানে। শিশুদের মধ্যে একটু ভিন্ন প্রতিক্রিয়া হয় এবং ডায়রিয়ায় পর্যবসিত হয়।তবে এগুলি সবই সাধারণ তথ্য। বৈজ্ঞানিক সত্য বা তথ্য সাধারণ্যে আসার অপেক্ষায় আছে। এই বিপর্যয়ের সুরাহা করার প্রচেষ্টায় বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনেকদিন শুরু হয়েছিলো। সে কথা আগেই আলোচনা হয়েছে।
নূতন খবরে যে আশার আলো দেখা গেছে তা হলো : পিটসবারগ্ বিশ্ববিদ্যালয়ের (USA) গবেষকরা জানিয়েছেন যে প্রস্তাবিত প্রতিষেধক (ভ্যাক্সিন)টি গবেষণার প্রাথমিক পরীক্ষায় ইঁদুরের ওপর প্রয়োগের পর আশাপ্রদ সাফল্য পাওয়া গেল। বিশ্বের সেরা দুটি জারনালের রিপোর্ট ( সঙ্ক্ষেপে :ল্যান্সেট ও জার্ণাল অব মেডিসিন) উল্লেখ করে রাজ্যের একজন প্রথিতযশা চিকিৎসক সংবাদ মাধ্যমে একথা জানান। অবশ্য তিনি ব্যাখ্যা করে একথাও জানান, এই প্রাথমিক সাফল্যের পর এর ব্যবহারিক প্রয়োগ করতে সম্ভবতঃ ৯ থেকে ১২ মাস সময় দরকার হবে। কারণ,এর পরের স্তরের মানবদেহে প্রয়োগ,তার সার্বিক ও নিরাপদ সাফল্য, আমেরিকার এফ্ ডি এ এবং ভারতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইসিএমআর ও ডিজিসিআই ছাড়পত্র, বাণিজ্যিক বিধিব্যবস্থা ইত্যাদি সম্পূর্ণ করার পরই মাত্র এই প্রতিষেধক ভারতের বাজারে উপলব্ধ হবে।
অতএব, সামনে লম্বা রাস্তা।কবির ভাষা চেয়ে নিয়ে বলাযায়, ” এখনও সমুখে রয়েছে সূচির শর্বরী….”। এখনি তো পাখা বন্ধ করার কোনো প্রশ্নই নেই। কারণ, খবর হচ্ছে, এই লেখার সময় পর্যন্ত প্রকাশিত তথ্য হল, সারা বিশ্বে প্রায় ৫৩১০৯ লোকের মৃত্যু, শুধু ইউরোপীয় দেশগুলোর সর্বমোট মৃত্যু প্রায় ৪০ হাজার, চীনে প্রায় চার হাজার, ইত্যাদি। ইজরায়েল-য়ের স্বাস্থ্য মন্ত্রী, জার্মানির মাননীয় চ্যান্সেলার আ্যাঞ্জেলা মার্কেল,বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী করোনায় আক্রান্ত। সংক্রমিত দেশের সংখ্যা ১৯৯ থেকে বেড়ে ২০৪।
ভারতের তথ্য : আক্রান্ত ২৫৪৭/মৃত ৬২/মুক্ত১৬৩/ গৃহলগ্ন একলক্ষর ওপর(অসম্পূর্ণ )।গত ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত ৪৭৮জন।রাজ্যে তথ্যবিভ্রাট নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করতে চাইছেন যে নিশ্চিত কোনো ডাটা বেড়োচ্ছে না।যতদূর জানা যাচ্ছে, রাজ্যে গৃহলগ্ন ৫২০২৯ ও সরকারি কোয়ারেন্টাইন ১৮৯২। প্রকৃতপক্ষে তাবলীগী-জামাত ফেরৎ ব্যক্তিদের উদ্ধার করে সনাক্ত না করা পর্যন্ত নিশ্চিত তথ্যে পৌছন কঠিন।খবরে প্রকাশ রাজ্যে এপর্যন্ত মৃত ৭(?) ও মুক্ত ১২।
কাজেই, সামনে আঁধার। রাজ্যের একজন স্বনামখ্যাত চিকিৎসক ব্যখ্যা করলেন সংবাদ মাধ্যমে: অধুনা গত সময়ে বাইরে ঘুরে এসে রাজ্যে ঢুকেছেন প্রায় ১৬ লক্ষ। তাঁদের ২৫%- ও যদি সংক্রমিত হন (যেটা বেশী হওয়াই স্বাভাবিক)তা হলে সখ্যাটা আসে ৪ লক্ষ। যাঁরা সমাজে মিশে গেছেন লকডাউনের আগে বা সমসময়ে। তাঁরা প্রত্যেকে যদি অন্ততঃ ৩ জনের সংস্পর্শ পেয়ে থাকেন, সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে ১২লক্ষের। অনেকের মতেই কথাটা ফেলে দেবার মত নয়।
কাজেই সামনে লম্বা রাস্তা।ওষুধ পেতে পেতে নদী দিয়ে অনেক জল বয়ে যাবে।কতদিন তা কোনোমতেই নিশ্চিত নয়। সারা বিশ্বে কান্নার রোল । এই সময়ে এই বিপর্যয়ের প্রতিরোধ করতে হাতে রয়েছে আমাদের সততা। কায়মনোবাক্যে আমাদের চেতনা ও সাহসকে জাগিয়ে রাখতে হবে। প্রধান অস্ত্র ‘ সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিঙ্’এর প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে হবে। হাত ধোয়ার বিধি মেনে চলতে হবে।
আসুন আমরা ‘ আলো জ্বালি’, চেতনার আলো,
জ্ঞাণের আলো, আত্মবিশ্বাসের আলো।আর গাণ ধরি কবিগুরুকে স্মরণ করে :’ “এবার তবে জ্বালো,/আপন তারার আলো/ রঙীন ছায়ার ম্লান গোধুলি/হোক অবসান।’
![](https://chintannews.com/wp-content/uploads/2020/04/IMG_20200404_133543-702x1024.jpg)