দেশ

মুখে বেটি বাঁচাও, অথচ মেয়ে ভ্রূণ হত্যা জেনেও সরকার নির্বিকার।


মৌসুমী চক্রবর্তী: চিন্তন নিউজ:-২৩শে জুলাই:–মোদীর নতুন ভারতও ছেলেই চাইছে, উত্তরাখণ্ডের ১৩২টি গ্রামে তিন মাসে জন্ম নেয়নি একটিও মেয়ে__

ভারতবাসী গর্বিত, চন্দ্রযান পাড়ি দিলো মহাকাশে। গর্ব করার মতোই কাজ ।
কিন্তু দেশ জুড়ে যে ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’-এর ফাঁপা শ্লোগান , দেখা যাচ্ছে মোদীর নতুন ভারতে,ডিজিটাল ভারতে বাপ-মায়েরা কন্যাসন্তান চাইছেন না। সংখ্যাতীত কন্যাভ্রূণ নষ্ট করতেও পিছপা হচ্ছেন না ডিজিটাল ভারতের মা বাবারা।
প্রসঙ্গত ,উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলার ১৩২টি গ্রামে গত তিন মাসে ২১৬টি শিশুর জন্ম হয়েছে ,যা প্রমানিত ।অথচ এই শিশুসন্তানদের মধ্যে একটিও মেয়ে নেই। এ সম্ভব!!এর থেকে স্পষ্ট, ঢালাও কন্যাভ্রূণ হত্যা চলছে।
উত্তরকাশী ব্যতিক্রম নয়। গোটা দেশের পরিসংখ্যানই কিন্তু বলছে, এ দেশে জন্মের হারই কিছু কমছে। তার সঙ্গে কমেছে কন্যাসন্তান জন্মের হারও। দেশের মানুষের এখন কম সন্তানের জন্ম দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে । তাতেও দেখা যাচ্ছে বেশি সংখ্যায় পুত্র-সন্তানের জন্ম হচ্ছে এবং গ্রামের তুলনায় শহরে এই প্রবণতা বেশি। যা থেকে স্পষ্ট, শহরে কন্যাভ্রূণ হত্যা বেশি হচ্ছে।

সদ্য প্রকাশিত রেজিস্ট্রার জেনারেল-এর ২০১৭-র স্যাম্পল রেজিস্ট্রেশন সার্ভে বলছে, ২০১৫ থেকে ২০১৭, এই তিন বছরে প্রতি ১ হাজার পুত্র সন্তানের পাশাপাশি মাত্র ৮৯৬টি কন্যাসন্তানের জন্ম হয়েছে। গ্রাম ও শহরের মধ্যে যে ফারাক লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে,গ্রামে ১ হাজার ছেলের জন্ম হলে ৮৯৮টি মেয়ের জন্ম হয়েছে। শহরে ১ হাজার ছেলের জন্ম হলে ৮৯০টি মেয়ের জন্ম হয়েছে। অথচ স্বাভাবিক নিয়মে ১০০০টি ছেলের জন্ম হলে ৯৫০ থেকে ৯৫৫টি মেয়ের জন্ম হওয়ার কথা।

প্রাক্তন মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন গত বছর তাঁর আর্থিক সমীক্ষায় বলেছিলেন, এ দেশে ২.১০ কোটি ২৫ বছরের কমবয়সি মেয়ে রয়েছে, যারা আসলে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, অনেক বাবা-মা ছেলে না হওয়া পর্যন্ত সন্তানের জন্ম দিতে থাকেন। স্যাম্পল রেজিস্ট্রেশন সার্ভে থেকে স্পষ্ট, এখন একটি সন্তানের জন্ম দিতে চাইলে বাবা-মায়েরা ছেলেই চাইছেন। বিশেষ করে শহরে। তার ফলে দিল্লির মতো শহর-ভিত্তিক রাজ্যেও জন্মের সময় পুত্র-কন্যার অনুপাত ২০১৫ থেকে ২০১৭-র মধ্যে ৯১৮ থেকে ৮৯৭-তে নেমে এসেছে।

গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সর্বভারতীয় সভানেত্রী মালিনী ভট্টাচার্যর জানিয়েছেন , গর্ভস্থ ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ আইনত বেআইনি। তবুও অত্যাধুনিক আলট্রাসোনোগ্রাফির সাহায্যে গর্ভস্থ ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ সহজেই করা যায় । শহরে এইসব প্রযুক্তি সহজলভ্য বলে, শহরে কন্যাভ্রূণ হত্যাও বেশি হচ্ছে বলে মালিনীদেবী মনে করেন । কন্যাসন্তানের প্রতি কেন এখনও এ রকম দৃষ্টিভঙ্গি? সমাজতত্ত্ববিদ অভিজিৎ মিত্র মতে, ভারতীয়রা অন্য দেশের লোকের তুলনায় পুরনো ধ্যান-ধারণা আঁকড়ে বাঁচতে পছন্দ করে।পুত্র সন্তান বৃদ্ধ বয়সে দেখবে,কন্যা সন্তান নয় , কারণ তাকে বিয়ের পর অন্য বাড়িতে যেতে হবে ।এছাড়া পন প্রথা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ।
এই ভয়ঙ্কর বিষয় টি প্রকাশিত হবার পর কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা কি হবে এখন সেটাই দেখার ।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।