দেশ

দেশের শ্রমিক আইন পরিবর্তনে সর্বস্তরে প্রতিবাদ।


মল্লিকা গাঙ্গুলী:চিন্তন নিউজ:১৩ই মে:- বিশ্ব জুড়ে করোনা অতিমারির সংকটে বিপর্যস্ত দেশের দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলি যখন রুজির টানে দিশাহারা ঠিক এমন সময় কেন্দ্র সরকার মালিক তথা শিল্পপতি শ্রেণীর স্বার্থে গুজরাত সহ বিভিন্ন রাজ্যে শ্রমিক আইনে ছাড়পত্র দিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার ভারতবর্ষে পঞ্চাশটি কেন্দ্রীয় এবং প্রায় দু’শোটি রাজ্য শ্রম আইন থাকলেও এ দেশের শ্রম আইনের কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই! আইনের পাতার পাতায় নানা ধারা উপধারায় শ্রমিকের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, পরিবার কল্যাণ, কাজের সময়, মজুরি, ওভার টাইম, সপ্তাহান্তিক সবেতন ছুটি, অন্যান্য ছুটি, শিশু বা মহিলা শ্রমিক নিয়োগ ইত্যাদি সম্পর্কে অসংখ্য শ্রমিক অনুকূলে গৃহীত আইনের ব্যাখ্যা থাকলেও ভারতের শ্রম আইন অত্যন্ত অস্থিতিস্থাপক।এই কারনেই সরকার ইচ্ছা মতো তা প্রয়োগ করতে পারে এমন কি প্রয়োজন মতো পরিবর্তন পরিমার্জনও করতে পারে। বলা বাহুল্য আইনের এই ফাঁকটি কাজে লাগিয়েই কেন্দ্র সরকারের মদতে বেশ কিছু রাজ্য শ্রম আইন লঘু করতে চলেছে। অবিলম্বে দেশ জুড়েই শ্রমিক শোষণের এই অভিনব পন্থাটি গৃহীত হবে। কোভিড- ঊনিশ অতিমারি মোকাবিলায় প্রধান পদক্ষেপ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সরকারি ভাবে লকডাউন ঘোষিত হয়েছে, এই লক ডাউনের সময় সীমা উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই গত ৮ই মে শুক্রবার “দি কোড অব ওয়েজেস” নাম দিয়ে কেন্দ্র এক বিধ্বংসী শ্রমিক বিরোধী আইন পাশ করে। শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ গাঙ্গওয়ার বলেন সারা দেশের প্রায় পঞ্চাশ কোটি শ্রমিকের নূন্যতম মজুরি ও কাজের সময় (১৭৬ টাকা :৮ঘন্টা) নির্দিষ্ট মানদণ্ডে স্থাপন করা হবে; কিন্তু নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তা কমাতে পারবে! বিজেপি শাসিত গুজরাত, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, কংগ্রেস শাসিত রাজস্থান, পাঞ্জাব এবং ওড়িষ্যার বিজেডি সরকার এই নতুন শ্রম আইন কার্যকর করতে চলেছে। আগামী তিন বছরের জন্য সমস্ত শ্রমিক স্বার্থের আইন বাতিল করতে উত্তর প্রদেশ সরকার সবার আগে প্রস্তুত।

বস্তুত পক্ষে নিয়োগকারী মালিক সংগঠন গুলি দাবি তোলে করোনায় ভেঙে পড়া অর্থনীতির মোকাবিলায় দেশ জুড়ে অন্তত দু তিন বছর শ্রম আইন শিথিল করা হোক। কার্যত শিল্পপতি দের লগ্নি টানতেই শ্রম আইন শিথিল করে কর্মী স্বার্থ বিরোধী এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যার সবথেকে বড় পদক্ষেপ হলো এইসব রাজ্য গুলিতে কাজের সময় ৮ ঘন্টা থেকে বাড়িয়ে ১২ ঘন্টা করার কথা বলা হলেও ঐ অতিরিক্ত চার ঘন্টা কাজ করার জন্য কোনো অতিরিক্ত মজুরি বা ওভার টাইম দেওয়ার কথা বলা হয় নি! এই অনৈতিক শ্রমবিধিতে শ্রমিকের স্বাস্থ্য,কাজের পরিবেশ, নিরাপত্তা, কোনো কিছুই মালিকের দায়িত্বে থাকবে না। সরকার অবশ্য দাবি করেছে করোনা উত্তর মৃতপ্রায় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আপাতত এই সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।

