বিনোদন রাজ্য

দশ জনের প্রাণ বাঁচিয়ে আসল হিরো মানিক


দীপশুভ্র সান্যাল, জলপাইগুড়ি, ৭ই অক্টোবর:- মালবাজারে হড়পা বানে জলে ডুবতে থাকা ১০ জনকে একাই বাঁচিয়ে এখন গ্রামের হিরো মহম্মদ মানিক। দশমীতে মাল নদীতে প্রতিমা বিসর্জনের সময় হড়পা বানে যে বিপর্যয় ঘটে তাতে ৮ জন মারা গিয়েছেন। বরাত জোরে রক্ষা পেয়েছেন শতাধিক মানুষ। তাঁদের মধ্যে ১০ জনকে রক্ষা করেন একা মানিক। তেসিমলা গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার এই যুবকও মাল নদীর ধারে প্রতিমা বিসর্জন দেখতে গিয়েছিলেন। হঠাৎই হড়পা বানে চোখের সামনে মানুষগুলোকে ভেসে যেতে দেখে আর আশপাশ কিছু তাকিয়ে দেখেননি তিনি। পুলিশকর্মীরা জলে নামতে বাধা দিলেও তাদেরকে উপেক্ষা করেই তিনি সোজা ঝাঁপ মারেন জলের স্রোতে।

মহম্মদ মানিক জানান, প্রতিমা বিসর্জন দেখার জন্য বন্ধুদের সঙ্গে মালবাজারে গিয়েছিলেন। সেই সময় আচমকাই হড়পা বান আসে। অনেকে ভেসে যাচ্ছেন দেখে নিজের মোবাইল ফোনটা এক বন্ধুর হাতে দিয়ে নদীতে লাফিয়ে পড়েন। প্রায় ১০ জনকে উদ্ধার করেন তিনি। উদ্ধার করতে গিয়ে তাঁর পায়ের আঙুলও কেটে যায়। এরপরই দমকল কর্মীরা তাকে মাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়েও দেওয়া হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন মানিক ভাইরাল।

ডুয়ার্সের মালবাজার শহরের পাশাপাশি আশেপাশের বিভিন্ন চা বাগান এলাকা থেকে পুজো উদ্যোক্তারা তাদের প্রতিমা নিয়ে বিসর্জন দিতে আসেন এই মাল নদীতে। আর সেই বিসর্জন দেখতে ডুয়ার্সের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৬-৮ হাজার মানুষ বুধবার এসেছিলেন বিসর্জন ঘাটে। হঠাৎই জল বাড়ে নদীতে। এরপরই জলের তোড় ভাসিয়ে নিয়ে যায় মানুষগুলোকে। প্রশাসন কেউ নিখোঁজ নেই বললেও স্থানীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী এখনও অবধি বহু মানুষের খোঁজ নেই। অনেকে আবার গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। মৃত্যুকে চোখের এতটা সামনে থেকে চাক্ষুষ করে কেউ কেউ আবার ভীত, কুঁকড়ে গিয়েছেন ভয়ে।
পাথরের বাঁধ দিয়ে নদী আটকে নিরঞ্জনের ঘাট তৈরির অপকর্ম ঢাকতে ‘নদীতে জল বাড়ার ঘোষণা শুনেও কেন কথা শোনা হল না?’, তৃণমূলের তরফে প্রশ্ন তুলেছেন কুণাল ঘোষ।
সূত্রের খবর রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের কাছে দুর্ঘটনার রিপোর্ট তলব হয়েছে। বুধবার থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষের জেলা প্রশাসনের ডাকা দুর্গাপূজা কার্নিভাল বাতিল করার দাবি ওঠে সারাদিন ধরে শহরের বিভিন্ন পুজো কমিটি ও ক্লাব জানিয়ে দেন তারা কার্নিভালে অংশগ্রহণ করবেন না। পরিস্থিতি এ পর্যায়ে পৌঁছয় শহরের দুটি পূজা কমিটি বাদে সকলেই কার্নিভালে অংশগ্রহণ করবেন না বলে জানিয়ে দেন। এরপরই প্রশাসনিক বৈঠকে বিকাল পাঁচটায় বাতিল করা হয় দুর্গাপুজোর কার্নিভাল।
ইতিমধ্যেই প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অধিকাংশই প্রশ্ন তুলেছে নিরাপত্তা নিয়ে। ডুয়ার্সের নদীগুলিতে হড়পা বান আগেও এসেছে। এদিকে অভিযোগ, বিসর্জনের সময় নদীর ধারে সিভিল ডিফেন্সের মাত্র আটজন কর্মী ছিলেন। কেন তাঁদের সঙ্গে শুধু দড়ি ছিল। আর কোনও কিছুই ছিল না। সিভিল ডিফেন্স অফিসার পল্লব বিকাশ মজুমদার এ প্রসঙ্গে বলেন, “আমাদের কাছে সিভিল ডিফেন্স ভলান্টিয়ার কম আছে। ৮ জনকে পাঠানো হয় মাল মহকুমার জন্য।”
সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের হাতে দড়ি ছাড়া উদ্ধার কার্যের জন্য কোনরকম ব্যবস্থা ছিল না বলে অভিযোগ করেন এক সিভিল ডিফেন্স কর্মী, ছিলনা লাইফ জ্যাকেট, উদ্ধারকাদের জন্য ব্যবহৃত নৌকো। প্রশাসনিক দুর্বলতা সত্ত্বেও মানুষ মানুষের জন্য এই সত্যকে আরো একবার প্রমাণিত করল মোহাম্মদ মানিকের উদ্ধার কার্য।।

প্রশাসন ব্যর্থ হলেও ১০ জনকে জল থেকে তুলে রিয়েল হিরো গাঁয়ের ছেলে মানিক।।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।