কলমের খোঁচা

আইনস্টাইন ও বিশ্ব


বিশেষ প্রতিবেদন – শ্রীরূপ গোপাল গোস্বামী :-
চিন্তন নিউজ: ১৪ই মার্চ:– জার্মানির উল্ম শহরে এক ধর্মনিরপেক্ষ, মধ্যবিত্ত ইহুদি পরিবারে স্যার অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের জন্ম ১৮৭৯ সালের ১৪ই মার্চ। আজ তাঁর ১৪৩ তম জন্মদিন। আবার ১৯২১ সালের পদার্থ বিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কার ১৯২২ সালে আইনস্টাইনকে দেওয়া হয়। জাহাজে জাপান যাবার পথে সাংহাই বন্দরে তিনি একটি টেলিগ্রাম পান – ‘অ্যাওয়ার্ডেড নোবেল প্রাইজ ইন ফিজিক্স। মোর ডিটেইলস্ ফলো সুন।’ সেই অর্থে বর্তমান বছরটি আইনস্টাইনের নোবেলপ্রাপ্তির শতবর্ষ।

শৈশবে দুটি বিষয় আইনস্টাইনের কাছে ছিল বিস্ময়কর। পাঁচ বছর বয়সে তিনি প্রথম একটি চুম্বক শলাকা প্রত্যক্ষ করেন। এক অদৃশ্য শক্তি চুম্বক শলাকাটির বিক্ষেপ ঘটাচ্ছে, এই বিষয়টি তাঁকে ভীষণ অবাক করেছিল। জীবন ভর তিনি বিভিন্ন অদৃশ্য শক্তির অন্বেষণ চালিয়ে গেছেন। ১২ বছর বয়সে তাঁর হাতে আসে একটি জ্যামিতি বই। অবাক বিস্ময়ে বইটি উনি পড়ে ফেলেন। তরুণ চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্র ম্যাক্স টালমে প্রায়ই আইনস্টাইনদের বাড়ি আসতেন। ম্যাক্সের ভাল প্রভাব ছিল আইনস্টাইনের ওপর। গণিত ও দর্শনের প্রতি আগ্রহ তৈরির মূলে এই ম্যাক্স। একটি জনপ্রিয় বিজ্ঞান সিরিজ তুলে দেন ম্যাক্স যখন আইনস্টাইনের বয়স ১৬। সেই বইগুলি থেকে একটা প্রশ্ন তার মনে উদয় হয়, একটি আলোক রশ্মির পাশে পাশে ছুটলে সেই আলোক রশ্মিকে কেমন দেখতে লাগবে? এই ভাবনাই তাঁর ভেতর আগামী দিনের ভিত্তি প্রস্তুত করে।

পারিবারিক অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ফলে আইনস্টাইনের লেখাপড়ার বিঘ্ন ঘটে। ১৮৯৬ সালে সুইজারল্যান্ডের বিশেষ স্কুল থেকে স্নাতক হন। স্নাতক হবার পরে এক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হন। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে নিজে নিজে বিভিন্ন বিষয়ের উচ্চতর জ্ঞান লাভ করার ফলে অধ্যাপকদের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। ফলে কোনও প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাননি। বন্ধুর বাবার সুপারিশে একটি সুইশ পেটেন্ট অফিসে কেরানীপদে যোগ দেন। এখানেই তিনি অফিসের কাজ সেরে নিজের গবেষণার কাজে মন দেন। ১৯০৫ সাল আইনস্টাইনের কাছে এক অত্যাশ্চর্য বছর। ওই বছরে চারটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় অ্যানালেন ড্যা ফিজিক পত্রিকায়, যা পদার্থবিদ্যা আমূল পরিবর্তন ঘটায়। সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব প্রকাশ করেন আইনস্টাইন। প্রথমে বিজ্ঞানীমহল তেমন গুরুত্ব না দিলেও কোয়ান্টাম তত্ত্বের জনক ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক এই তত্ত্বকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেন। ১৯১৫ সালে এই তত্ত্বের পূর্ণাঙ্গ রূপ দেন। ফলে আইনস্টাইনকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯২২ সালে জাপান যাবার পথেই নোবেলপ্রাপ্তির টেলিগ্রাম পান। যদিও এই পুরস্কার আলোকতড়িৎক্রিয়ার জন্য।

আইনস্টাইনের সাথে রবীন্দ্রনাথের সাক্ষাৎ হলো ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ১৯৩০ সালে বার ছয়েক দুজনের সাক্ষাৎ ঘটে। বিশ্ব- ব্রহ্মাণ্ড, চেতনা, অস্তিত্ব নিয়ে তাঁরা মত বিনিময় করেন। এই দুই মনীষীর কথোপকথন আগ্রহীরা পড়ে দেখতে পারেন।

ইতিমধ্যে জার্মানিতে নাৎসি বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। সংবাদপত্রে আইনস্টাইনের ছবি দিয়ে সংবাদের শিরোনাম বেরোয়, ‘এখনও ফাঁসি দেওয়া হয়নি’। ১৯৩২ সালে আইনস্টাইন জার্মানি ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং আমেরিকায় চলে যান।

তারপরের কাহিনী তো সকলের জানা। হিটলারকে রুখে দেবার জন্য বিজ্ঞানী জিলার্ড আইনস্টাইনকে পরমাণু বোমা তৈরির জন্য রাষ্ট্রপতি রুজভেল্টকে আবেদন করতে বলেন। পরমাণু বোমা তৈরি হয়। পৃথিবীর বুকে হিরোশিমা -নাগাসাকিতে বোমা বর্ষণের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনা আইনস্টাইনকে পরিবর্তন করে দেয়। পরবর্তীকালে হাইড্রোজেন বোমা তৈরির আলোচনা হলে তিনি তার তীব্র বিরোধিতা করেন এবং শান্তি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।

১৯৫৫ সালের ১৮ই এপ্রিল আমেরিকার নিউ জার্সিতে এই মহান বিজ্ঞানীর জীবনাবসান ঘটে। আইনস্টাইন ছিলেন তাঁর সমকাল থেকে বহু এগিয়ে থাকা একজন মানুষ, যেমন ছিলেন রবীন্দ্রনাথ।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।