জেলা

চিকিৎসক ও আয়ার রক্তে বাঁচলেন এক প্রসুতি।


সূপর্ণা রায়:চিন্তন নিউজ:২৬শে এপ্রিল:-করোনা সংক্রমণের জেরে গোটা দেশ জুড়ে চলছে লকডাউন।। এক অদেখা জীবাণুর সাথে লড়ছে বিশ্ব। কিন্তু পৃথিবীতে নতুন প্রাণ আসা তো থেমে থাকবে না।। সে আসবেই।। এই সঙ্কটের মধ্যে এক খেতমজুরের স্ত্রীর কোলে এল এক শিশু কন্যা।। মেয়ের জন্মের পর থেকে মায়ের শরীর খারাপ থেকে আরও খারাপ হতে থাকে।। তখন‌ই প্রয়োজন এ’- পজিটিভ রক্ত।। কিন্তু দরকার বললেই তো পাওয়া যাবে না।। রক্ত নেই সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কেও।

এই দুঃসময়ে এগিয়ে এলেন নার্সিংহোমের ডাক্তার, স্বাস্থ্য কর্মী,নার্স ও আয়া মাসির দল।। এককাট্টা হয়ে সবাই জানালেন তাঁরা সবাই রক্ত দিতে প্রস্তুত। সেইমতো সকলের রক্ত পরীক্ষা শুরু হয়।। একজন চিকিৎসক ও একজন আয়ামাসির রক্তের গ্রুপ মিলে যায় প্রসুতি মা আজমিরার সঙ্গে।। ব্যাস আর এক মূহুর্ত অপেক্ষা না করে চিকিৎসক প্রলয় মুখার্জি ও আয়া মাসি অঞ্জলী মন্ডল উলুবেড়িয়া হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে। সেখানে রক্ত দিয়ে তারপর তা প্রক্রিয়াকরণ করে দ্রুত চলে আসে নার্সিংহোমে।। রক্ত দেওয়া হয় সঙ্কট জনক প্রসুতি মা আজমিরাকে।। তারপর সব সঙ্কট কেটে যায় এবং এখন পুরোপুরি সুস্থ মা ও মেয়ে।।
উলুবেড়িয়া ধূলাসিমলা থেকে কাজ করতে আসা আয়ামাসি অঞ্জলী মন্ডল জানান যে প্রসুতি মায়ের অবস্থা মেয়ে জন্মের পর থেকেই অত্যন্ত আশঙ্কা জনক হয়ে যায়।। রক্তের প্রয়োজন তাই ওনার গ্রুপ মিলে যাওয়াতে আর এক মূহুর্ত অপেক্ষা না করে রক্তের গ্রুপ মিলে যাওয়া ডাক্তার প্রলয় মুখার্জির সাথে রক্ত দিতে চলে যান।। জানালেন মা এখন সুস্থ আর তিনি পুরো ডিউটি সেরে একেবারে রবিবার রাতে বাড়ী ফিরবেন।খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই অত্যন্ত কুন্ঠিত হয়ে ডাঃ প্রলয় মুখার্জি জানিয়েছেন চিকিৎসা করাই তাঁর ধর্ম।

চোখের জলে ষাট ছুঁই ছুঁই এক মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন নার্সিংহোমের প্রতীক্ষালয়ের সামনে।। রক্ত দেওয়ার কথা উঠতেই কেঁদে ফেললেন মহিলা।।। জানালেন ওই ডাক্তার বাবু ও আয়া দিদির জন্য তাঁর বৌমা কে ফিরে পেলেন।। ওই মহিলা মনোয়ারা বেগম বলছিলেন ওই ডাক্তার বাবু যা উপকার করেছেন তা তিনি জীবনে ভুলবেন না।। বাগনানা এর শেখ মান্নান এর সাথে বছর পাঁচেক আগে বিয়ে হয় আজমিরার।। সামান্য রাজমিস্ত্রী র জোগাড়ের কাজ করেন।। এই মেয়ের আগে তাঁদের একটা বছর তিনেকের একটি মেয়ে আছে।। বৃহস্পতিবার হঠাৎ আজমিরার শরীর খারাপ শুরু হয়।। তড়িঘড়ি তাকে নিয়ে উলুবেড়িয়া হাসপাতালে নিয়ে যান মান্নান।। কিন্তু তার অবস্থা দেখে ডাক্তার বাবু রা কলকাতায় নিয়ে যেতে বলেন।। কিন্তু লকডাউন এর সময় কোথায় গাড়ী না পেয়ে বাধ্য হয়ে তাঁদের বাড়ী আমতায় ফিরে যান।। আমতাতেই বহু নার্সিংহোমের দরজায় দরজায় ঘুরেও আজমিরাকে ভর্তি করতে পারেন নি।।

তারপর পরিচিত একজনের সাহায্য উলুবেড়িয়ার এই বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করেন।। ডাঃ প্রলয় মুখার্জি জানিয়েছেন হবু মায়ের শরীর খুবই খারাপ ছিল ।।তাই কোনরকম ঝুঁকি না নিয়ে তড়িঘড়ি সিজার করেন।। অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল প্রায় দেড় ঘন্টা যমে মানুষে টানাটানি করে অপারেশন করেন ও এক শিশু কন্যার জন্ম দেন আজমিরা।। বাচ্চার জন্মের পর মায়ের অবস্থা আরও খারাপ হতে শুরু করে।। তখন প্রচুর পরিমাণে রক্তের প্রয়োজন।। পরে সকলের চেষ্টাতে এখন আজমিরা ও তার মেয়ে স্থিতিশীল রয়েছে।।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।