জেলা

দিবারাত্রি করোনা বিপর্যস্ত মানুষের পাশে রামপুরহাট রেড ভলানটিয়ার্স


রাহুল চ্যাটার্জি: চিন্তন নিউজ:২৭শে মে:- ২০২১ সালের মাঝ সময়ে প্রবেশ করার সাথে সাথেই পূর্বের সমস্ত অভিজ্ঞতাকে রীতিমত আবছা করে ফেলেছে এই বছর কোভিডের ভয়াবহতা।একে রোগযন্ত্রণা, মৃত্যুভয়, তার দোসর হয়েছে লকডাউন, কর্মহীনতা এবং ওষুধ ও অক্সিজেন নিয়ে কালোবাজারি।

এই অবস্থায় প্রতিবারের মতো এবারও মানুষের প্রয়োজনে মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বামপন্থীদের ছাত্র-যুব সংগঠন, যাদের বর্তমান পরিচয় “রেড ভলান্টিয়ার্স”। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি এলাকার মত রামপুরহাটেও এরা সংক্রামিত অসুস্থ মানুষের দরজায় পৌঁছে যাচ্ছে তাদের সমস্যার সমাধান করতে।

ভোটের রেজাল্ট, মৃত্যুভয়, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের বিদ্বেষ, অপমান কোনকিছুতেই দমে না গিয়ে দিন বা রাত যেকোন সময়ে রামপুরহাটের মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে নির্দ্বিধায়। অসুস্থ পরিবারের খাবার-ওষুধ-অক্সিজেন বা রক্ত যা কিছু প্রয়োজন হোক রামপুরহাটের অধিকাংশ মানুষের ভরসা “রেড ভলান্টিয়ার্স”, যারা মূলত বাম ছাত্র-যুবদের নিয়ে গঠিত একটি টিম। শুধু অক্সিজেন বা ওষুধ নয়, এলাকা ও কোভিড রোগীর বাড়ি স্যানিটাইজেশনের কাজ‌ও এরা নিয়মিত করে চলেছেন।

চালধোয়ানী পাড়ার প্রামানিক পরিবারের বয়স্ক সদস্য শ্বাসকষ্টে ভুগছেন দীর্ঘ্যদিন।।অক্সিজেন লেবেল নেমে গেলে ফোন আসে রেড ভলান্টিয়ার্স কর্মীদের কাছে। যেমন বলা তেমনি কাজ, বাড়ি অব্দি অক্সিজেন পৌঁছে দিচ্ছে টিম রেড ভলান্টিয়ার্স।

তারাপীঠের এক পরিবারের দুই সদস্য কোভিড আক্রান্ত, অক্সিজেন মাপক অক্সিমিটার এর দরকার পরে। রেড ভলান্টিয়ার্স কর্মী অমিতাভ ফোন পেয়েই পৌঁছে দেন সেই যন্ত্র।

করোনা আক্রান্ত বাড়ির সবাই।খাবার ও সবজি এনে দেওয়ার কেও নেই। রেড ভলান্টিয়ার্স আছে তো।। এরকম বহু ফোন আসলেও প্রতিটি জায়গায় দায়িত্ব নিয়ে জিনিস পত্র পৌঁছে দেওয়া হয়।

কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পর লড়াই জন্ডিস এর সাথে।। তাই এ পজেটিভ রক্তের খোঁজে ফোন আসে রামপুরহাট পার্শ্ববর্তী এক স্কুল শিক্ষকের, যাঁর মেয়ে প্রীতি মাল, কোভিড কে হার মানিয়ে এখন জন্ডিসের সাথে লড়াই চালাচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে তাঁর জন্য রক্তদান করেন তারিক ও রজনী।

ব্লাড ব্যাঙ্কে থাকা অবস্থায় তারাপীঠ এর পার্শ্ববর্তী সরলপুর গ্রামের বছর ৫৫ এর জগন্নাথ ভট্টাচার্যের বাড়ি থেকে ফোন আসে রাহুলের মোবাইলে।। গত কয়েকদিন থেকেই শ্বাসকষ্টে ভুগছেন তিনি। *ডাক্তারের কথা মত অক্সিজেন চালাতে হবে, কিন্তু এই কালোবাজারির সময়ে কোথায় যাবেন সিলিন্ডার কিনতে? ভাড়া নিয়ে এলেও কমপক্ষে ২০০০টাকার ব্যাপার। এদিকে বাড়ির প্রধান রোজগেরে ছেলেটিও লকডাউনে তারাপীঠ মন্দির বন্ধ থাকায় কাজ হারা হয়ে বসে। পাশের বাড়ির বোনের কাছে রেড ভলান্টিয়ার্সদের কথা শুনেছেন, ফোন ও করেন।। এক ঘন্টার মধ্যে রাহুল, তারিক, সুপ্রিয়রা বাড়িতে পৌঁছে দিল অক্সিজেন।

সাদ্দামের মা এই কোভিড কালে পৃথিবী ছেড়ে গেছেন এক মাসও হয়নি, তবে নিজের সাধ্য মত সে বাকিদের বাঁচানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সে।

এর আগে সরলপুরের আরো এক ব্যক্তি(উৎপল ভট্টাচার্য) দুর্গাপুরে চিকিৎসা কালে মারা গেলে মৃতদেহ দাহ করার সমস্যা দেখা দেয়। রাত ৩ টেই সেই ফোন যায় রেড ভলান্টিয়ার এর কর্মী রাহুল চ্যাটার্জির কাছে। ওই রাত্রেই তাদের মৃতদেহ সৎকারের ব্যবস্থাও করে দেওয়া হয়।

দিনকয়েক আগে সিউড়ির একই পরিবারের মা-বাবা-ছেলে(রাজদ্বীপ) সহ তিন জন কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই এ হেরে যান যাঁরা রামপুরহাটেই সিসিইউএ ভর্তি ছিলেন, তাদের পাশেও ছিল রাহুল, শ্বেতা, প্রাপ্তি ও তাদের টিম রেড ভলান্টিয়ার্স।

থানা পাড়ার এক পরিবারের বাড়ির দুই ছেলেই বিদেশে কাজে নিযুক্ত, এই মহামারী কালে বয়স্ক মা-বাবার ভরসা সেই রেড ভলান্টিয়ার্স টিম। প্রতিদিন খোঁজ নেওয়া ছাড়াও প্রয়োজনীয় জিনিস বাড়ি অব্দি পৌঁছে দেওয়া করছেন রেড কর্মীরা।।

নিশ্চিন্তপুরের আরেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধার ঔষধ পৌঁছে দেওয়ার জন্য ফোন আসে রেড ভলান্টিয়ার্স এর হেল্প লাইনে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রয়োজনীয় সেই ওষুধ পৌঁছে দেন রেড ভলান্টিয়ার্স কর্মীরা।।

ভাঁড়সালা পাড়া নিবাসী আগরওয়াল পরিবারের বড় ছেলে মেদিনীপুরে থাকেন কাজের সূত্রে। বয়স্ক পিতা করোনা আক্রান্ত, বাড়িতে শুধুই বয়স্কা মা। সেই রোগীকেও এম্বুল্যান্স ডেকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করে রেড ভলান্টিয়ার কর্মীরা।।

এই মুহূর্তে লকডাউন বাড়ার সাথে সাথে তাই দায়িত্বও বেড়েছে কর্মীদের।। তবে রেড ভলান্টিয়ার্স এর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বহু মানুষ, কেউ আর্থিক সাহায্যের মাধ্যমে, কেউ বা প্রয়োজনীয় দ্রব্য গুলি হাতে তুলে দিয়ে…


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।