শান্তনু বোস:শিলচর, নিজস্ব প্রতিবেদন:- চিন্তন নিউজ:১৭ই নভেম্বর:- ইলেক্ট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ার দৌলতে পশ্চিমবঙ্গে এখন দুই রাজনৈতিক দালালের লড়াই। এক সময়কার তৃণমুকুল এখন পদ্ম হয়ে প্রস্ফুটিত। সেই শূন্যস্থান পূরণের জন্য আরেক দালাল পিকে এখন তৃণপঙ্কে। বৃহৎ কর্পোরেট পুঁজির পক্ষে দাঁড়ানোয় তৃনমুকুল এখন মিডিয়ার ভাষায় চানক্য হয়ে এগিয়ে আছে। ফাটকা পুঁজির ব্যক্তিকেন্দ্রিক আঞ্চলিক দলের পক্ষ নেওয়া পিকে পিছিয়ে। এটাই স্বাভাবিক। পুঁজিবাদের মাৎস্যন্যায়ের সময়ে, বৃহৎ কর্পোরেট পুঁজির কাছে ক্ষুদ্র ফাটকা পুঁজির ব্যক্তিকেন্দ্রিক আঞ্চলিক দলটি আত্ম সমর্পণ করতে বাধ্য। নেতারা জল মাপছে। নির্বাচনের আগেই ভিরবে,না-কি পরে। বৃহৎ কর্পোরেট পুঁজি এখন তার অন্যতম ধারালো অস্ত্র নিয়ে ময়দানে নেমেছে। ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ। কিন্তু ইতিহাস তো অন্য কথা বলে। চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দাঁড়িয়ে মানুষ যে ইতিহাসটা রচনা করে সেটা দালালের ইতিহাস নয়। সেটা লালের ইতিহাস। সারাটা বছর জুড়ে মিডিয়ার একতরফা প্রচার, বৃহৎ কর্পোরেট পুঁজির দল বিজেপির পালে হাওয়া লাগাতে ব্যর্থ। চিরকালের জাতপাতের রাজনীতির রাজ্য বিহারের মানুষ জাতপাত ভুলে শ্রেনী রাজনীতির দিকেই ঝুঁকেছে। বামপন্থীদের অভূতপূর্ব জয়। শেষ রক্ষা হল না ঠিকই, কিন্তু বিপুল পরিমানে অর্থ বিনিয়োগ করে বিহার বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির জয় আসলে গলায় একটা কাঁটা বিঁধিয়ে রাখলো। মানুষকে ধর্মীয় মেরুকরণ করানো গেল না। কোভিড১৯ পরিস্থিতিতে হাজার হাজার মাইল হেঁটে ঘরে ফেরা সিউশরন আর সিকান্দার বক্সকে লাল পতাকার তলায় সামিল করলো সামগ্রিক পরিস্থিতি। এটাই ইতিহাসের শিক্ষা।
বাকসর্বস্ব চৌকিদারের ভাষনে ধার কমেছে। মানুষ আর ভুলছে না। সারা দেশ জুড়ে কোভিড১৯ পরিস্থিতিতে অর্থনীতি যখন গভীর সংকটে, সার্বিক উৎপাদন নিম্নমুখী। তখন দুটো জিনিস বৃদ্ধি পেয়েছে। নির্দিষ্ট কিছু কর্পোরেট কোম্পানির সম্পদ আর চৌকিদারের দাড়ি। বিকাশ অবশ্যই হয়েছে। তবে সেটা পুঁজির বিকাশ। শ্রমের বিকাশ নয়। সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন-জীবিকায় অনিশ্চয়তা। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের তীব্র মুল্যবৃদ্ধি। দেশের সরকারের যে সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা তখন সরকার সমস্ত অর্থ ব্যবস্থাটাই বাজারের মুনাফাখোরের হাতে তুলে দিচ্ছে।
লাল ঝান্ডার বামপন্থীরা এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। তাই সাত দফা দাবিতে আন্দোলনের ডাক। দেশ জুড়ে সাধারণ ধর্মঘট আগামী ২৬শে নভেম্বর।
১) আয়কর দাতা নয় এমন সমস্ত পরিবারের জন্য প্রতি মাসে নগদ ৭৫০০ টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
২) ঐ সমস্ত পরিবারকে মাথাপিছু দশ কেজি করে খাদ্যশস্য দিতে হবে।
৩) গ্রামীন রেগা প্রকল্পে ২০০ দিনের কাজ নিশ্চিত করতে হবে,এই প্রকল্প শহরেও চালু করতে হবে।
৪) সংসদে জোর -জবরদস্তি পাস করানো শ্রমকোড বাতিল করতে হবে ।
৫) কৃষি ও কৃষকের স্বার্থ বিরোধী সম্প্রতি প্রণীত তিনটি কৃষি আইন খারিজ করতে হবে ।
৬) রাষ্ট্রায়ত্ত্ব শিল্পসংস্থায় ঢালাও বেসরকারীকরণ বন্ধ করতে হবে । বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ও সরকারি সংস্থায় চাপিয়ে দেওয়া বাধ্যতামূলক অবসর প্রকল্প বাতিল করতে হবে।
৭) অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমজীবী মানুষদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প সহ সার্বজনীন পেনশন চালু করতে হবে ।
রাজ্যের শাসকদল মা মাটি মানুষের ঠিকা নেওয়া নেত্রীর ভূমিকা প্রকাশ্যে আসতে চলেছে এই সাধারণ ধর্মঘটে। চুড়ান্ত দুর্নীতিতে নিমজ্জিত এই দল, বিজেপির বিরোধিতা করতে পারে না। সারদা,নারদা সহ সমস্ত দুর্নীতির ফাইল সহ সেলফি তুলে অমিত শাহ্ মাননীয়ার হোয়াটসঅ্যাপে হয় তো পাঠিয়ে রেখছেন। তাই গোপন সমঝোতায় প্রতিযোগিতা মূলক সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে বিজেপিকে জায়গা করে দিতে মাননীয়া বাধ্য। রাজ্য সভায় তৃণমূল কংগ্রেসের ভূমিকা দেখার পরেও এ বিষয়ে সংসয় থাকার কথা নয়। সারা দেশে আরএসএস নামক কুখ্যাত সংগঠনের প্রকাশ্যে খেলা তাসটার নাম যদি বিজেপি হয়,তাহলে আস্তিনের নীচে রাখা তাসটার নাম তৃণমূল কংগ্রেস। গোটা দলটার শান্তি পূর্ণ হস্তান্তর হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। সারা দেশ জুড়ে লাল ঝান্ডার লড়াই ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। রাজ্যে একটু বাড়তি লড়াই ফ্যাসিবাদের বঙ্গীয় দোসর তৃণমূল কংগ্রেসের সাথে। বন্ধনী একটাই। লড়াই মুখোমুখি। বামপন্থা বনাম দক্ষিণ পন্থা। আগামী ২৬শে নভেম্বরের লড়াই ফ্যাসিস্ট বিজেপির হাড়ে কাঁপন ধরানোর লড়াই। পাশাপাশি এই রাজ্যে শাসক দলের শেষ মুখোশটা উন্মোচনের লড়াই। দালালের রাজনীতিকে পরাস্ত করে লাল রাজনীতির নতুন দিগন্তের সূচনার লড়াই।