দেশ

এন.আর.সি. আতঙ্ক : ১৯৭১ সালের আগের ভোটার তালিকা ওয়েবসাইটে দেওয়ার দাবি


চৈতালী নন্দী, চিন্তন নিউজ, ২৫ সেপ্টেম্বর: এন.আর.সি. আতঙ্ক ক্রমে ছড়িয়ে পড়ছে রাজ‍্য থেকে রাজ‍্যে। শুরু হয়েছে মৃত্যু মিছিল। দশকের পর দশক ধরে যারা এরাজ‍্যে বসবাস করছে, এখানে বড় হয়েছে, এখানে পড়াশোনা করছে, এখানে কাজকর্ম করছে তারা এখন কোথায় যাবেন! তাদের রয়েছে রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড। কিন্তু তাতে কাজ হবেনা। চাই বিশেষ কয়েকটি প্রমাণ পত্র। যা জোগাড় করা সাধারণ মানুষের কাছে প্রায় অসম্ভব। ১৯৭১ সালকে ভিত্তি করে তার পরে যারা এদেশে এসেছে তাদের জন‍্যে বিশেষ ডিটেনশন ক‍্যাম্পের ব‍্যাবস্থা করা হচ্ছে। মানুষ দিশেহারা। বিশেষত দেশভাগের পর ছিন্নমূল মানুষের ঢল নেমেছিল সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে। এর পরে ছিল আসাম ত্রিপুরা সহ রাজ‍্যগুলি। একসময় দ্বিজাতিতত্বের ভিত্তিতে হয়েছিল দেশভাগ তথা বাঙলা ভাগ।ফলে দেশভাগের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় নেমে এসেছিল বাঙালিদের উপর।

সাধারণ ভাবে যে অভিযোগকারী তাকেই প্রমাণ করতে হয় যে, অভিযুক্ত অপরাধী। কিন্তু এক্ষেত্রে অভিযুক্তকেই  প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি অপরাধী নন, বৈধ নাগরিক। এই কারনে বৈধ নাগরিকত্বের নথি জোগাড় করতে মানুষ ছুটছে। কেউ হাসপাতালে, কেউ স্কুলে তো কেউ সরকারি দপ্তরে। কিন্তু তখন তো জন্মের শংসাপত্রের ব‍্যবস্থা ছিল না। তা শুরু হয়েছিল বাম আমলে।একই ভাবে অপারেশন বর্গার পর জমির দলিল পেয়েছে কৃষকরা। শিক্ষার প্রসারও ঘটে বাম আমলেই। অতএব ১৯৭১ সালের আগের প্রমাণ পত্র জোগাড় করা সাধারণ মানুষের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। এর উপর রয়েছে প্রমাণ পত্র নাকচ হবার সম্ভাবনা।

বিধানসভার বাম দলনেতা সুজন চক্রবর্তী দাবি করেছেন পুরোনো ভোটার তালিকা আছে সরকারের হেফাজতেই। প্রমাণ পত্র ও নথির খোঁজে হয়রান মানুষের স্বার্থে তা সরকারি ওয়েবসাইটে আপলোড করা হোক। এছাড়া জেলা, মহকুমা, ব্লক প্রশাসনের মাধ‍্যমে তার সেসকল নথি প্রত‍্যয়িত নকল সব মানুষকে প্রদান করা হোক। তিনি মুখ‍্যমন্ত্রীকে এই দাবি নিয়ে চিঠিও লেখেন। প্রকৃতপক্ষে সরকারের সদিচ্ছা থাকলেই এই পুরোনো ভোটার তালিকা প্রকাশ সম্ভব।

তিনি লিখেছেন ১৯৫১ সাল ও তারপরের ভোটার তালিকা সংরক্ষিত রয়েছে রাজ‌্য সরকারি আর্কাইভে। তা অবিলম্বে প্রকাশ করা হোক।
আসামে এন.আর.সি.-তে বাদ পড়েছেন ১৯লক্ষ মানুষ। দ্বিজাতিতত্বের ভিত্তিতে সংখ্যা লঘুদের দেশ থেকে বিতাড়নের যে কারন বিজেপি দেখাচ্ছে তা অসত‍্য। কারন এর মধ‍্যে রয়েছেন ১২ লক্ষ হিন্দু। প্রকৃতপক্ষে আঘাতটা নেমে আসছে জাতিগত নয় ভাষাগত কারনে। ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম‍্যের প্রশ্ন তুলে ইতিমধ্যেই অসমের বিদ্বজ্জনেরা মামলা করেছেন। ১৯৭১ সালের পর মূলত বাঙালি হিন্দুরাই ও বাংলাদেশ থেকে এদেশে এসেছে। আসলে আঘাতটা নামছে বাঙালিদের উপর। তবে এই বাঙালিআনার বোধ থেকে যেন কোনো সংকীর্ণ বিভেদকামী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে না ওঠে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।