সূপর্ণা রায়:চিন্তন নিউজ:১৮ই মার্চ:–৩৪ বছর বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় ছিল ।।১৯৭৭ সালের আগে পর্যন্ত পশ্চিমবাংলাতে পৌরসভা ছিল কিন্তু সেগুলো থাকলেও তাদের আর্থিক বল যেমন ছিল না তেমনি প্রশাসনিক কোন ক্ষমতা ছিল না।। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে পৌরসভাগুলো প্রথম স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় পরিনত হয়েছিল।। বামফ্রন্ট সরকার এর আগে পৌরসভা গুলোতে ভোট হতো না __
বাম সরকার ক্ষমতায় আসার পর নিয়মিত ভাবে পৌরসভা নির্বাচন শুরু হয়।। পৌরসভা গুলো কিভাবে মানুষের উন্নয়ন পরিকল্পনা করবে তা সাধারণ জনগণই ঠিক করত, পৌরসভা নির্বাচনে অর্ধেক আসনে মহিলা প্রার্থী, তফশিলী জাতি উপজাতিদের জন্যে আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছিল।।মনে রাখা উচিৎ বামফ্রন্ট সরকারের আমলে প্রথম ১৮ বছর বয়সীরা পৌর নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারত।একটা সুনির্দিষ্ট নীতির ভিত্তিতে বামফ্রন্ট সরকার পৌরসভা গুলোকে পরিচালনা করার উদ্যোগ নিয়েছিল।। বামফ্রন্ট সরকার প্রতিটি পৌরসভাকে দেখতো নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে।।।
বিরোধী পৌরসভা বামফ্রন্ট সরকারের আমলে ও ছিল কিন্তু তারা কোন অভিযোগ তোলার প্রয়োজন হতো না।। অভিযোগ করতে পারত না কারন সরকার পৌরসভাগুলোকে সমানহারে সুনির্দিষ্ট নীতিতে অর্থবন্টন করত।। প্রতিটি শহরে ওয়ার্ড কমিটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।। আর তার উপরে ছিল জেলা ও মেট্রোপলিটন কমিটি।। উন্নয়ন থেকে পরিকল্পনা সব বিষয়ে সাধারণ মানুষকে যুক্ত করাই ছিল মুলকথা।_উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাস্তা ঘাট , উদ্যান ঝাঁ চকচকে করে তোলার থেকেও পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়নে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল।। উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল ক্ষুদ্র ও মাঝারি শহর গুলোর ক্ষেত্রে।। বামফ্রন্ট সরকার রাজ্যের পৌরসভা গুলোকে পরিনত করেছিল সাধারণ মানুষের সংস্থা হিসেবে।
বামফ্রন্ট সরকারই প্রথম জহরলাল নেহরু আরবান রিনিউনাল মিশন প্রকল্পে ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প কেন্দ্রের থেকে অনুমোদন করিয়ে এনেছিল।। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রকল্প ছিল গরীব শহরবাসীর গৃহনির্মাণ এবং বস্তির উন্নয়ন।।বাম আমলে নিয়মিত ভাবে গঠন করা হতো অর্থ কমিশন। গঠিত হয়েছিল প্রশাসনিক সংস্কার কমিটি। পৌরসভার প্রতিটি এলাকায় পরিস্কার পানীয় জল,নিকাশি, স্কুল, রাস্তা ঘাটের উন্নতি হয়েছিল বাম জামানায়।। স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করা হয়েছিল এই সময়েই যাতে গরীব মানুষ আয়বৃদ্ধির চেষ্টা করতে পারে।।
২০১১ সাল, পটপরিবর্তন। ক্ষমতায় এলেন তৃনমুল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি।। তিনি ক্ষমতায় এসেই কেন্দ্রীভবন ঘটিয়েছেন, স্বায়ত্তশাসনের অধিকারের মাধ্যমে বিকেন্দ্রীকরণের ধারণাকে ধংস করেছেন।। তিনি তাঁর ভাবখানা এমন দেখিয়েছেন যে রাজ্যের সব উন্নয়ন তিনি একাই করতে পারবেন, সাধারণ মানুষের উন্নয়নের ভাবনা চিন্তা করার তেমন দরকার নেই।।
ভাবখানা এমন তিনি প্রথম ভোটে জিতে এসেছেন আর বামেরা ভোট কি জিনিস সেটাই জানত না।। মমতা ব্যানার্জি নিজেই সব সিদ্ধান্ত নেন তাই জনগণের অধিকার আজ আক্রান্ত।।বাম আমলে মেয়াদ শেষ হওয়ার সাথে সাথে ভোট হয়েছে কিন্তু তৃনমুল পরিচালিত সরকার নিজেদের সুবিধা মতো ভোট করাচ্ছে।।বহু পৌরবোর্ড আছে, তার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তবু ভোট না করিয়ে সরকার প্রশাসক বসিয়ে কাজ চালাচ্ছে।। মমতা ব্যানার্জি সংবিধানের উপর আক্রমণ রুখতে ব্যর্থ আর আন্দোলন তিনি করবেন কিভাবে?? তৃনমুল সরকার ই তো সংবিধান এর ৭৪ তম সংশোধনী অনুসারে মানুষের স্থানীয় অধিকার ও প্রাপ্য মানছে না।। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা পৌরসভা গুলোকে দখল করেছে শুধু ভোটকে প্রহসনে পরিণত করার জন্য না উপরন্তু প্রার্থী কেনাবেচা করা এদের বেশ বড় কাজ।।
বর্তমান আমলে বেশীরভাগ পৌরসভা তৃনমুল পরিচালিত।।তবু তারা ঠিকমতো পুরো সভার কাজ করে না।। নিয়মানুযায়ী পুরসভা পরিচালনা করে না,পুরো সভার আয়ব্যায় এর হিসাব প্রকাশ করে না , নেতাদের কাজ করার থেকে দূর্নীতি যে বেশী আগ্রহ।।জেলা পরিকল্পনা কমিটি গঠন করে না।।পৌর দপ্তর থেকে অর্থ বরাদ্দ করার সময় পছন্দের তালিকায় থাকা পৌরসভা গুলোকে অর্থ প্রদান করা হয় আর বিরোধী দলের হলে তাদের শুকিয়ে মারার চেষ্টা করা হয়।। তৃনমুল পরিচালিত সরকার শিলিগুড়ি কর্পোরেশনকে সবসময় বঞ্চিত করে চলেছে যেমন কোন প্রকল্পের জন্য পছন্দের পৌরসভা গুলো পাচ্ছে ৫হাজার কোটি টাকা সেক্ষেত্রে শিলিগুড়ি কর্পোরেশন এর প্রাপ্য মাত্র ৬০ লক্ষ টাকা।। শিলিগুড়ি কর্পোরেশন পানীয় জল,পয়প্রনালী, ইত্যাদি উন্নয়ন এর কাজে ১০০০/_ কোটি টাকার স্কীম জমা দিলে তৃনমুল পরিচালিত সরকার তা অনুমোদন করে নি।। অথচ শিলিগুড়ি কর্পোরেশন মানুষের জন্য দৃষ্টান্তমূলক কাজ করে যাচ্ছে।। নতজানু হবোনা এই হুঁশিয়ারি দিয়ে একদিকে উন্নয়ন আর অন্যদিকে বঞ্চনার বিরুদ্ধে সরব হয়ে আছে।।