রাজ্য

গোষ্ঠিদ্বন্দ্বে দীর্ণ পাক নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তান এবং ভারতের অবস্থান:


প্রতিবেদক : চৈতালি নন্দী: চিন্তন নিউজ: আফগানিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল ১৯৭৩ সালের বিপ্লবের পর। ৩৩ বছর আগে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অপমানজনক পরিসমাপ্তি ঘটে আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত সেনা প্রত‍্যাহারের মধ‍্য দিয়ে। এই সময় পাক শাসকরা সোভিয়েত এর পিছু হটাকে নিজেদের জয় হিসেবেই দেখেছিল। চটজলদি তারা মুজাহিদিন কে ইসলামি ছকে সাজিয়ে নেয় শুধুমাত্র নিজেদের তাঁবেদার আফগান নেতাদের দিয়ে। মহম্মদ নাজিবুল্লার নেতৃত্বাধীন কাবুলের কমিউনিস্ট জামানার নিয়ন্ত্রণে আফগান সেনার বিরুদ্ধে পথে নামলো মার্কিন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ও পাক গোয়েন্দা (আইএসআই) তথ‍্যে বলীয়ান মুজাহিদিন বাহিনী।
১৯৯৫ সালে আফগানিস্তানের দখল নিল তালিবান নামক এক উগ্রপন্থী ইসলামী আফগান শক্তি। দেশজুড়ে কায়েম হলো শ্মশানের শান্তি। এরপর অতি দ্রুত আলকায়েদা ও অন্যান্য ভারত বিরোধী ইসলামী জঙ্গি সংগঠন গুলোর স্বর্গরাজ্যে পরিণত হোল আফগানিস্তান। ভারতের কূটনৈতিক দল বাধ‍্য হোল দেশে ফিরতে।

j ২০০১ সালে কাবুল থেকে তালিবানদের হটিয়ে জায়গা নিল আমেরিকান ও ন‍্যাটোবাহিনী। আস্তে আস্তে ছন্দে ফিরতে লাগলো আফগানিস্তান। সেসময় মনমোহন সিংহের নেতৃত্বে ভারত সরকার এখানে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করে। ছাত্রবৃত্তি থেকে প্রযুক্তি ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভারত সরকারের এই রমরমা মেনে নিতে প্রস্তুত ছিল না পাকিস্তান। আফগানিস্তানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণই ছিল তাদের লক্ষ‍্য।

চলতি বছরে আমেরিকান ও ন‍্যাটো বাহিনীর দুঃখজনক পশ্চাদপসরণের পরই তালিবানদের প্রবল শক্তিবৃদ্ধির খবর আসতে থাকে। একের পর এক দখল হতে থাকে আফগানিস্তানের বড় শহরগুলি। তালিবানদের এই বিক্রমকে পাকিস্তান নিজেদের জয় ও ভারতের পরাজয় হিসেবেই দেখছে। এছাড়াও আফগানিস্তানের মাটিতে সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী ও বিশ্বের কাছে মিথ‍্যে খবর প্রচার করে পাকিস্তানের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত কারী হিসেবেও ভারতকে দায়ী করেছে পাক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ ও প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ।

স্বভাবতই এই পরিস্থিতিতে কান্দাহার থেকে কূটনৈতিক দলকে দেশে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিতে হয় ভারতকে। মার্কিন ও ন‍্যাটো মিশিয়ে ১০,০০০ সেনা দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । বাইডেন এই সিদ্ধান্তের শরিক ছিলেন। দেশে ফেরার ভিসার জন‍্যে  লাইন দিয়েছে কয়েক হাজার মানুষ, যারা মার্কিন বাহিনীর নানা কাজকর্মে যুক্ত ছিল।  পাততাড়ি গোটাচ্ছে  সেইসব চীন ও ভারতীয় কোম্পানি গুলি ,যারা এখানে ব‍্যাবসা শুরু করেছিল। বন্ধ হচ্ছে স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি। মহিলারা আতঙ্কিত, কারণ তালিবান শাসনের হিংস্র, স্বৈরাচারী, নির্মম ইসলামী ফতোয়ার পূর্বস্মৃতি তাদের রয়েছে। এদেশ ছাড়ার মার্কিনি ব‍্যাখ‍্যা ছিল আফগানদের ভবিষ্যৎ ঠিক করবে আফগানিরাই। তাই যদি হবে, তবে কিউবার ক্ষেত্রে উল্টোপথে হাঁটার সঠিক ব‍্যখ‍্যা তারা দিতে পারেনি। আসলে সিদ্ধান্তটি যে নেহাত চাপে পড়েই মার্কিনিরা নিতে বাধ‍্য হয়েছে এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।
  
আফগানিস্তানে মার্কিনিদের এই লজ্জাজনক পরাজয়ের পর ভারতের কাছে পুনরুজ্জীবিত পাকিস্তান এক মূর্তিমান বিপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। কোনো বিশ্বশক্তির পক্ষেই পাকিস্তানকে এখন অগ্রাহ্য করা সম্ভব নয় বলেই পাকিস্তান দাবি করছে। তারা আরও দাবি করছে তালিবানদের এই বিজয়রথ অভিযান সম্পূর্ণ হবার আগেই বিশ্ববাসীর উচিত তাদের পূর্ণ ক্ষমতা স্বীকার করে নেওয়া। পাকিস্তানের এই আত্মপ্রত‍্যয়ের কারণ হলো তালিবানদের বিজয়রথের  চালিকাশক্তি রয়েছে পাকিস্তানের হাতে। ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হুঁসিয়ারী দিয়ে পাকিস্তান জানিয়ে দিয়েছে কোনো দেশকেই আফগানিস্তানে কার্যকলাপ চালানোর জন‍্যে ঘাঁটি বানাতে দেওয়া হবেনা।
 
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বৈঠকে তালিবানরা নিজেদের শান্তিকামী হিসেবে প্রতিপন্ন করতে চাইলেও তাদের প্রধান শর্তই হোলো ৭০০০ তালিবানের নিঃশর্ত মুক্তি, যা আদতে তাদের শক্তিবৃদ্ধির সহায়ক হবে। ইসলামী ধর্ম অনুসারে মাদক সেবন পাপ হলেও তাকে বাণিজ‍্যিকভাবে ব‍্যবহারে ইসলাম ধর্মে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। ফলে যুদ্ধখাতে যাবতীয় খরচের চালিকাশক্তি হোলো মাদক ব‍্যবসা। এই ব‍্যবসা সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় পাকিস্তান ও করাচি বন্দরের মাধ‍্যমে, যা পাক তালিবানদের উগ্র সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা উত্তর পশ্চিম সীমান্তে এদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত করেছে।

আফগানিস্তানের এই রূপান্তরিত পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক শক্তির ভারসাম্যে যে পরিবর্তন সূচিত হোল তা ভারতের পক্ষে যথেষ্ট উদ্বেগজনক। সারা বিশ্বের সাথে সাথে ভারতের রাজনৈতিক দল গুলি ও আফগানিস্তান এর পট পরিবর্তনের দিকে নজর রাখছে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।