চৈতালি নন্দী: চিন্তন নিউজ:২৩শে সেপ্টেম্বর:– ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের ব্যাপক কারচুপি, জালিয়াতি ও রিগিংএর অভিযোগ সত্বেও রাশিয়ায় কমিউনিস্ট পার্টির সাফল্য রুখতে পারা গেলো না। রুশ সংসদের নিম্নকক্ষ ডুমার নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টির আসন সংখ্যা একলাফে ১৫ থেকে পৌছে গেলো ৫৭ তে। এবারেও ডুমায় কমিউনিস্ট পার্টিই দ্বিতীয় বৃহত্তম দল। যদিও এই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের ফলাফল মানতে অস্বীকার করে তদন্তের দাবী জানিয়েছেন কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান গেন্নাদি জনাগফ ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলি। এই ফলের বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন অগণিত পার্টিকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষ।
নির্বাচনে বৃহত্তম দলের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখলেও পুতিনের ইউনাইটেড রাশিয়ার আসনসংখ্যা ৪৫০ থেকে কমে হয়েছে ৩২৪। সাইবেরিয়া ও দূরপ্রাচ্যের বিভিন্ন প্রদেশে সাফল্য পেয়েছে কমিউনিস্টরা। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হোল যেখানে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের ব্যাবস্থা নেই, সেখানেই ভালো ফল করেছে কমিউনিস্টরা। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে ই-ভোট গণনাতে পুতিনের দলের কাছে পিছিয়ে পড়তে থাকে তারা। এইভাবে মস্কো সহ আরও অনেক গুলি এগিয়ে থাকা আসনে পিছিয়ে পড়ে তারা। একই ধরণের ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৮টি আসনে।
রাশিয়া বললেই যে সমাজতান্ত্রিক দেশটির ছবি ফুটে ওঠে, সেই সমাজতন্ত্র থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে এখন ধান্দার ধণতন্ত্রের পথে রাশিয়া। ‘দ্য ইকনমিস্ট’ পত্রিকায় ‘ধান্দার ধনতন্ত্র’-এ এক নম্বর স্থানে রয়েছে তারা। জোসেফ স্টিগলিৎজ এর মতে রাশিয়ায় তথাকথিত বাজার অর্থনীতির বিকাশ ঘটেনি, সেখানে যা চলছে তা হলো অদ্ভূতুড়ে ধান্দার রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ। এখানে সম্পদ বন্টনে বৈষম্য চরম। মাত্র১০% ধনীশ্রেষ্ঠ দেশের ৮৭% সম্পদের মালিক, যা এগিয়ে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থেকেও।
১৯৮৯ এ রাশিয়ার দরিদ্র সীমার নীচে মানুষের সংখ্যা ২% থেকে বেড়ে বর্তমানে হয়েছে ১৩’৩% এ। যদিও এটা ভারতের মতই কমিয়ে দেখানো হিসেব। প্রকৃত দারিদ্র্যের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। বিজয়ী হলেও পুতিনের ইউনাইটেড রাশিয়ার জনসমর্থন কমেছে। উল্লেখযোগ্য পুতিনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সোচ্চার সমালোচকদের এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি। জমা পড়েছে জালিয়াতির অসংখ্য অভিযোগ।
ক্ষমতাসীন দল ধান্দার ধণতন্ত্র চালানোর ফলে ক্রমশ বেড়েছে ধণবৈষম্য। একদিকে মুষ্টিমেয় র হাতে সম্পদের কেন্দ্রীভবন ঘটেছে, অপরদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তলিয়ে গেছে দারিদ্র্যের অতলে। ঠিক এখানেই উঠে এসেছে কমিউনিসদের জনপ্রিয়তা ও প্রাসঙ্গিকতা। ফলে ক্ষমতাসীন দল নিজ ক্ষমতায় আস্থা হারিয়ে নির্বাচনে কারচুপির আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।