কেন্দ্র সরকারের এই নীতিহীন শ্রমিক বিরোধী আইনের প্রথম বিরোধীতা করেছে বাম দলগুলি। সিপিআই(এম )এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআই নেতা ডি রাজা সহ বিরোধী দলগুলি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতিবাদ পত্র জমা দেয়। কংগ্রেসের রাহুল গাঁধী এবং প্রিয়াঙ্কা বঢ়ড়া ও এই আইনের প্রতিবাদ করেন। ইয়েচুরি বলেন, একদিকে কোভিড ঊনিশ অতিমারির সংকট অপরদিকে বিশাখাপত্তনমে বিষাক্ত গ্যাস দুর্ঘটনা, ঔরঙ্গাবাদে পরিযায়ী শ্রমিকদের রেলে কাটা পড়া, এই সমস্ত এড়িয়ে এমন সময় এমন কালা আইন শ্রমিকদের কোনঠাসা করবে। বাম শ্রমিক সংগঠন সিটু, এবং এ আই টি ইউ সি অবিলম্বে এই আইন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যে কোনো আইন সংবিধান মেনে প্রণয়ন করতে হবে! প্রিয়াঙ্কাও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যোগী সরকার দেশের জরুরি অবস্থায় শ্রমিক সুরক্ষা দেওয়ার বদলে শ্রমিকের অধিকার হরণ করছে।

শুধু বিরোধী দলগুলিই নয় বিভিন্ন আইন বিশারদ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতেও দেশের সংকট কালে মালিক স্বার্থে শ্রমিক বিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয়! আই সি আর আই’ এর রাধিকা কাপুর বলেছেন এই আইন শ্রমিক শোষণের পক্ষে সুবিধা জনক। শ্রম আইন বাতিল করা হলে শ্রমিক তার প্রাপ্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হবে। এ আই টি ইউ সি এর সাধারণ সম্পাদক অমরজিৎ কাউর বলেন এই আইন বলবৎ হওয়া মানে শ্রমিকরা আর কারো কাছে তাদের অভাব অভিযোগ জানাতে পারবে না, তারা তাদের ন্যুনতম অধিকার হারাবে। শ্রীবাস্তবের মতে এই আইনে নিয়োগ কমবে। সরকারের নিয়োগ বৃদ্ধি উদ্দেশ্য হলে আট থেকে বারো ঘন্টা না করে আট ঘন্টা করে দুটি শিফটে ভাগ করতে পারতো। রাধিকা কাপুর বলেছেন এটি সরকারের ভুল সময়ে ভুল পদক্ষেপ। শ্রীবাস্তবের ভাষায় আমরা উল্টো পথে হাঁটছি। নিঃসন্দেহে কোভিড ঊনিশে বিধ্বস্ত শ্রমিক শ্রেণীর কথা না ভেবে কেন্দ্র সরকার দেশের অর্থনীতির উন্নতির নামে অর্থনীতির মূল স্তম্ভ কর্মী বন্ধুদের অধিকার হনন করে যে শ্রমআইন কার্যকর করতে চলেছে তা সাধারণ মানুষের জন্য সুফল দায়ক হবে না! পৃথিবী ব্যাপী শ্রমিক স্বার্থে দীর্ঘ শ্রমিক আন্দোলনের ফসল হিসেবে আট ঘন্টা কাজের দাবি এই মে মাসেই পূরণ হয় আর সেই মহান মে দিবসের পরই এই মে মাসেই ভারতের মতো দারিদ্র পীড়িত দেশে শিল্পমালিক তথা পুঁজিপতি দের স্বার্থে শ্রমিক বিরোধী আইনকে বিরোধী দল গুলি এবং দেশের বুদ্ধিজীবী রাজনৈতিক মহল সু-নজরে গ্রহণ করতে পারছে না।।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।