রাজ্য

চরম জন রোষের মুখে সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়


মল্লিকা গাঙ্গুলী : চিন্তন নিউজ: ২৬শে মে:- বিশ্ব জুড়ে করোনা অতিমারি সংকটে জনজীবন বিপর্যস্ত তার মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের বুকে আছড়ে পড়া বিধ্বংসী ঝড় “আমফান” যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা। আবহাওয়াবিদ দের মতে বিগত একশ বছরে বাংলার মানুষ এমন তুফান দেখেনি। বাংলার উপকূলবর্তী জেলাগুলি এবং কলকাতা ও কলকাতা সংলগ্ন এলাকায় আমফানের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড অবস্থা। এবারের ঝড়ে সবথেকে বেশি গাছ উপড়ে পরার জন্য বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে, তার ছিঁড়ে, বিস্তীর্ন অঞ্চল বিদ্যুৎ বিহীন হয়ে পরে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে সবথেকে বড় সমস্যা হয় জল সংকট। চারদিন ধরে অন্ধকারে, অনাহারে, জল পর্যন্ত না পেয়ে মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।

সাধারণ মানুষ যে কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের সাহায্য এবং তার নির্বাচিত প্রতিনিধির আশ্বাস প্রত্যাশা করে। কিন্তু আমফান ঝঞ্ঝা পীড়িত বাংলার মানুষ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের মন্ত্রী, আমলা, এম এল এ, বা এম,পি দের সহায়তা না পেয়ে বিক্ষোভে ফেটে পরছে। সম্প্রতি ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ তথা তৃণমূলের যুব নেতা অভিষেক বন্দোপাধ্যায় কাকদ্বীপে প্রশাসনিক সভা করতে যেতে পারলেন না। আমফানে সব থেকে ক্ষতি গ্রস্থ জেলা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা। একদিকে করোনা ভীতি, তার উপর আশ্রয়হীন খাদ্যহীন সহায় সম্বলহীন এই মানুষ গুলো এখন ভাষণ নয় রেশন চায়! কোনো নেতা মন্ত্রীর বাকচাতুর্যে তারা আর ভরসা রাখতে পারছে না! তাই অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের মত একেবারে প্রথম সারির নেতার পথে বাধা দিতে তারা ভয় পায় না, বরং উলোটপুরান অভিষেক বাবুর মতো যুব নেতা জনতার রোষের সামনে দাঁড়াতে সাহস না করে পিছু হটতে বাধ্য হলেন।

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার আমফান পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কাকদ্বীপ যান স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। এখানেই প্রশাসনের প্রতিনিধি দের নিয়ে তাঁর প্রশাসনিক বৈঠক করার কথা ছিল; এই উদ্দেশ্যে স্থানীয় সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায় কাকদ্বীপের দিকে রওয়ানা হন। কিন্তু আমফানে পর দীর্ঘ চারদিন জল, আলো হীন সংযোগ বিচ্ছিন্ন জনগন ঠাকুরপুকুর, বেহালা অঞ্চলে দফায় দফায় রাস্তা অবরোধ করেন! তারা এই অবরোধে নেতা মন্ত্রী কাউকেই ছাড় দেয় না। বিক্ষুব্ধ জনতার ক্ষোভের মুখে পড়েন খোদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। পরিস্থিতি এতটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে যে অবরোধকারি জনতাকে ছত্রভঙ্গ করাও সম্ভব ছিল না! শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই বৈঠক বাতিল করে সাংসদকে ফিরে যেতে হয়। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মানুষ কে শান্ত থাকার নির্দেশ দিলেও বিপর্যস্ত মানুষ আশু মীমাংসা চায়।

মহানগর কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে চারদিন ধরে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে না পারা প্রশাসনিক দুর্বলতা প্রমাণ করে। অপর দিকে বারো মাস প্রতিদিন অভাব আর ক্ষিদের সঙ্গে লড়াই করা মানুষ গুলোকে সারা বছর যে সরকারি পরিষেবা দেওয়া দরকার কিন্তু তারা সেই সহায়তা থেকে বঞ্চিত থাকে তাই বিশেষ সময়ে হঠাৎ করে পরিযায়ী নেতাদের মিষ্টি বুলিতে তারা নিশ্চিন্ত হতে পারে না! সাধারণ মানুষের পথে নেমে এই অবরোধ আন্দোলন কর্মসূচির দ্বারা বর্তমান করোনা মহামারী এবং বিধ্বংসী আমফান ঝড়ের মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের চরম ব্যর্থতার চিত্র ফুটে উঠেছে। তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায় কে কাকদ্বীপে ঢুকতে না দেওয়া বা সাংসদ কে ফিরে যেতে বাধ্য করার মধ্যেই প্রমাণ হয় বাংলার মানুষ আর তৃণমূল সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।