বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

ব্যাপারটা ভাইরাস, আতঙ্কটা ভাইরাল (পর্ব ১) – শ্যামল চ্যাটার্জি


চিন্তন নিউজ: ৩৬শে মে:- আরো ১৪ দিন বেড়ে ৩১ মে পর্যন্ত লক ডাউন বৃদ্ধি হল। এই চতুর্থ দফার লক ডাউনে কতটা ছাড় হল বা হল না, তা নিয়ে আজকের আলোচনা নয়। কিন্তু এই করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ নিয়ে আতঙ্ক কেন ভাইরাল হলো, তারই তত্ত্বতলাশ করা যাক। প্রথমেই বলি এই লেখাটা কয়েকটি পর্বে হবে। আর এই লেখাটির জন্য আকাশ সরকারের কাছে ঋণ স্বীকার করেই রাখি।
ব্যাপারটা ভাইরাস, আতঙ্কটা ভাইরাল। আতঙ্কটা ভাইরাল করা হয়েছে খুব পরিকল্পিতভাবে। সেকথায় পরে আসছি। আগে জেনে নেওয়া যাক ভাইরাস ব্যাপারটা কী?
ভাইরাস শব্দটি মূলত ইংরেজি বর্ণমালার ভি, আই, আর, ইউ, এবং এস, (V, I, R, U এবং S-) এর সমন্বিত রূপ, যেগুলো আলাদাভাবে পূর্ণাঙ্গ একেকটি শব্দ। অর্থাৎ ভাইরাস শব্দটি একটি সংক্ষিপ্ত রূপ, যার পূর্ণরূপ হলো, (Vital Information Resources Under Seize’) ভাইটাল ইনফরমেশন রিসোর্সেস আন্ডার সিজ। ভাইরাস (Virus) শব্দটি বিশেষ্য(Noun) ভাইরাল (Viral) শব্দটি এটির (Adjective) গুণবাচক শব্দ (বিশেষণ) হিসেবে ব্যবহার করা হয় । আর ভাইরাস শব্দটি যেহেতু দূষণ, জীবাণু বা বিষাক্ত অর্থে ব্যবহার করা হয় এবং ভাইরাস যেহেতু খুব দ্রুতই ভয়ংকরভাবে ছড়িয়ে পড়ে বা বিস্তার লাভ করে, তাই হঠাৎ সমাজে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া কোনো বিষয় বা ইস্যুকেই ‘ভাইরাল’ বলে উল্লেখ করা হয়। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এই ভাইরাল ব্যাপারটার সাথে আমরা কমবেশি একটু পরিচিত। যদিও সেটা সীমিত গন্ডীর মধ্যে আবদ্ধ। কিন্তু এই কোভিড-১৯ এর আতঙ্কের ভাইরালের গণ্ডী অনেক বড়। সোশ্যাল মিডিয়াতে কিছু ভাইরাল হয় পরিকল্পনা ছাড়ায়। কিছু হয় পরিকল্পিতভাবে, যা মূলত রাজনৈতিক। এই কোভিড-১৯ এর আতঙ্কের ভাইরাল শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়াতে সীমাবদ্ধ নেই। আমাদের জীবনযাত্রায় তা ছড়িয়ে পড়েছে। কীভাবে আর কেন ছড়িয়ে পড়লো তা নিয়ে আলোচনায় পরে আসবো। আগে জেনে নেওয়া যাক কী এই ভাইরাস?
ভাইরাস একটি ল্যাটিন শব্দ, এর অর্থ হল বিষ। আদিকালে রোগ সৃষ্টিকারী যে কোন রোগ সৃষ্টিকারী বিষাক্ত পদার্থকে ভাইরাস বলা হত। বর্তমান কালে ভাইরাস বলতে এক প্রকার অতি ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক অকোষীয় রোগ সৃষ্টিকারী বস্তুকে বোঝায়। উদ্ভিদ ও প্রাণীর বহু রোগ সৃষ্টির কারণ হল ভাইরাস। ভাইরাস কে জীবাণু না বলে ‘বস্তু’ বলা হয়। কারণ, জীবদেহ ডিএনএ,আরএনএ ও নিওক্লিক এসিড দিয়ে গঠিত,প্রোটিন তাই ভাইরাস অকোষীয়। এবার একটু ভাইরাস গবেষণার ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখা যাক।
ইন্টারনেট ঘেঁটে পেলাম ভাইরাস নিয়ে গবেষণা শুরু তামাক গাছে মোজাইক নামক ভাইরাস রোগ নিয়ে। ১৮৮৬ হল্যান্ডের প্রাণরসায়নবিদ এডলফ মেয়ার সর্বপ্রথম শুরু করেন। এই রোগটির পরিচিত ছিল বান্ট, রাস্ট বা স্মাট নামে। বিভ্রান্তি এড়ানোর জন্য এডলফ মেয়ার এই ভাইরাসকে টোবাকো মোজাইক (TMV) নামে আখ্যায়িত করেন। পরবর্তীকালে আরো গবেষণা হয়। মার্কিন জীব-রসায়নবিদ ডব্লু এম স্ট্যানলি (১৯৩৫) তামাকের মোজাইক ভাইরাসকে পৃথক করে কেলাসিত করতে সক্ষম হোন। এ অবদানের কারণে তিনি ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। পরবর্তী কালে আরো গবেষণা হয় এবং এখনো তা চলছে তার বিস্তারিত বিবরণ এখানে নিষ্প্রয়োজন। ‘ইতিহাস তথ্য ও বিতর্ক’ ফেসবুক গ্রুপে জয়ন্ত দাসের ‘গুটিবসন্তমহামারিনির্মূলভারত’ রচনায় ভ্যাকসিনের একটা তথ্য জানতে পারি,
“১৭৯৬ সাল, আজ থেকে ঠিক ২২৪ বছর আগে আজকের মতোই এক মে মাসের দিন। সারা নেমস (Sarah Nelms) নামে এক তরুণী গোয়ালিনীর হাতে একটা গো-বসন্তের গুটি দেখে রেখেছিলেন জেনার। সেই গুটি থেকে রস (তখনকার ভাষায় লিম্ফ) নিয়ে জেমস ফিপস (James Phipps) বলে আট বছরের এক বালকের হাতে জেনার টিকা দিলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে বিখ্যাততম টিকা। কয়েকদিনের মধ্যে ছেলেটির একটু জ্বর হল, বগলে সামান্য ব্যথা। ন’দিনের মাথায় তার ঠাণ্ডা বোধ হতে শুরু করল, আর খিদে কমে গেল। কিন্তু পরের দিন তার শরীর প্রায় সুস্থ। এর দু’মাস পরে জেমস ফিপস-এর শরীরে জেনার গুটিবসন্তের রস প্রবেশ করিয়ে দিলেন—এটা অবশ্য কোনো নতুন পদ্ধতি নয়, ভারত-চীন-তুরস্ক হয়ে ইংল্যান্ডে আসা ভ্যারিওলেশন পদ্ধতি। তারপর অধীর প্রতীক্ষা। কোনো রোগলক্ষণ দেখা দিল না।. (চলবে)


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।