দেশ

ওড়িশার ঢিনকিয়া ; জমি হস্তান্তরের এক অসম লড়াই।।


 চৈতালি নন্দী: চিন্তন নিউজ:২৪শে জানুয়ারি:– ওড়িশার ঢিনকিয়ায় সরকারী মদতে জেলা প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাদের বলপূর্বক উচ্ছেদ করে সেই জমি বেসরকারি সংস্থা পস্কোর হাতে তুলে দেবার সরকারী চক্রান্তের প্রতিবাদে ও প্রতিরোধে স্থানীয় মানুষ। পরিস্থিতি এমনই ঘোরালো যে ঢিকনিয়া এখন দাঁড়িয়ে রয়েছে এক বারুদের স্তুপের উপর। যে কোনো মূহুর্তে গ্রাস করবে লেলিহান বহ্নিশিখা। এই প্রতিরোধে গ্রামবাসী ও স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে রয়েছে সমাজকর্মী ও পরিবেশবিদরাও। উন্নয়নের নামে বৃক্ষনিধন নাগরিক সভ‍্যতার একটা যন্ত্রণার নাম । এই ঘটনার সূত্রপাত গত দশকের শেষার্ধে। ওড়িশাতে বেসরকারি কারখানার জন‍্যে জমি দখল করতে গিয়ে একইভাবে তীব্র প্রতিরোধের সম্মুখীন হয় সরকার। সেসময় বলপূর্বক সরকারী ক্ষমতা ব‍্যাবহার করে প্রায় ১০০০ গাছ কাটা হলেও মিডিয়া এবং জনরোষের সামনে পড়ে পিছু হটতে বাধ‍্য হয় সরকার।
 
সম্প্রতি উচ্ছেদ তথা জমি হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে  স্থানীয় অধিবাসীদের ব‍্যাপক আর্থিক হয়রানি,  শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। দেওয়া হয় মিথ‍্যে মামলা, যা বহু ক্ষেত্রেই জামিন অযোগ্য।ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা সহ ১৯ জনকে। যার মধ‍্যে এই আন্দোলনের মুখপাত্র প্রশান্ত পাইক্রে সহ সমাজকর্মী দেবেন্দ্র সোয়াইন, মুরলীধর সাহু, নরেন্দ্র মোহান্তি ও আরও কয়েকজন। প্রবল শারীরিক নির্যাতনের ফলে এদের কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গ্রামের পুরুষরা ঘরছাড়া। কিন্তু মহিলারা রয়েছেন সামনের সারিতে। তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদের নথিতে বলপূর্বক সাক্ষর করানোর চেষ্টা করলেও তারা প্রশাসনের কাছে মাথা না নোয়াতে বদ্ধপরিকর।

৪০০ টিরও বেশি জমির দাবির কোনো মীমাংসা না হলেও আন্দোলনকে দূর্বল করা ও ভেঙে দেবার উদ্দেশ্যেই জিন্দালকে সামনে রেখে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এককাট্টা গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন বনাঞ্চল তাদের সাংবিধানিক অধিকার এবং তারা তাদের অধিকার  সম্বন্ধে সচেতন। কোনো মূল‍্যেই তারা এই লড়াই থেকে পিছু হটবেন না। বনাঞ্চল শুধুমাত্র রাষ্ট্রের পৈতৃক সম্পত্তি নয়, ভূমিজ মানুষের বেঁচে থাকার এবং অস্তিত্ব রক্ষার রসদ এই বনভূমি। তাছাড়া ক্রেতা কোম্পানীগুলির বনাঞ্চল ধ্বংসের কোনো পরিবেশগত ছাড়পত্রও নেই।

সিপিআই(এম) এই আন্দোলনকে নৈতিক সমর্থন জানিয়ে বলেছে জোর করে জমি নিলে ফল ভুগতে হবে প্রশাসন কেই। ভারতের সাম্প্রতিক কৃষক আন্দোলন মানুষকে শিখিয়েছে লড়াই ও সঙ্ঘবদ্ধ আন্দোলনের কোনো বিকল্প হয়না। লড়াই অসম হ’লেও নিজের দাবি আদায়ে রুখে দাঁড়ালে জয় অবশ‍্যম্ভাবী।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।