কলমের খোঁচা

জন্মদিবসে সাহিত্যিক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় স্মরণ


তুলসী কুমার সিনহা:চিন্তন নিউজ:৩০শে মার্চ: শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের এক অতি পরিচিত নাম | প্রতিটি বাঙালি বইপ্রেমীর কাছে তিনি যে আজও কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা সবাই জানে | তার লেখা বিভিন্ন গল্প ও উপন্যাস বিশেষ করে রহস্য উপন্যাস আজও বাঙালিদের মনে বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে |

এই মহান সাহিত্যিকের আদি নিবাস উত্তর কোলকাতার বরানগরে ।পিতার নাম সমীরণ বন্দোপাধ্যায় । ১৮৯৯ সালে ৩০শে মার্চ উত্তরপ্রদেশের জৌনপুর নামে এক ছোট্ট শহরে তার দাদুর বাড়িতে জন্ম হয়।

১৯১৫ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজে ভর্তি হন ও নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যান |

ছোটবেলা থেকেই তিনি বাংলা সাহিত্যের প্রতি এক গভীর টান অনুভব করতেন । ১৯১৯ সালে বিদ্যাসাগর কলেজে পাঠরত অবস্থায় মাত্র ২০ বছর বয়সেই তার লেখা কিছু কবিতাসমূহ ‘যৌবনস্মৃতি’ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়|

১৯১৯ সালে তিনি অবশেষে বি.এ পরীক্ষায় পাশ করে কলকাতা ছেড়ে সুদূর পাটনায় গিয়ে থাকতে শুরু করেন এবং সেখানেই তিনি আইন নিয়ে পড়াশোনা চালাতে থাকেন |আইন নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে অবশেষে তিনি একদম পুরোপুরি ভাবে গল্প ও উপন্যাস লেখার প্রতি মন দেন।

বাংলা তথা ভারতের সব থেকে সেরা কাল্পনিক ডিটেক্টিভ চরিত্র ব্যোমকেশ বক্সীর স্রষ্টা আর কেউ নন স্বয়ং শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায় নিজেই | তাঁর সৃষ্ট এই দুর্দান্ত বাঙালি ডিটেক্টিভ চরিত্রটি পাঠকদের কাছে সর্বপ্রথম সামনে আসে ১৯৩২ সালে “সত্যান্বেষী” নামক গল্পের মাধ্যমে ।

এরপর ১৯৩৮ সালে তখন শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় পাটনা ছেড়ে মুম্বাই যান বলিউডে কিছু কাজের উদ্দেশ্যে | তিনি সেখানে বোম্বে টকিজ মুভি স্টুডিওর জন্য স্ক্রিনপ্লে লেখা লেখির কাজ শুরু করেন এবং সেখানে অনেক সিনেমার স্ক্রিনপ্লে লেখা লেখির দায়িত্বও পান |তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দূর্গা,কঙ্গন, নবজীবন, আজাদ ও পুনর্মিলন কিন্তু সেই কাজ তিনি বেশিদিন করতে পারেননি |

অবশেষে ১৯৫২ সালে তিনি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি সাথে সমস্ত চুক্তি বাতিল করেন এবং মুম্বাই ছেড়ে পুনে চলে আসেন আর এখান থেকেই তিনি একদম সম্পূর্ণভাবে নিজের গল্প উপন্যাস লেখা লেখির কাজ পুনরায় শুরু করে দেন ।

পুনেতে থাকার সময় তিনি সেখানে প্রচুর গল্প লিখে ফেলেন যার মধ্যে বেশির ভাগই ছিল ভৌতিক গল্প,রোমান্টিক গল্প ও আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কীয় গল্প | এখানে বসেই তিনি লিখলেন একের পর এক ব্যোমকেশ ও গৌড়মল্লার, তুমি সন্ধ্যার মেঘ, তুঙ্গভদ্রার তীরের মতো দূর্দান্ত সব ঐতিহাসিক উপন্যাস এবং শিবাজির আমলের দুই বালক-বালিকাকে নিয়ে ‘সদাশিব’।

এবার একটু দেখে নেওয়া যাক তাঁর বিখ্যাত কিছু সৃষ্টিগুলিকে যার মাধ্যমে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বাংলার সর্বকালের সেরা লেখক ও সাহিত্যিক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের লিখিত উপন্যাস সমূহ:কালের মন্দিরা (1951)গৌড়মল্লার (1954)তুমি সন্ধ্যার মেঘ (1958)কুমারসম্ভবের কবি (1963) তুঙ্গভদ্রার তীরে (1965)

তাঁর বিভিন্ন রচনা সিনেমা তৈরিতে বিশেষভাবে সাহায্য করেছে যেগুলি আপামর বাঙালির হৃদয়ে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে।যেমন দাদার কীর্তি,ঝিন্দের বন্দী, চিড়িয়াখানা,বিষের ধো৺য়া ইত্যাদি।টেলিভিশন জগতে শরদিন্দুর বন্দ্যোপাধ্যায়ের লিখিত গল্প নিয়ে বা়ংলা ও হিন্দিতে বহু সিরিয়াল হয়েছে যেগুলি খুবই জনপ্রিয় হয়েছে।

শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৬৭সালে তুঙ্গভদ্রার তীরে উপন্যাসের জন্য রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ঐবছরেই তাঁকে শরৎ স্মৃতি পুরস্কারে ভূষিত করে। এছাড়া ভারত সরকার ইতিমধ্যে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়কে ১৯৬০সালে কিশোর সাহিত্যের জন্য পুরস্কার প্রদান করে।অবশেষে ১৯৭০ সালে ২২ সে সেপ্টেম্বর পুনেতেই বাংলার মহান সাহিত্যিক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনাবসান ঘটে।

বাংলা সাহিত্যে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত এত প্রতিভাবান একজন সাহিত্যিক, সকল বাঙালী বইপ্রেমীদের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবেন |

তাঁর অসামান্য সমস্ত কীর্তি আজও বর্তমানে মানুষের মনোরঞ্জন করে চলেছে ঠিক আগের মতই এবং আশা করা যায় ভবিষ্যত প্রজন্মও তাঁর সাহিত্য সৃষ্টিকে সমানভাবে সমাদর করবে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।