স্বাতী শীল: চিন্তন নিউজ:১লা জুন:- এর পরের বিশ্বযুদ্ধ হবে কোথায়? উত্তর রাতের প্রাইমটাইম। কার্যত রিপাবলিক টিভির মত দেশের একাংশের মিডিয়া চ্যানেলের স্টুডিও ডিবেট হয়ে উঠছে “ওয়ার রুম”। অন্ধ জাতীয়তাবাদ, মুসলিম বিদ্বেষ আর যুদ্ধ উন্মাদনার মিশেল।
রিপাবলিক টিভির মুখ্য সম্পাদক অর্নব গোস্বামীর ” বিরিয়ানিভুক পাক পঙ্গপাল” ভারতের মূলধারার মিডিয়ার বল্গাহীন গেরুয়করনের সাম্প্রতিকতম উদাহরন!
কার্যত ‘ভাঁড়’ এ পরিণত হয়েছেন রিপাবলিক টিভির মুখ্য সঞ্চালক অর্ণব গোস্বামী। অন্যান্য চ্যানেলগুলিতে যেখানে সন্ধ্যে হলেই বিশেষজ্ঞদের প্যানেল বসিয়ে মতামত নেওয়া বা আলোচনা করার একটি প্রবণতা দেখা যায় সেখানে অর্ণব গোস্বামীর শো এ তিনি নিজেই একাধারে সঞ্চালক এবং বিশেষজ্ঞ। তার মতই শেষকথা,তা যতই ভ্রান্ত হোক না কেন। এভাবেই কার্যত মোদি মিডিয়ার একচ্ছত্র অধিপতি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছেন তিনি।
নিরলস চাটুকারিতার অন্যতম উদাহরণ অর্ণব গোস্বামী প্রধানমন্ত্রীর মতই দেশের যেকোনো সমস্যা নিয়েই পাকিস্তানকে দায়ী করে এসেছেন শুরু থেকেই,এ বিষয়ে সকলেই অবগত। কিন্তু তার এই বারের বক্তব্য সম্ভবত তার নিজেরই পূর্বের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে হওয়া পঙ্গপালের হামলাকে ‘পাকিস্তানের চক্রান্ত’ বলে দাবি করে কার্যত চাটুকারিতার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে গেলেন অর্ণব গোস্বামী। পাকিস্তান থেকে আসা বিরিয়ানিভুক পঙ্গপাল মোকাবিলায় দেশ সফল হবে, এমন কথাও অনায়াসে বলেছেন তিনি!
এই ঘটনা নতুন কিছু নয়। এর আগেও দেশের আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি যখনই হাতের বাইরে গেছে জনগণের দৃষ্টি ঘোরানোর জন্য সীমান্তে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা শুরু হয়েছে এবং কেন্দ্র সরকারের প্রিয় সাংবাদিক তাঁর গলার স্বর কয়েক পর্দা উপরে তুলে যথারীতি পাকিস্তানের মুন্ডুপাত করেছেন। এবারও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। করোনা মোকাবিলায় যে কেন্দ্র সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। তার উপর পরপর প্রাকৃতিক বিপর্যয়,পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে বিরোধীদের বিক্ষোভ, অপরিকল্পিত লক ডাউনের ফলে বেহাল অর্থনীতি ও বিপর্যস্ত জনজীবন এর পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্যে হওয়া পঙ্গপালের হামলায় শস্যের ব্যাপক ক্ষতিতে কৃষকদের স্বভাবতই মাথায় হাত। প্রায় সবকটি সংবাদ মাধ্যমেই এই নিয়ে আলোচনা ও লেখা হয়েছে।এই পরিস্থিতিতেও রিপাবলিক টিভির সঞ্ছালক অর্ণব গোস্বামী এক নতুন তত্ত্ব পেশ করলেন। তার দাবি পঙ্গপালের এই হামলার পিছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে। নিজের শোতে অর্ণব বলেছেন যে,”পাকিস্তানে তো আর কোন সন্ত্রাসবাদী নেই কারণ আমরা ওদের শূলে চড়িয়ে দিয়েছি। তাই এখন পঙ্গপাল দেরকে সন্ত্রাসবাদী হিসেবে ব্যবহার করছে পাকিস্তান।” তিনি আরো বলেন যে,”সমগ্র ভারত জানতে চায় যে, পাকিস্তান কি এবার ভারতের বিরুদ্ধে পঙ্গপাল হামলার ছক কষছে?”
তার এই মন্তব্যের পরেই কার্যত সারা দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়া সহ সর্বত্র তাকে নানা ট্রোলের শিকার হতে হচ্ছে।
নগ্ন চাটুকারিতা যে কতটা নির্লজ্জ হতে পারে তার জ্বলন্ত উদাহরণ অর্ণব গোস্বামী দের মত সাংবাদিকরা। তাইতো একসময়ের স্টার রিপোর্টারকে আজ “সাংবাদিকতার ক্যান্সার” উপাধিতে দাগিয়ে দিতেও বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করছেন না বিশেষজ্ঞদের একাংশ। সোশ্যাল মিডিয়ায় “বিরিয়ানি ভুক পঙ্গপাল” দের নিয়ে চলছে মজার ভিডিও, থেকে নানান রকমের মিমের আদান প্রদান।