বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

সূর্যে বৃষ্টি


সৌরভ চক্রবর্তী, চিন্তন নিউজ, ৯ এপ্রিল: সূর্যে বৃষ্টি দেখুন, তবে এ জলের ফোঁটার বৃষ্টি নয়, এ হোল প্লাজমা বৃষ্টি – প্লাজমা মানে হলো তড়িৎ কনা – ইলেকট্রন, প্রোটন, হিলিয়ামের আয়ন, কার্বন, নাইট্রোজেনের তড়িৎ কনা – এই তড়িৎ কনাই সূর্যের পৃষ্ঠতল থেকে তাপ নিয়ে ওপরের স্তরের করোনাতে যায় সীমাহীন উত্তপ্ত হয়ে, তারপর তাদের একটা অংশ জমাট বাঁধে এবং সূর্যের মহাকর্ষ বলে আকৃষ্ট হয়ে ফিরে আসে সূর্য পৃষ্ঠে – একেই বলে করোনা বৃষ্টি।
অপর অংশ মহাকাশে উৎক্ষিপ্ত হয় যাকে বলে সোলার উইন্ড বা সৌর ঝড়, এই ঝড়ের খানিকটা আবার পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে আছড়ে পড়ে এবং নানা প্রতিক্রিয়া ঘটায়।
এমিলি ম্যাসন বলে – নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট কেন্দ্রের এক বিজ্ঞানী এনিয়ে এক পেপার প্রকাশ করেছেন সম্প্রতি।
তিনি বলছেন ২০১৭ সালের মাঝামাঝি ৫ মাস ধরে তিনি – মহাকাশে স্থাপিত উচ্চ রেজোলিউশনের টেলিস্কোপে – যেখানে ১২ সেকেন্ড অন্তর অন্তর সূর্যের ছবি তোলা হচ্ছে – সেই ছবিতে চোখ রেখে চলেছিলেন – তিনি কিছু একটা পেয়ে, আরও খু্ঁটিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেন তিনি করোনা বৃষ্টিই দেখছেন তবে সেই অঞ্চলে নয়, যে অঞ্চলটাতে তিনি মনোনিবেশ করেছিলেন – তিনি আগের ধারণা অনুযায়ী সূর্যের পৃষ্ঠদেশ থেকে উৎক্ষিপ্ত হওয়া হেলমেট স্ট্রিমার – চৌম্বক ক্ষেত্রতেই দৃষ্টি আবদ্ধ করেছিলেন কিন্তু তিনি দেখলেন বৃষ্টি হচ্ছে অন্য এক ছোট চুম্বক ক্ষেত্রের লুপ বা ফাঁস ধরে।
চৌম্বক ক্ষেত্রের লুপ বা ফাঁস কি?
সূর্যের মধ্যে এক বিশাল চৌম্বক ক্ষেত্র রয়েছে – এই চৌম্বক ক্ষেত্র সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে লক্ষ লক্ষ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত প্রসারিত – এই চৌম্বক ছড়িয়ে পড়ে নানা চৌম্বক লুপ বা ফাঁস ধরে। এই লুপগুলো ক্লোজড বা বদ্ধ কিন্তু খোলামুখ চৌম্বক লুপও আছে – এমিলি মেসন বলছেন – প্লাজমা বা তড়িতাহত কনাগুলো সূর্য পৃষ্ঠ থেকে তাপ নিয়ে ক্লোজড বা বদ্ধ লুপ ধরে ওপরে ওঠে, তারপর তারা রেলগাড়ির ট্র্যাক পরিবর্তনের মতো বদ্ধ লুপ থেকে খোলামুখ লুপে যায় – কিছুটা জমে বৃষ্টি হয়ে সূর্য পৃষ্ঠে ফিরে আসে এবং বাকিটা মহাকাশে সৌর ঝড় বা সোলার উইন্ড হিসেবে উৎক্ষিপ্ত হয় কিন্তু এই সোলার উইন্ড আদতে হলো স্লো বা ধীরগতি সোলার উইন্ড বা সৌর ঝড়। এটা হলে এ এক বড়ো আবিস্কার – ফার্ষ্ট বা দ্রুতগতির সোলার উইন্ডের কারণ জানা আছে কিন্তু স্লো বা ধীরগতি সোলার উইন্ডের কারণ জানা নেই। যদি তা জানা হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে তা হবে বিরাট এক সাফল্য।
এরসাথে আরেকটা রহস্য আজও অজানা – তা হলো – সূর্য পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ১০০০০ ডিগ্রী ফারেনহাইট কিন্তু তার ওপরি তল করোনার কিলোমিটার ওপরের করোনার তাপমাত্রা ৩০০ গুণ বেশি কেন? এর উত্তর এখনও জানা নেই।
এইসব কারণে করোনার বৃষ্টি দেখা এবং তার ব্যাখ্যা খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে।
নাসার এমিলি ম্যাসনকে অভিনন্দন।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।