দেশ রাজ্য

সার্কুলার জারি না করে শুধু মৌখিক নির্দেশ,


কাকলি চ্যাটার্জি:চিন্তন নিউজ:১৫ই মে:- লকডাউনের মর্মান্তিক পরিণতি দেশের সর্বত্র। রাজ্যে শুরু হয়েছে আত্মহত্যার মিছিল। কর্মহীন শ্রমিক বা দোকানের কর্মচারী, যাদের দুবেলা হেঁসেলে হাঁড়ি চড়ছে না তাঁদের কাছে অসুস্থ হলে চিকিৎসা তো বিলাসসামগ্ৰী। বিনা চিকিৎসায়, বিনা ওষুধে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন তাঁরাও। এও তো এক ধরনের আত্মহত্যায়! ঘরের পাশে পড়শী অভাবের তাড়নায়, পরিবারের ভরণপোষণের দুশ্চিন্তায় আত্মহত্যা করলে তাতে প্ররোচিত হচ্ছেন কিংবা ভয়ে দুশ্চিন্তায় হার্ট এ্যাটাক করে মৃত্যু হলে সেটা কোন তালিকায় স্থান পাবে?? নিরুত্তর, নিরুত্তাপ ভূমিকা প্রশাসনের।

নিজের রাজ্যে নেই কাজ, বাধ্য হয়েছেন ভিন রাজ্যে যেতে। সারাবছর রোজগার করে টাকা জমিয়ে ঈদ বা পুজোর সময় ঘরে ফেরা। বাড়িতে পথ চেয়ে অপেক্ষা করা পরিজন; সে তো আনন্দের ফেরা কিন্তু এখন যাঁরা ফিরছেন বা ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন শূন্য পকেটে, শূন্য হাতে একরাশ ক্ষোভ, হতাশা, যন্ত্রণাকে সঙ্গী করে তাঁরা অভিজ্ঞতায় জানেন কী ভীষণ দারিদ্র্য অপেক্ষা করে আছে আগামী দিনের জন্য। ৫০ দিনের দুর্দশায় তাঁরা প্রত্যক্ষ করেছেন সরকারের অমানবিক মুখ। দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৩ জন গত ২৪ ঘন্টায় , জখম হয়েছেন অন্তত ৫৫ জন। দিনের পর দিন অভুক্ত, অর্ধভুক্ত এই শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে বামপন্থী দল, গণসংগঠন এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। এখন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সীতারামন দাবি করছেন রাজ্যে রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের নাকি দিনে তিনবার স্বাস্থ্যসম্মত খাবার দেওয়া হয়েছে! তিনবেলা দূরে থাক একবেলা খাবার দেওয়ার ও কোনো ছবি মিডিয়া বা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যায় নি। বরং দেখা গেছে পুলিশের লাঠিচার্জ, রাসায়নিক স্প্রে, মালগাড়িতে পিষে যাওয়া ছিন্নভিন্ন লাশ।

প্রধানমন্ত্রী লকডাউন ঘোষণার ভাষণ পর্বে বলেছিলেন ছাঁটাই করা যাবে না কোনো কারখানার শ্রমিককে বা অফিসের কর্মচারীদের। মৌখিক নির্দেশ ছিল কোনো সার্কুলার জারি করা হয়নি। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। মালিকপক্ষের সাহায্য মেলেনি কোথাও, ন্যায্য পাওনাটাও পাননি। জমানো পুঁজি শেষ হতেই ট্রেন বাসের ব্যবস্থা না হওয়াতে হাজার হাজার কিলোমিটার হেঁটেই বাড়ির পথ ধরতে বাধ্য হয়েছেন। প্রত্যেক রাজ্যের সরকারের দায়িত্ব ছিল সেই রাজ্যে আটকে পড়া শ্রমিকদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার। কেরালা বাদ দিয়ে আর কোনো রাজ্য ই দায়ভার নেয়নি। তা যদি হত তাহলে তো শ্রমিকরা থেকে যেতেন সেখানেই, লকডাউন পর্বের শেষে পুনরায় নিজেদের কাজে বহাল থাকতেন। সরকার সবার জন্য রেশন ব্যবস্থা চালু করলেও আজ এই দুর্দশার মধ্যে পড়তে হতো না পরিযায়ীদের। সরকারের কাছে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা নিয়ে কোনো সঠিক তথ্যই নেই। এখন স্লোগান উঠছে এক দেশ এক রেশন কার্ডের। কিন্তু তাতে রাস্তায় থাকা মানুষেরা কোন সুবিধা পাবেন ? দরকার যাঁদের অনেকেই বঞ্চিত হবেন।

অর্থনৈতিক সংকট, জিডিপি নিম্নমুখী এতো চলছিল ই। কোভিড মোকাবিলায় বিপর্যস্ত কোম্পানির মালিকরা কর্মী সঙ্কোচন, বেতন ছাঁটাইয়ের পথে। কেন্দ্রীয় সরকার ব্যস্ত শিল্পপতিদের ছাড় দিতে। কাজহারা মানুষের ভরসা, আশ্রয়স্থল দিনের শেষে বামপন্থীরাই। আগামী দিনে সাধারণ মানুষের স্বার্থে তীব্র থেকে তীব্রতর হবে লড়াই আন্দোলন যতদিন না দাবি আদায় হচ্ছে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।