মিতা দত্ত: চিন্তন নিউজ: ৪ঠা মে:– “পৃথিবীর বুকে মানুযের বেদনা মুছে দিতে গিয়ে যদি আমার জীবন উৎসর্গ করি ,জীবন যাবে কষ্টে। কিন্তু একদিন যখন এমন সমাজ আসবে যেখানে মানুযের কষ্ট থাকবে না, সেই ভবিষ্যৎ সমাজ আমাকে ভালোবেসে চোখের দুফোঁটা তপ্ত জল ফেলবে, এর চাইতে বড়ো পুরষ্কার একটা জীবনের জন্য কী হতে পারে। “”
১৭ বছর বয়সী মার্ক্স তাঁর পিতাকে এই কথা বলেছিলেন। পিতা তাঁকে নিশ্চিত জীবন যাপনের জন্য উকিল হওয়ার পরামর্শ দিলে তিনি সেই পরামর্শের উত্তরে এই মতামত ব্যক্ত করেন ও দর্শন নিয়ে পড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।২৩ বছর বয়সে দর্শনে ডক্টরেট ডিগ্রী পান। সেই সঙ্গে সাংবাদিকতার কাজ করেন। তিনি বুঝতে পারেন শুধু দর্শন পড়লে হবে না, জগৎ, জীবনের ব্যাখ্যা দিতে হবে।
ইতিমধ্যেই প্রাশিয়া সরকারের কাছে তিনি বিপদজনক ব্যক্তি বলে পরিগণিত হলেন,তাঁকে প্রাশিয়া থেকে বিতাড়িত হতে হলো। তিনি ফান্সে গেলেন কিন্তু সেখানেও স্থান হলো না। বেলজিয়ামেও একই অবস্থা। তখন সেই সময় বিপ্লবীদের তীর্থক্ষেত্র ইংল্যান্ডে এলেন।বাস করতে থাকলেন সপরিবারে বস্তির পাশে একটি ছোট্ট ঘড়ে।
তিনি পৃথিবীকে বদলানোর প্রয়াস শুরু করলেন।লিখতে শুরু করলেন ক্যাপিটাল বা পুঁজি লিখতে ,যার ঘরে সংসার চালানোর মতো অর্থ নেই। বহু বছরের সাধনার ফসল পুঁজি কিন্তু বিক্রি করে যে অর্থ পেলেন, তিনি রসিকতা করে বলেছিলেন, বইটা লিখতে গিয়ে যে সস্তা তামাক খেয়েছি, সেই পয়সাও ওঠে নি।
মেয়েরা জামার অভাবে স্কুলে যেতে পারে না। তিনি গ্রামের ছোট্ট রেলস্টেশনে কেরানীর চাকরির দরখাস্ত করলেন। কিন্তু হাতের লেখা খারাপ ও ডক্টরেট ডিগ্রীর জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হলেন। ভাগ্যিস বাতিল হয়েছিলেন নইলে আমরা হয়তো সেভাবে ওনাকে পেতাম না।
ক্যাপিটালএ বৈপ্লবিক অন্বেষণ গোড়ার কথা।
মানুষ তাঁর সৃষ্টিশীলতার কারণে অন্য জীব থেকে ভিন্ন। মানুষ তাঁর সৃষ্টিকে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বাধা পায়। ভাবনা আর তার বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে মানুষ নিখুঁত থেকে নিখুঁততর ,তম হয়।
মার্ক্সের কাছে যাপিত জীবনের অর্থ হলো স্বাধীন পরিবেশে নিজের সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটানো। এর মধ্যেই মানুষ বাঁচে, কাজের আগ্রহ পায়, আনন্দ পায়।তাঁর মতে পৃথিবীর সমস্ত মানুষের ওপর সবার সমান অধিকার। সেই পৃথিবীতে কিছু মানুষ সমস্ত মানুষের কর্ম সৃষ্টি, মনন,চিন্তনকে কুক্ষিগত করবে, এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তাঁর আজীবনের প্রতিবাদ।
মানুষের প্রধান পরিচয় নিজেদের মধ্যে বেঁধে থাকা। পুঁজি তার উল্টো করে। মানুষের প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ায় ,প্রাচীর গড়ে তোলে।
মার্ক্স এই প্রাচীর ভাঙার কাজই করেছেন।
শুধুমাত্র রাশিয়ার প্রেক্ষিতে তাঁকে বিচার করা ভুল। তিনি সমস্ত দেশের যে লজিক মানুষকে শোষণের বার্তা দেয় সেই বিদ্যমান লজিকের বিরুদ্ধে মেহনতী জনগণের সংগ্রামের উদ্গাতা।
আমাদের প্রতিদিনের সংগ্রামে মার্ক্স।আমাদের আবেগে, সৃষ্টিতে ,চিন্তনের সদা জাগরুক।