রাজ্য

উধাও পলি


সুপর্ণা রায়, চিন্তন নিউজ, ১ জুলাই: বর্ষার শুরুতে নিকাশি বিভাগের তোলা পাঁকের হিসাবেও “জল।” বর্ষা এলেই মহানগরের পথঘাট  জলে ভাসে। ভোগান্তির শেষ থাকে না সাধারণ  নাগরিকের। যারা বস্তি এলাকাতে থাকেন তাদের অবস্থা আরও দূর্বিষহ হয়ে উঠে। ছোট ছোট ঘর – তাতে  রাস্তার জল ঢুকে পড়ে – ভাসতে থাকে বাসন থেকে আসবাবপত্র। রাস্তার জমা জলে যানবাহনের গতি ধীর হয়ে যায় ফলে যানজটের সমস্যায় পড়েন মানুষজন।

নিয়মিত ভাবে  পলি যে তোলা হয় না, তার জলন্ত প্রমান ট্যাংরার গোবিন্দ খটিক রোড। খুব সম্প্রতি  এখানে একসাথে অনেকগুলি ম্যানহোল ফেটে যায়। বহুদিন যদি পলি জমে তবে সেখানে বিষাক্ত মিথেন গ্যাস তৈরী হয়। এই গ্যাসের জেরেই এই ঘটনা ঘটেছিল।

পলি তোলা হয়না  বলে বারবার নিকাশি বিভাগের দিকে আঙুল  তোলা হয়েছে। এবার আর সেই সুযোগ দেয়নি কলকাতা কর্পোরেশন। তাদের চরম সাফল্যের রিপোর্ট জমা করেছে। সেই রিপোর্ট অনুসারে  ২০১৭-১৮ সালে ১ লক্ষ ৪৬ হাজার মেট্রিক  টন ও ২০১৮-১৯ সালে ১ লক্ষ ৭৪ হাজার মেট্রিক  টন পলি তোলা     হয়েছে।

খুব সুন্দর রিপোর্ট। কিন্তু এখন প্রশ্ন  সেই পলি গেল কোথায়? নিকাশি বিভাগ পলি তোলার কথা বলেছে, কিন্তু তা কোথায় ফেলা হয়েছে সেটা বলেনি। ধাপার যে জায়গাতে পলি ফেলা হয় সেখানে ১লক্ষ মেট্রিক টন পলি ফেলার জায়গা নেই। অথচ  যে পরিমান পলির কথা বলা হয়েছে তাতে কালিঘাট থেকে শিয়ালদহ  পর্যন্ত ডুবে যেতে পারে। তাহলে পলি কোথায়?

এই হিসেব নিয়ে প্রশ্ন  উঠা একদম স্বাভাবিক। কারণ এই পরিমান পলি তুলতে বেশ কয়েক কোটি টাকা খরচ হয়েছে, যা জনগনের করের টাকা। পলির পরিমান শুনে বিভিন্ন  দলের কাউন্সিলরদের চোখ কপালে উঠেছে। ১১১ নম্বর ওয়ার্ডের সি.পি.আই.এম. কাউন্সিলর চয়ন ভট্টাচার্যর দাবী,  নিকাশি বিভাগের তরফে কয়েকবার পলি তোলা হলেও,  এখনও অনেক পলি রয়ে গেছে। তাহলে এত পলি উঠল কিভাবে? আর তা গেলই বা কোথায়? কংগ্রেসের এক কাউন্সিলর  বলেন তার এলাকাতে পলি তোলা হয়নি। তিনি বর্ষাতে জল জমার আশংকা  করছেন। বারে বারে বলেও পলি তোলা  হয়নি।

তৃনমূল কংগ্রেসের কোন কাউন্সিলর  কোন মন্তব্য  করেন নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক  দুই তৃনমূল কাউন্সিলর  বলেছেন যে এই রিপোর্ট দেখে তারা অবাক হয়ে গেছেন। বলেছেন তাদের এলাকাতে বারবার বলেও পলি পরিষ্কার করাতে পারেন নি। তাহলে এই যে বলা হচ্ছে এত্ত পলি তোলা হয়েছে তা কি শুধু খাতা কলমের হিসাব?


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।