বিদেশ

সৌদি বিমান হানায় ইয়েমেনে মৃত ৭ শিশুসহ ১৬ জন নিরীহ মানুষ


মল্লিকা গাঙ্গুলী, চিন্তন নিউজ, ২৬ সেপ্টেম্বর: বিশ্বের তেল উৎপাদক দেশগুলিকে পরস্পরের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধিয়ে আখের গোছানোর ঘটনা নতুন নয়। ধারাবাহিকভাবে যে এই হত্যালীলা চলছে তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ড্রোন হামলা ও তার পাল্টা আক্রমণ! কিছু দিন আগেই সৌদি আরবের দুটি তেল কারখানায় ড্রোন হামলা ও তার ফলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ঐ কারখানা দুটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। প্রথমে এই হামলার জন্য অভিযোগের আঙুল তোলা হয় ইরানের দিকে, এমন কি মার্কিন প্রভিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি ইরানকে এর ফলভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন।

পরে অবশ্য বিশ্বের সর্ববৃহৎ তেল কোম্পানি “আরামকোর” ঐ ড্রোন হামলার দায় স্বীকার করে নেয় ইয়েমেনের হাউতি নামক জঙ্গিগোষ্ঠী। আর তারপর থেকেই সৌদি আরবের সমস্ত ক্ষোভ গিয়ে পড়ে ইয়েমেনের দিকে। সৌদি আরব এর বদলা নিতে উঠে পড়ে লাগে এবং তা করে দেখায় এই মঙ্গলবার। সৌদি মদতপুষ্ট বিদ্রোহীরা দক্ষিণ ইয়েমেনের দালেহ প্রদেশের দুটি জায়গায় বিমান হামলা চালায়, যাতে সাত শিশু সহ ষোলো জনের মৃত্যু হয় এবং জখম আরও ন’জন। ইয়েমেন প্রশাসন জানিয়েছে দালেহ প্রদেশের দুটি আবাসনে বিমান হানায় শিশু ও মহিলা সহ ১৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে। ইব প্রদেশের আল থাওরা হাসপাতাল সূত্রেও জানানো হয়েছে জখম বহু মানুষকে হাসপাতালে আনা হলে ষোলো জনকে মৃত ঘোষণা করা হয় এবং আরো অনেকেই মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন।

ঘটনার সূত্রপাত আরও কয়েক বছর আগে, ২০১৫ সালে অবরুদ্ধ ইয়েমেন সরকারের সমর্থনে সোদি আরব এগিয়ে এলেও সৌদি মদতপুষ্ট বিদ্রোহীরা ইয়েমেনের প্রায় দশ হাজার সাধারন নাগরিককে হত্যা করে এবং দেশের ২ কোটিরও বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। রাষ্ট্রসংঘ তখন ইয়েমেনকে বিশ্বের সবচেয়ে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ বলে ঘোষণা করে। ইয়েমেনের এই ধ্বংসলীলার জেরে কয়েক কোটি মানুষ অনাহারে দিন কাটাতে বাধ্য হয়। এমনকি সমাজসেবী সংস্থাগুলি তাদের খাদ্য বা ত্রান সামগ্রী পৌঁছে দিতে পর্যন্ত পারেনি। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে ইরানের মদতপুষ্ট ইয়েমেনের জঙ্গি সংগঠন তাদের “আল মাসিরা” নামক টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে সৌদি আরবীয় জঙ্গিগোষ্ঠীর ধারাবাহিক ধ্বংসাত্মক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরব হয়। কিন্তু সৌদি আরব বা তার বিদ্রোহী গোষ্ঠী এই এখনও অভিযোগের বিরুদ্ধে নীরব।

বিশ্বের রাজনৈতিক মহলের মতে এই লড়াই সহজে থামার নয়! সৌদি আরব, আমেরিকা এবং ইজরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েই ইসলামিক রাষ্ট্রগুলি আগ্রাসনে মেতে উঠেছে। আসলে মধ্য প্রাচ্যের অফুরন্ত তেল ভান্ডার নিজেদের আয়ত্তে আনার যে জাল আমেরিকা ইজরায়েল বুনছে সেই জালে পা ফেলে আরব দেশ গুলি নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত। সৌদি আরব সমস্ত ইসলামী রাষ্ট্রে একাধিপত্য বিস্তারের স্বপ্নে মগ্ন হয়ে আমেরিকার টোপ গিলে সাম্রাজ্য বিস্তারে মেতে উঠেছে; তার কুফল হিসেবে মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলি চরম অশান্তি এবং নিরাপত্তাহীনতার শিকার। আর এই তেল উৎপাদক দেশগুলির হানাহানির কুফল পরোক্ষ ভাবে ভোগ করছে সমগ্র বিশ্ব!


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।