তুলসী কুমার সিনহা: চিন্তন নিউজ:৫ই মে:–
১৮১৮ সালের ৫ই মে এক ইহুদি পরিবারের তৃতীয় সন্তান হিসেবে কার্ল মার্ক্স প্রুশিয়া সাম্রাজ্যের নিম্ন রাইন প্রদেশের অন্তর্গত ত্রিয়ের নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম হাইনরিশ মার্ক্স এবং মাতার নাম এভা লৌও । কার্ল মার্কসের পিতা পেশায় ছিলেন এডভোকেট। ইহুদী পরিবারেই হাইনরিশের জন্ম হওয়ার কারণে আইন অনুশীলনে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এবং বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা লাভের আশায় তিনি ইহুদি ধর্ম ত্যাগ করে প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্ম গ্রহণ করেন।
কার্ল মার্কস স্কুল জীবন শেষ করে প্রথমে বন ও পরে বার্লিন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে আইনশাস্ত্র, ইতিহাস ও দর্শন নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেন। ১৮৪১ সালে এপিকিউরাসের দর্শন বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে থিসিস জমা করার পর কার্ল মার্কস অধ্যাপক হবার জন্য বন শহরে উপস্থিত হন। অধ্যাপনার কাজে নিয়োজিত হবার পর সরকারের প্রতিক্রিয়াশীল নীতির সঙ্গে আপোস করতে না পারায় অধ্যাপনার কাজ ছাড়তে বাধ্য হন।
এই সময় বামপন্থী হেগেলবাদীরা সরকার বিরোধী একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন।মার্কসকে পত্রিকাটির প্রধান লেখক হবার আমন্ত্রণ জানানো হলে তিনি ঐ পত্রিকায় যোগদান করেন এবং ১৮৪২ সালের অক্টোবর মাসে তিনি ঐ পত্রিকার সম্পাদক হন।
ঐ পত্রিকা ধারাবাহিক ভাবে সরকারের অন্যায় কাজের সমালোচনা সরকারের চক্ষুশূল হয়ে দাঁড়ায়।প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকলে সরকার বাহাদুর পত্রিকাটির উপর রুষ্ট হয়।যার ফলে কয়েক মাসের মধ্যেই কাগজের অফিসে তালা পড়ে। এই সময় মার্কস অর্থশাস্ত্র নিয়ে অধ্যয়ন শুরু করেন।
১৮৪৩ সালে কার্ল মার্কস বাগদত্তা জেনিফন ভেস্টাফালেনকে বাড়িতে না জানিয়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, যিনি ছিলেন তার বাল্যকালের বন্ধু।
১৮৪৪ সালের সেপ্টেম্বরে ফ্রেডেরিখ এঙ্গেলস কয়েক দিনের জন্য প্যারিতে আসেন সময় থেকেই মার্কসের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। প্যারি’র বিপ্লবী গ্রুপগুলোর প্রতিটি আন্দোলনে তাঁরা সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে থাকেন।পেটি-বুর্জোয়া সমাজতন্ত্রের নানাবিধ মতবাদের সঙ্গে প্রবল সংগ্রাম চালিয়ে বিপ্লবী প্রলেতারীয় সমাজতন্ত্র অথবা কমিউনিজমের (মার্কসবাদের) তত্ত্ব ও কর্মকৌশল গড়ে তোলেন। ১৮৪৫ সালে বিপজ্জনক বিপ্লবী বলে মার্কসকে প্যারিস থেকে বহিষ্কৃত করা হয়। মার্কস ব্রাসেল্সে আসেন। ১৮৪৭ সালে তিনি ও এঙ্গেলস ‘কমিউনিস্ট লীগ’ নামে একটি গুপ্ত-প্রচার সমিতিতে যোগদান দেন এবং ঐ সভায় তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন । কংগ্রেসের ঐ সভা থেকে ভার পেয়ে তাঁরা সুপ্রসিদ্ধ ‘কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহার’ রচনা করেন যেটি ১৮৪৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তা প্রকাশিত হয়। প্রতিভাদীপ্ত স্পষ্টতা ও উজ্জ্বলতায় এই রচনাটিতে রূপায়িত হয়েছে নতুন বিশ্ববীক্ষা, সমাজজীবনের ক্ষেত্রের ওপরও প্রযোজ্য সুসঙ্গত বস্তুবাদ, বিকাশের সব থেকে সর্বাঙ্গীন ও সুগভীর মতবাদ- দ্বান্দ্বিকতা, শ্রেণিসংগ্রাম এবং নতুন কমিউনিস্ট সমাজের শ্রষ্টা প্রলেতারিয়েতের বিশ্ব-ঐতিহাসিক বিপ্লবী ভূমিকার তত্ত্ব।
১৮৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লব শুরু হলে মার্কসকে বেলজিয়ম থেকে নির্বাসিত করা হয়। ফলে তিনি প্যারিসে চলে এলেন এবং মার্চ বিপ্লবের পর সেখান থেকে ফিরে যান জার্মানিতে, কলোন শহরেই। এইখানে প্রকাশিত হয় নিউ রাইনিশ গেজেট পত্রিকা, ১৮৪৮ সালের ১ জুন থেকে ১৮৪৯ সালের ১৯ মে পর্যন্ত; মার্কস ছিলেন তার প্রধান সম্পাদক। ১৮৪৯ সালের ১৩ই জুন মিছিলে অংশগ্রহণ করায় তাঁকে নির্বাসিত করলে তিনি লন্ডন শহরে ফিরে আসেন।
কার্ল মার্কসের নির্বাসিত জীবন অর্থনৈতিক সংকটে পড়লে তাঁর বন্ধু এঙ্গেলস সাহায্য করেন।
নির্বাসনে১৮৮১ সালের ২ ডিসেম্বর তার স্ত্রী মৃত্যুবরণ করেন, আর ১৪ মার্চ, ১৮৮৩ নিজের আরাম কেদারায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মার্কস ।
মার্কস তার চিন্তা-ভাবনা কয়েকটি গ্রন্থে উপস্থাপন করেন, তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো
১)মজুরি শ্রম ও পুঁজি। ২)দাস ক্যাপিটাল ৩) মজুরি দাম ও মুনাফা ৪) পুঁজির উদ্ভব প্রভৃতি।